Rabi Ghosh Birth Anniversary: বডিবিল্ডার হওয়ার স্বপ্ন ভুলে জনপ্রিয় ‘কমেডিয়ান’, ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে রবি ঘোষ

।। প্রথম কলকাতা ।।

Rabi Ghosh Birth Anniversary: যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ আছে, ততদিন সত্যজিৎ রায়ের ‘বাঘা’ আছে। আজও ধনঞ্জয়ের মত রাঁধুনি চায় প্রত্যেকটা বাঙালি। তবে পর্দায় তাঁর যে রূপ দেখা গিয়েছে, বাস্তব জীবনে পুরো উল্টো ছিলেন তিনি। কাজ ছাড়া সময় পেলে রামকৃষ্ণ কথামৃত পড়তেন। নেশা ছিল প্রবন্ধ-নাটক পড়ার। পর্দার সেই কৌতুক কিংবদন্তি অভিনেতা রবি ঘোষের আজ জন্মদিন।

১৯৩১-এর আজকের দিনে কোচবিহারে মামাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেতা। পুরো নাম রবীন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার। পরবর্তীতে রবি ঘোষ নামে পরিচিতি পান। ১৯৪৯-এ সাউথ সাবার্বান মেইন স্কুল থেকে মেট্রিক পাশ করেন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ইন্টারপাশ করে আশুতোষ কলেজে গ্রাজুয়েশনের জন্য ভর্তি হন। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। এরপর ১৯৫৩-১৯৫৯ পর্যন্ত ব্যাঙ্কশাল কোর্টে কাজ করেন। প্রথমে বিয়ে করেন অভিনেত্রী অনুভা গুপ্তকে। তাঁর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি। ১০ বছর পর ফের বিয়ে করেন বৈশাখী দেবীকে।

শোনা যায়, বডিবিল্ডার হতে চেয়েছিলেন তিনি। পরচর্চা-পরনিন্দা করে সময় কাটাতেন না। খেতে পছন্দ করলেও, খুবই মেপে আহার করতেন। প্রিয় খাবার ছিল লুচিও পাঁঠার মাংস। লোককে খাওয়াতে পছন্দ করতেন। তাঁর বাবা জিতেন্দ্রনাথ ঘোষ দস্তিদার ছিলেন পূর্ব বাংলার বরিশালের গাভার বাসিন্দা। চাকরি-সূত্রে কলকাতার মহিম হালদার স্ট্রিটে থাকতেন। তাঁর বাবা একেবারেই অভিনয় পছন্দ করতেন না। কিন্তু কথা শোনেন নি অভিনেতা। মা অবশ্যই এই বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন ছেলেকে।

এই করে একজন ‘সংবাদপত্র বিক্রেতা’র চরিত্র দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন তিনি। তাঁর মাত্র ওই ৩০ সেকেন্ডের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন মৃণাল সেন। এরপর অভিনেতা সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরামর্শ মেনে উৎপল দত্তের নাটকের দলের সঙ্গে যুক্ত হন রবি ঘোষ। ১৯৫৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর উৎপল দত্তের পরিচালনায় মিনার্ভা থিয়েটারে এলটিজির নিবেদনে ‘অঙ্গার’ নাটকের প্রথম শো ছিল। এই শোয়ের পাঁচদিন আগে বাবাকে হারিয়েছিলেন অভিনেতা। চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় থেকে শুরু করে তরুণ মজুমদার, সন্দীপ রায়, গৌতম ঘোষ, মৃণাল সেন, অঞ্জন চৌধুরী, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়ের মতো পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন তিনি।

সেই সময় নায়ক-নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর নামও নেওয়া হতো। সাধারণত সিনেমায় লিড চরিত্রদের ছাড়া বাকিদের দিকে নজর যায় না দর্শকদের। তবে কিছু কিছু এমন অভিনেতা রয়েছেন, যাঁরা নিজেদের অভিনয় দিয়ে দর্শকদের আকৃষ্ট করেছেন। তাঁর মধ্যে একজন হলেন রবি ঘোষ। তাঁর হাত ধরে পাল্টে গিয়েছিল বাংলা কমেডির স্টাইল। তবে তিনি কমেডির সঙ্গে সিরিয়াস চরিত্রেও নিজের অভিনয় দক্ষতা দেখিয়েছেন। এককথায় বলতে গেলে, সব চরিত্রই অবলীলায় দর্শকদের সামনে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারতেন এই অভিনেতা। তাঁর ভক্ত ছিলেন স্বয়ং অমিতাভ বচ্চন।

অভিনয় তাঁর রক্তে ছিল। তবে নেশা ছিল শরীরচর্চা। বডিবিল্ডারই হতেন, কিন্তু অবশেষে তা হননি এটা সকলের সৌভাগ্য। দর্শকদের ‘গল্প হলেও সত্যি’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’, ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আরণ্যের দিনরাত্রি’র মতো কিছু ছবি উপহার দিয়েছেন। তাঁর অভিনয় অতি সহজেই দর্শকদের মন কেড়েছে। হাস্যরসের মাধ্যমে বাস্তবিক ঘটনাগুলিকে তুলে ধরতেন দর্শকদের সামনে। মঞ্চাভিনেতা থাকাকালীন নিজের একটি নাটকের দল ‘চলাচল’ গড়ে তোলেন। ১৯৯৭-এর ৪ ফেব্রুয়ারি জীবনাবসান হয় এই কিংবদন্তি অভিনেতার। তবে তাঁর মৃত্যুর এত বছর পরেও, মানুষ তাঁর গুণের কদর করেন।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version