শৈশবে মা হারা, পরীক্ষা দিয়ে ফিরে বাবার সৎকার, নিম ফুলের মধুর পর্ণার বাস্তব জীবনের লড়াই বড় কঠিন

।। প্রথম কলকাতা ।।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী মানেই যেন বিলাশ বহুল জীবন। দামি গাড়ি, বাড়ি। রাতভর পার্টি, হই হুল্লোড়। সব মিলিয়ে জীবনটা যেন শুধুই আনন্দের। এমনটাই আমরা কল্পনা করে থাকি, তাই না? এই যে সিরিয়ালের পর্দায় এতোটা উচ্ছ্বল, হাসিখুশি দেখা যায়, তাঁদের বাস্তব জীবনটাও কি তেমনই? অনেকের ক্ষেত্রেই কিন্তু তা নয়। বরং এক এক জনের কাছে লড়াইটা যে কত কঠিন তা ভাবতেও পারবেন না। অভিনেত্রী পল্লবী শর্মার আজকের সাফল্যের পেছনে কতটা সংগ্রাম লুকিয়ে রয়েছে জানেন? জানেন, কিভাবে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন তিনি? যাঁরা জীবনের লড়াই চালিয়ে যেতে যেতে হতাশ হয়ে পড়ছেন, তাঁদের কাছে প্রেরণার আর এক নাম হয়ে উঠতেই পারেন পল্লবী শর্মা।

বাংলা টেলিভিশন জগতের অভিনেত্রীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী হলেন পল্লবী শর্মা। স্টার জলসার কে আপন কে পর’ধারাবাহিকে জবা চরিত্রে অভিনয় করে সব থেকে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। বর্তমানে ‘নিম ফুলের মধু’ ধারাবাহিকে পর্নার চরিত্রে অভিনয় করছেন তিনি। টিভির পর্দায় যতই হাসি খুশি দেখা যাক না কেন, তাঁর জীবন কাহিনী শুনলে আপনার চোখে জল চলে আসবে। ১৯৯৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন পল্লবী। একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় ইটিভি বাংলার ‘দুই পৃথিবী’ নামক ধারাবাহিকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন তিনি। এছাড়াও সানন্দা টিভিতে ‘নদের নিমাই’ ধারাবাহিকে লক্ষ্মীপ্রিয়া চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গেছে পল্লবীকে। ইন্ডাস্ট্রিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পেছনে তার রয়েছে বহু লড়াই।

ছোটবেলায় হারিয়েছেন বাবা মাকে। বয়ে বেরিয়েছেন একাকীত্বের যন্তনা। তবুও তাঁকে দমিয়ে রাখা যায়নি। সব ভুলে ভালোবেসেছেন নিজের কাজকে। তাতেই পেয়েছেন প্রতিষ্ঠা। ক্লাস থ্রিতে পড়াকালীন পল্লবী হঠাৎ করে জানতে পারেন, তার মায়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে। প্রতিবেশিনীর কাছে পল্লবীকে রেখে পল্লবীর বাবা এবং দাদা মাকে নিয়ে চলে যান চেন্নাই। ওই শেষ দেখা। চেন্নাই-এর পর মুম্বাই এবং দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয় কিন্তু মাকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। ওই প্রতিবেশিনী অর্থাৎ পাতানো পিসির কাছেই সযত্নে বড় হচ্ছিলেন তিনি। পল্লবীর সেই পিসি ছিলেন অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। সেই পিসির হাত ধরেই ‘নদের নিমাই’ ধারাবাহিকে পদার্পণ করেন তিনি।

‘নদের নিমাই’ ধারাবাহিকের পর আইসিএসসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন পল্লবী। বাবা এবং দাদা দুজনেই কাজের সূত্র বাইরে থাকতেন। কলকাতায় ফিরলে পল্লবীর সঙ্গে দেখা করতেন তারা। ক্লাস টেনে পড়াকালীন হঠাৎ পল্লবীর দাদা জানায়, বাবা নাকি হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। দৌড়ে বাবার কাছে ছুটে যান পল্লবী। খাটে শুয়ে অসুস্থ বাবা মাথা নেড়ে আশ্বস্ত দেন, তিনি ঠিক আছেন। কিন্তু তার পরের দিনই শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা করা যায়নি। বাবার মৃত দেহকে হাসপাতালে রেখেই পল্লবী পরীক্ষা দিতে যান। ফিরে এসে করেন বাবার সৎকার।

আইসিএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাবা মারা যান। পরীক্ষার বাকি দিনগুলিতে হবিষ্যি করে পরীক্ষা দিতে যেতে হয়েছিল পল্লবীকে। কোনরকমে পরীক্ষার দিনগুলি পার করেছিলেন তিনি। বাবা মারা যাবার পর থেকেই বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া হয় পল্লবীর ওপর। ‘দুই পৃথিবী’-তে অভিনয় করার জন্য একাদশ শ্রেণীতে অ্যাডমিশন নিতে পারেননি তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি করতে হয়েছে পার্টটাইম কাজ। অভিনয় করে নিজের  টাকায় কিনেছেন ফ্ল্যাট। তবে আজও পল্লবী ভীষণ একা। কারণ যে পিসি তাকে মানুষ করেছেন সেই পিসিও মারা গেছেন।দাদা নিজের জীবন নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। আপাতত একাই জীবন কাটাতে হচ্ছে তাকে।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version