Sandhya Mukhopadhyay: প্রথম গান রেকর্ড ১৪ বছরে, প্রয়াণ দিবসে স্মৃতির পাতায় ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়

।। প্রথম কলকাতা।।

Sandhya Mukhopadhyay : বাংলা গানের স্বর্ণযুগের অন্যতম সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে এক কিংবদন্তি হলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় (Sandhya Mukhopadhyay) । তাঁর কন্ঠে ছিল জাদু। আর সেই জাদুতে তিনি কয়েক প্রজন্মের কাছে হয়ে উঠেছিলেন অসামান্য একজন সঙ্গীত শিল্পী। এখনও পর্যন্ত তাঁর গাওয়া গানগুলি সঙ্গীত প্রেমীদের মনে প্রশান্তি এনে দেয়। ২০২২ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তিনি বার্ধক্য জনিত কারণে দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থতায় ভুগছিলেন । করোন কালীন সময়ে কোভিড আক্রান্ত হন তিনি । যদিও কোভিডের সঙ্গে লড়াই করে ফিরে এসেছিলেন কিন্তু কোমরের ভাঙ্গা হাড়ের অস্ত্রপাচার করার পর শরীর আরও ভেঙে পড়ে। ২০২২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হন তিনি।

বাংলার প্রবাদপ্রতিম সঙ্গীত শিল্পী (Singer) ‘গীতশ্রী’ সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুকালীন বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। তিনি তাঁর জীবনের ৫০ বছরেরও বেশি সময় বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন ছবিতে প্লেব্যাক করেছেন । এছাড়াও বাংলা আধুনিক গান এবং ধ্রুপদী সঙ্গীতেও তাঁর পারদর্শিতা ছিল। তিনি ছিলেন ওস্তাদ বড়ে গোলাম আলি খাঁর শিষ্যা। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের জন্ম দক্ষিণ কলকাতার ঢাকুরিয়ায় ১৯৩১ সালের ৪ অক্টোবরে। দাদা রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই সঙ্গীত চর্চা শুরু। সালটা তখন ১৯৪৫, বয়স মাত্র ১৪ বছর । সেই সময় রেকর্ড করে ফেলেন নিজের প্রথম গান ( First Song) ।

তাঁর রেকর্ড করা প্রথম গানে কথা এবং সুর দিয়েছিলেন গিরীন চক্রবর্তী ( Girin Chakraborty) । ‘তুমি ফিরায়ে দিয়াছ’ ও ‘তোমার আকাশে ঝিলমিল করে’ এই দুটি গান কলম্বিয়া থেকে তিনি প্রথম রেকর্ড করেন। ১৯৪৮ সালের ‘অঞ্জনগড়’ নামক একটি ছবিতে রায়চাঁদ বড়ালের সঙ্গীত পরিচালনায় প্লেব্যাক করেন সন্ধ্যা । তারপর থেকে সঙ্গীত জগতে ধীরে ধীরে নিজের স্থান পাকা করে নিয়েছিলেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। ১৯৫০ সালে মুম্বাইয়ে আসেন সেখানে। শচীন দেব বর্মনের হাত ধরেই তাঁর সঙ্গীত জগতে পথচলা শুরু হয়। প্রায় ১৭ টি হিন্দি ছবিতে প্লে ব্যাক করেন তিনি । মুম্বাইয়েই তাঁর দেখা হয় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে।

দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল গান গাইতে গাইতেই। লতার সঙ্গে ডুয়েট গিয়েছিলেন সন্ধ্যা ‘তু বল পাপিহে বোল ‘। গানে এছাড়াও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, নচিকেতা ঘোষ, শচীন দেব বর্মন, সলিল চৌধুরী, রায়চাঁদ বড়াল প্রমুখ সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। তাঁর গাওয়া ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’, ‘এই মধু রাতে ‘, ‘শুধু গানের দিন’ এই ধরনের গানগুলি এখনও পর্যন্ত বাঙালির কাছে একটা রোমান্টিক আবহ তৈরি করার জন্য যথেষ্ট। তিনি জাতীয় পুরস্কার সহ ভারত নির্মাণ পুরস্কারও পেয়েছিলেন। ২০১১ সালে সম্মান পান বঙ্গবিভূষণ । কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে ২০২২ সালে তাকে ‘পদ্মশ্রী’ দিতে চাওয়া হয়েছিল কিন্তু সেই সম্মান তিনি প্রত্যাখ্যান করেন খানিকটা অভিমানের কারণেই । সাফল্যের শিখরে পৌঁছানোর পরেও কীভাবে স্নিগ্ধ এবং নম্র থাকা যায় তার একটা বড় উদাহরণ ছিলেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। আজও সঙ্গীত মহলে তিনি শ্রদ্ধেয়।

Exit mobile version