Argentina: ৩৬ বছর পর বিশ্বজয়ের স্বপ্নে বিভোর আর্জেন্টিনা, মেসি-মারাদোনার দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য মহিত করবে আপনাকেও

।। প্রথম কলকাতা ।।

 

জলপ্রপাত, হিমবাহ, তুষারাবৃত পর্বত ও অপূর্ব সুন্দর সমুদ্র সৈকত কি নেই দেশটিতে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য যেন দুই হাত ভরে ঢেলে দিয়েছে দেশটিতে। কিংবদন্তি বিপ্লবী চে গুয়েভারার জন্মস্থান। মেসি-মারাদোনার দেশ আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা দেশটিতে রয়েছে ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এক ইতিহাস। আয়তনের দিক থেকে ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। দেশটির বর্তমান জনসংখ্যা ৪ কোটি ৫৮ লক্ষ।

 

আর্জেন্টিনার পশ্চিমে রয়েছে আন্দিজ পর্বতমালা। উত্তরে বলিভিয়া ও প্যারাগুয়ে। দেশটির উত্তর পূর্বে ব্রাজিল, পূর্ব দিকে আটলান্টিক মহাসাগর ও দক্ষিণে ডেক প্রণালী। আকোনগুয়া আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ পর্বত। প্রধান নদীগুলির মধ্যে অন্যতম কলোরাডো, পারানা, রিও নেগ্রো নদী। আর্জেন্টিনার জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতিও বৈচিত্র্যময়। উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি। আর্জেন্টিনা দেশটি দীর্ঘদিন স্প্যানিশ শাসনের অধীনে ছিল। স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হয়ে আধুনিক আর্জেন্টিনার জন্ম।

 

স্বাধীন আর্জেন্টিনা ফিরে পেতে ১৮১০ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে স্পেনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা আর্জেন্টিনার জনগণ। ১৮১৬ খ্রিস্টাব্দের ৯ জুলাই স্বাধীন আর্জেন্টিনার পতাকা ওড়ায় সে দেশের জনগণ। ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে আর্জেন্টিনার সংবিধান রচনা করা হয়। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে স্বাধীনতা স্বীকৃত হয়। ২৬৬ তম পোপ ফ্রান্সিস আর্জেন্টিনার প্রথম রোমান ক্যাথলিক। তিনিই ইউরোপের বাইরে প্রথম কোন দেশ থেকে নির্বাচিত পোপ। আর্জেন্টিনার প্রথম মুসলিম প্রেসিডেন্ট কার্লোস সাউল মেনেম। এর আগে তিনি মুসলিম ধর্ম ত্যাগ করে ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহণ করেন। আর্জেন্টিনার মুদ্রার নাম পেসো। একজন ব্যক্তি দোষী না নির্দোষ তা নির্ণয়ের জন্য আঙ্গুল ছাপ পদ্ধতি প্রথম ব্যবহার করা হয় এই আর্জেন্টিনাতেই। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ইতিহাসের কারণে ক্ষণে ক্ষণে পালা বদলে একসময়ের ধনী দেশটির অর্থনীতি সংকটে পড়ে। বর্তমানে অর্থনীতিকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেদেশের প্রশাসন।

 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কারণে ভ্রমণপিপাসুদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় এই দেশটি। পর্যটকদের সবচেয়ে পছন্দের আর্জেন্টিনার ইগুয়াজু জলপ্রপাত। এই জলপ্রপাত ভ্রমণপিপাসুদের মনকে অভিভূত করে। যা দেখতে প্রায় ১০ লক্ষ পর্যটক আর্জেন্টিনায় যায়। শুধু রুপে নয় গুনেও বিশ্বকে মুগ্ধ করে ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি। দেশের শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ শিক্ষিত। আর্জেন্টিনায় নেই কোন রাষ্ট্রীয় ধর্ম। দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম ইহুদি ও বৃহত্তম মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে দেশটিতে। আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আয়ার্স প্রাচীন স্থাপত্যে শিল্পে গড়া একটি অনন্য শহর। আর্জেন্টিনার ঐতিহ্যবহন করে চলেছে অন্যতম নাচ টাঙ্গ। নারী-পুরুষের যুগলবন্দীতে এই নাচ পরস্পরের প্রতি প্রেমকে প্রকাশ করে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে এই নাচ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

 

আর্জেন্টিনা আর ফুটবল যেন সমার্থক। রাজধানী বুয়েনস আয়ার্সের খুব কাছেই অবস্থিত লান্স শহরে জন্ম ফুটবলের রাজপুত্র মারাদোনার। আর আর্জেন্টিনার মধ্যবর্তী শহর রোজারিওতে জন্ম বর্তমান প্রজন্মের ফুটবল জাদুকর লিওনেল মেসির। আর্জেন্টিনার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এই দুই শহর যেন তীর্থক্ষেত্র। কিংবদন্তি বিপ্লবী চে গুয়েভারার জন্ম শহরও এই রোজারিও। ১৯৮৬ সালে মারাদোনা বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছিল দেশবাসীকে। আর এবার লিওনেল মেসির হাত ধরে ৩৬ বছর পর আবারও বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছে আর্জেন্টিনা।

Exit mobile version