Israel and America Relationship:  ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ফাটল, গাজায় নামছে অন্ধকার! হামাসের মারাত্মক স্টেপ 

।। প্রথম কলকাতা।।

Israel and America Relationship: ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্বে নরম সুর। ইসরায়েল আর হামাস যুদ্ধের মাঝে যেন ফেঁসে গেলেন জো বাইডেন। রাফায় হামলা চালাতে বদ্ধপরিকর ইসরায়েল, আর তা শুরুও করে দিয়েছে। যেখানে প্রথম থেকে ইসরায়েলের পাশে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, এখন সেই যুক্তরাষ্ট্র বেঁকে দাঁড়াচ্ছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, ইসরায়েলকে মার্কিন অস্ত্রের চালান বন্ধের হুমকি দিলেন বাইডেন। ঘরে আর বাইরের চাপ সামলাতেই কি বাইডেনের এমন পাল্টি? নাকি সত্যি সত্যিই তিনি গাজায় হত্যালীলা থামাতে চান? গাজার অবস্থা তো ভীষণ শোচনীয়, হাসপাতালগুলোতে বিদ্যুৎ আছে আর মাত্র তিন দিনের, তারপর কী হবে? হামাসও ইসরায়েলের শর্ত মানতে নারাজ। কোন দিকে এগোচ্ছে গাজাবাসীর ভবিষ্যত?

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথায়, ইসরায়েল যদি ফিলিস্তিনের গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর অর্থাৎ রাফায় বড়সড় অভিযান চালায়, তাহলে কিন্তু ওয়াশিংটন ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করবে। অথচ এই যুক্তরাষ্ট্র কয়েকদিন আগেই ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের জন্য মোটা টাকা বরাদ্দ করেছিল। সে নিয়ে তখন কম আলোচনা জল্পনা হয়নি। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তেই এবার টলে যেতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। যখন ইসরায়েল আর হামাসের যুদ্ধ বেঁধে ছিল, তখন যুক্তরাষ্ট্র গোটা বিশ্বের সামনে এসে বুক ফুলিয়ে বলেছিল, তারা ইসরায়েলের পাশে আছে। আজ সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান বাইডেন সংবাদমাধ্যমে এসে হুঁশিয়ারি দিল ইসরায়েলকে। কেমন যেন গুলিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির সমস্ত অঙ্ক। যে যার পিঠ বাঁচাতে মুহূর্তে বদলে ফেলছে নিজেদের সিদ্ধান্ত গুলো। দেখতে দেখতে প্রায় সাত মাস হয়ে গেল গাজা যুদ্ধ। গত ৭ ই অক্টোবর থেকে ইজরায়েল বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষ। এমত জায়গায় দাঁড়িয়ে, বাইডেন কিন্তু প্রায় স্বীকার করেই নিয়েছেন, গাজায় বেসামরিক মানুষ হত্যায় ইসরায়েল মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করছে। আর খটকাটা তো এখানেই। তাহলে কি গোটা বিশ্ব জানতে পেরে যাচ্ছে, মার্কিন অস্ত্রে চলছে গাজা হামলা, অর্থাৎ ঘুর পথে ইসরায়েলের পাশাপাশি চরম ক্ষোভের মুখে পড়তে পারে যুক্তরাষ্ট্র।।আর সেই ভয়েই কি হঠাৎ করে, বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্ত বদলে ফেললেন? যে ইসরায়েলকে এতদিন বন্ধু বলতেন, যে ইসরায়েলের পাশে থাকার বারংবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আজ সেই ইসরায়েলকে সতর্ক করছেন, হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। গাজায় বেসামরিক মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়ে বাইডেন দুঃখ প্রকাশও করেছেন। শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্র মনে প্রাণে চাইছে যাতে হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি চূড়ান্তভাবে কার্যকর হয়। কিন্তু আলোচনা থেকে যাচ্ছে আলোচনার পর্যায়ে। আর ওদিকে মার খাচ্ছে রাফা বাসী। মিশরের সীমান্তে থাকা এই শহরে বিপুলসংখ্যক ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক আশ্রয় নিয়েছেন। ইসরায়েলের ধারণা, এখানেই লুকিয়ে আছে হামাসের বেশ কয়েকটা ব্যাটেলিয়ন। তাই ইসরায়েল এখানে পুরো কদমে সামরিক অভিযান চালাতে প্রস্তুত। এই বড়সড় মানবিক বিপর্যয় আটকাতে যুক্তরাষ্ট্র গত সপ্তাহে ইসরায়েলে একটা মার্কিন বোমার বড় চালান স্থগিত করে। এরপর বাইডেন এখন সরাসরি হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন নেতানিয়াহুকে। স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, যদি ইসরাইয়েল রাফা অভিযানে যায়, তাহলে তিনি দেশটিতে কোনরকম অস্ত্র সরবরাহ করবেন না। নেতানিয়াহু কিন্তু বারংবার তার কথার মাধ্যমে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন,রাফা অভিযানে তিনি থেমে থাকবেন না। তাই এই পরিস্থিতিতে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন জো বাইডেন। এমনটাই দাবি মার্কিন কর্মকর্তাদের। তবে হ্যাঁ, বাইডেন কিন্তু আর একটা কথা রিপিট করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই ইসরায়েলের নিরাপত্তার বিষয়টি থেকে সরে যাবে না।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলে যুক্তরাষ্ট্র যে বোমার চালানটি স্থগিত করেছে ওটা মূলত জাহাজ মারফত পাঠানোর কথা ছিল। ছিল প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ ২ হাজার পাউন্ড আর ১৭ লক্ষ ৫০ পাউন্ড ওজনের বোমা। আসলে যুক্তরাষ্ট্র বেশ রেগে রয়েছে ইসরায়েলের উপর। কারণ ইসরায়েলকে বহুবার যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, রাফায় হামলা আর ক্ষেত্রে বেসামরিক লোকজনের কথা মানবিক দিক থেকে ভাবতে। কিন্তু ইসরায়েল সেই ব্যবস্থা নেয়নি। শুধু তাই নয়, সে সম্পর্কে কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি তেল আবিবের। তাই ধরে নেয়াই যায়, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে এই মুহূর্তে পাত্তা দিচ্ছে না। ডোন্ট কেয়ার ভাব করে এড়িয়ে যেতে চাইছে বাইডেনকে। মার্কিন কর্মকর্তারা মনে করছেন, রাফায় যুক্তরাষ্ট্রের বার্তাকে পুরোপুরি বিবেচনায় নিচ্ছে না ইসরায়েল। তাই যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের প্রস্তাবিত অস্ত্রের চালান পাঠানোর ক্ষেত্রে বিষয়টা পুনর্বিবেচনা করে, তারপর সেটা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় । পাশাপাশি হোয়াইট হাউসের প্রশাসন কর্মকর্তাদের যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান, রাখায় ইসরায়েলের বড়সড় স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে। কারণ সেখানে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লক্ষের বেশি ফিলিস্তিনি। যাদের অন্যত্র যাওয়ার জায়গা নেই। আপাতত রাফায় ওই বেসামরিক মানুষদের মানবিক চাহিদা ইসরায়েল কিভাবে মেটাবে এবং কিভাবে শুধুমাত্র হামাসের বিরুদ্ধে আলাদা অভিযান পরিচালনা করবে, সেই নিয়ে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। কিন্তু সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ সম্পূর্ণভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রের ভয়, যদি ওই বোমাগুলো ইসরায়েল পেয়ে যেত আর তা যদি রাফায় ব্যবহার হত, বুঝতে পারছেন? আন্তর্জাতিক অংকটাই পুরো বদলে যেত। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের ক্ষোভ গিয়ে পড়ত ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের উপর।

ওদিকে কিন্তু আন্তর্জাতিক উদ্বেগ সহ যুদ্ধ বিরতি আলোচনা অব্যাহত থাকলেও, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় দফায় দফায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এখনো বন্ধ রয়েছে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাফা ক্রসিং। যুদ্ধ বিরতি আলোচনায় অংশ নিতে মিশরের রাজধানী কায়রোতে রয়েছে ইসরায়েল এবং হামাসের প্রতিনিধি দল। কিন্তু দুই দল আলোচনা করে সমঝোতায় আসতে পারেনি বলেই শোনা যাচ্ছে। একপক্ষ অপরপক্ষের সম্পূর্ণ দাবি মানতে পারছে না। আর ওদিকে হামলা থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে রাফা ছাড়ছেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনা। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ৪৮ ঘণ্টায় রাফা ছেড়েছেন ৫০ হাজার বাসিন্দা। যাদের মধ্যে অনেকেই দেইর আল-বালাহ এলাকায় তাবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। গাজার অবস্থা ভীষণ শোচনীয়। যেহেতু অবরুদ্ধ গাজার দক্ষিণের হাসপাতাল গুলোতে আপাতত মাত্র ৩ দিনের জ্বালানি আছে। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সতর্কবার্তা দিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইসাস। সীমান্ত বন্ধ থাকায় গাজায় জাতিসংঘের তরফ থেকে পাঠানো কোন ত্রাণ কিংবা জ্বালানিও ঢুকতে পারছে না। আর পর্যাপ্ত জ্বালানির অভাবে বন্ধ হতে বসেছে মানবিক সব সেবা। ৩ দিন চলার মত হাসপাতালগুলোতে জ্বালানি আছে, তাও খুব দ্রুত শেষ হতে যায়। আসলে গাজায় যে পথ দিয়ে ত্রাণ প্রবেশ করবে সেই রাস্তাটাই কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েল প্রশাসন।

দেখুন, এই গাজা হামলাকে কেন্দ্র করেই কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ছায়া যুদ্ধ চলছে ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। বারংবার একে অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার করলেও, ফল হচ্ছে উল্টো। একে অপরের উপর যে বিরক্ত, তা প্রকাশ পাচ্ছে দুই দেশের কাজে। কয়েক মাস আগে যখন জাতিসংঘে গাজার যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাব পাস হয়েছিল, তখন তীব্র বিরোধিতা করে ইসরায়েল। আর ওই প্রস্তাব পাসের পরেই ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের সফর বাতিল করেছিল তেল আবিব। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের ধারণা, ধীরে ধীরে নেতানিয়াহু আর বাইডেনের সম্পর্কের টানাপোড়েন গিয়ে ঠেকছে তলানিতে। এবার শুধু প্রকাশ্যে বেরিয়ে আসার অপেক্ষা। আশঙ্কা, এভাবেই ভেঙে যেতে পারে বাইডেন প্রশাসন আর নেতানিয়াহুর মধ্যে গড়ে ওঠা বিশ্বাসের দেওয়াল। যদি এই সংকট সাবধানতার সঙ্গে সমাধান না করা হয়, তবে কিন্তু পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে এগোতে পারে। কারণ ইসরায়েলকে রক্ষা করার যে দীর্ঘ মার্কিন নীতি মেনে চলার কথা বলেছিলেন বাইডেন, সেখান থেকে তাহলে সরে আসছে না তো? যুক্তরাষ্ট্র পড়েছে ভালো রকম সাঁড়াশি চাপে। গাজায় শুরু হওয়া তান্ডব থামানোর জন্য শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্র রাষ্ট্র গুলো নয়, বরং নিজের দল ডেমোক্র্যাটদেরও ক্রমবর্ধমান চাপের মুখে পড়ছে। ওদিকে গাজায় যুদ্ধ এখনই থামবে বলে তো মনেই হচ্ছে না। কারণ ইসরায়েলকে আর কোনো রকম ছাড় না দেওয়ার কথা জানিয়ে দিয়েছে হামাস। স্পষ্ট বলেছে, হামাসের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা যুদ্ধ বিরতি প্রস্তাবের বাইরে কোন শর্ত তারা মেনে নেবে না। অর্থাৎ এই মুহূর্তে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যে সমঝোতা হওয়াটা খুব মুশকিল।

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version