Pelé: এক অনন্য রুপকথার অবসান ! শেষ হল এক কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের আকাশ ছোঁয়ার কাহিনী

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

স্টেডিয়ামে বসে কাতার বিশ্বকাপে নেইমারদের খেলা দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন পেলে। কিন্তু তাঁর মোনবাসনা পূর্ন হয়নি। কারণটা সেই মারণ রোগ ক্যান্সার। যার সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছেন। গত নভেম্বরে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। ফুটবল তারকা থেকে ফুটবলের বিশ্বের অগণিত ভক্তকুল প্রার্থনা করতে থাকেন যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন ফুটবল সম্রাট। আস্তে আস্তে সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারলেন না। শেষ হয়ে গেল একটি সাম্রাজ্যের। যে সাম্রাজ্যের সম্রাট, জাদুকর, রাজা ছিলেন তিনি।

 

১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ব্রাজিলের মিনাস গ্রেইয়াসের একটি দরিদ্র পরিবারে জন্ম পেলের। বাবার দেওয়া নাম ছিল এডসন আরান্তেস ডি নাসিমেন্তো। তবে এই নামে বিশ্ব ফুটবল তাঁকে চেনেনি। চিনেছে পেলে নামে। বাবা ছিলেন একজন অ-পেশাদার ফুটবলার। বাবার কাছেই ফুটবলের হাতেখড়ি। একটা সময় দারিদ্র্যতা এতটাই চরম পর্যায়ে পৌঁছায় যে সেই সময় একটা বল কেনার সামর্থ্য ছিল না পেলের। কাপড় ও কাগজ দিয়ে বল বানিয়ে চলত ফুটবলের চর্চা। পরিবারের প্রয়োজনে কাজ করেছেন চায়ের দোকানেও।

 

মাত্র ১৫ বছর বয়সে ব্রাজিলের ক্লাব স্যান্টোসে যোগ দেন পেলে। আর সেখান থেকেই রূপকথার গল্পের শুরু। ১৯৫৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রাজিলের জার্সিতে বিশ্বকাপে অভিষেক পেলের। অভিষেক বিশ্বকাপেই বিশ্বজয় করে জায়গা করে নিলেন ইতিহাসের পাতায়। সেইবার সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করেন পেলে। আয়োজক সুইডেনের বিরুদ্ধে ফাইনালে জোড়া গোল করে বিশ্বজয়ের স্বাদ দিয়েছিলেন দেশবাসীকে। আবির্ভাবেই নিজের জাত চিনিয়ে ছিলেন তিনি। বিশ্বফুটবলকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি লম্বা রেসের ঘোড়া। চারবছর পর ১৯৬২ সালে ফের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ব্রাজিল। যার নেপথ্য নায়ক ছিলেন পেলে। তাঁর ফুটবল শৈলী মুগ্ধ করেছিল বিশ্বফুটবলকে।

 

এরপর ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে চোটের জন্য খেলতে পারেননি ফুটবল সম্রাট। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের কড়া ট্যাকলে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যান তিনি। চার বছর পর অপ্রতিরোধ্য হয়ে ফিরে আসেন মেক্সিকো বিশ্বকাপে। ১৯৭০ বিশ্বকাপে পেলের জাদু দেখেছিল বিশ্ব ফুটবল। নিজের গরিমায় রচনা করেছিলেন ইতিহাস। বিশ্বের একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিন তিনবার বিশ্বকাপ জয় করেছিলেন। যে রেকর্ড আজও অক্ষুণ্ন রয়েছে।

 

ইউরোপের অনেক নামিদামি ক্লাবের অফার থাকলেও ব্রাজিল সরকার তাকে ন্যাশনাল ট্রেজার ঘোষণা করে। দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি খেলেছেন ব্রাজিলের ক্লাব স্যান্টোসে। দুটি কোপা লিবার্তেডোরেস জিতিয়েছেন ক্লাবকে। খেলোয়াড় জীবনের শেষ দুই বছর কাটিয়েছিলেন নিউইয়র্ক কসমস ক্লাবে। ব্রাজিলের জার্সিতে ৯২ ম্যাচে ৭৭টি গোল করেছেন ফুটবল সম্রাট। ক্লাব ও দেশের হয়ে ১ হাজার ৩৬৩টি ম্যাচে ১ হাজার ২৮৩টি গোল। সব মহাদেশের ফুটবলভক্তরা বুঁদ হতেন পেলের পায়ের জাদুতে। ফুটবলভক্তরা তাঁকে ডাকেন ‘ব্ল্যাক পার্ল’ নামে। ২০০০ সালে ফিফার বিচারে শতাব্দীর সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছেন পেলে।

 

ফুটবলপাগল শহর কলকাতা একবার নয় দু-দুবার ভালোবাসায় মুড়ে দিয়েছিল ফুটবল সম্রাটকে। ১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেন্স দেখেছে পেলের পায়ের জাদু। কসমস ক্লাবের হয়ে মোহনবাগানের সঙ্গে তিনি একটি প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেছিলেন।তখন কেরিয়ারের একদম গোধূলি লগ্নে ছিলেন পেলে। যদিও বৃষ্টি ভেজা ম্যাচে মাত্র ৩০ মিনিট খেলেছিলেন ফুটবলের সম্রাট। সেই ম্যাচে ২-২ গোলে কসমসের সঙ্গে ড্র করে মোহনবাগান। মাঠ থেকে শুরু করে হোটেল, পেলেকে দেখার জন্য জনসুনামি নেমেছিল তিলোত্তমায়। ২০১৫ সালে ফের একবার কলকাতায় এসেছিলেন পেলে। ফুটবল সম্রাটের মৃত্যুতে পতন হল একটি সাম্রাজ্যের। ফুটবল হল সম্রাটহীন।

Exit mobile version