।। প্রথম কলকাতা ।।
জমকালো উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বোধন হয়ে গেল কাতার বিশ্বকাপের। মরুদেশে মঞ্চ মাতালেন জনপ্রিয় কোরিয়ান ব্যান্ড বিটিএস-এর গায়ক জাং কুক। তার সঙ্গে সুর মেলালেন কাতারের গায়ক ফাহাদ আল-কোবাইসি। বিশ্বকে ঐক্যের বার্তা দিতে সঞ্চালনার ভূমিকায় ছিলেন হলিউড অভিনেতা মর্গ্যান ফ্রিম্যান। সবকিছু মিলিয়ে আলোর রোশনাই মেতে উঠল কাতারের আল বাইত স্টেডিয়াম। বল গড়ালো বিশ্বকাপ ফুটবলের। উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আয়োজক কাতার ও ইকুয়েডর।
ফিফা বিশ্বকাপের ২২ তম সংস্করণে উদ্বোধনী ম্যাচে ২-০ গোলে কাতারকে উড়িয়ে দিল ইকুয়েডর। সেই সঙ্গে একটি লজ্জার রেকর্ডও গড়ল কাতার। এই প্রথম বিশ্বকাপের কোন আয়োজক দেশ উদ্বোধনী ম্যাচে পরাজিত হল। ল্যাটিন আমেরিকার দেশটির হয়ে জোড়া গোল করে ম্যাচের নায়ক এনার ভ্যালেন্সিয়া। মোট পাঁচটি গোল করে হয়ে গেলেন বিশ্বকাপের মঞ্চে ইকুয়েডরের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার। সর্বশেষ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে খেলেছিল ল্যাটিন আমেরিকার এই দেশটি। সেইবারও ইকুয়েডরের সবকটি গোল করেছিলেন ৩৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।
এনার ভ্যালেন্সিয়ার এই সাফল্যের রাস্তাটা মোটেও সহজ ছিল না। ইকুয়েডরের উত্তরাঞ্চলের একটি ছোট্ট শহরে জন্ম ভ্যালেন্সিয়ার। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা ভ্যালেন্সিয়াকে বাজারে গিয়ে দুধ বিক্রি করতে হত। ইকুয়েডরে জন্ম হলেও আফ্রিকার রক্ত বইছে ভ্যালেন্সিয়ার শরীরে। সেই দুধ বেচেই ফুটবলের জন্য সাধারণ মানের বুট কিনতেন। যখন তিনি ইকুয়েডরের ক্লাব এমেলেক এফসিতে যোগ দেন। তখন ভ্যালেন্সিয়ার কাছে খাওয়ার মতো টাকাও ছিল না। ক্লাবেই রাত কাটাতেন তিনি। কারণ মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই টুকুও ছিল না তার কাছে। ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আর মনের দৃঢ়তা দিয়ে জয় করেছেন দারিদ্রকে।
ইকুয়েডারের এনার ভ্যালেন্সিয়ার জীবনের গল্প এমনই নাটকীয়।সাফল্য আসার সময় তার ফুটবলের অর্থ উপভোগ করার পরিবর্তে, এনারের জন্য আরও সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নেমে আসে একের পর এক বিপর্যয়। প্রথমত, ভ্যালেন্সিয়ার বোন এরসি ইকুয়েডরের সশস্ত্র গ্যাং দ্বারা অপহরণের শিকার হয়েছিলেন। এরপর বিনা পারিশ্রমিকে শিশু শ্রমের পক্ষ নেওয়ায় নিজের দেশেই ভ্যালেন্সিয়ার নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। তবে কখনও হার মানেননি।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে টিমে থাকারই কথা ছিল না ভ্যালেন্সিয়ার! যদি বা সুযোগ পেতেন, প্রথম দলে হয়তো থাকতে পারতেন না৷ ২০১৩ সালে ইকুয়েডরের নামী স্ট্রাইকার ক্রিশ্চিয়ান বেনিতেজ হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় এনার ভ্যালেন্সিয়ার সামনে রাস্তা খুলে যায়৷ ভ্যালেন্সিয়াকে উইংয়ের বদলে স্ট্রাইকারে খেলান কোচ রেনাল্ড রুয়েডা৷ সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই রাতারাতি হিরো হয়ে গিয়েছিলেন ভ্যালেন্সিয়া।
৩৩ বছরের এই তারকা ইকুয়েডরের সেরা স্ট্রাইকারদের মধ্যে অন্যতম। দেশের হয়ে ৭৫টি ম্যাচে ৩৭টি গোল করে ফেলেছেন তিনি। ১০ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবল ক্যারিয়ারে দেশকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছেন। বর্তমানে ইকুয়েডরের মহাতারকা তিনি। বিশ্ব ফুটবল যার লড়াই দেখলো গতরাতে। তবে ৭৭ মিনিটে মাথায় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভ্যালেন্সিয়া। যা নিয়ে চিন্তায় ইকুয়েডর শিবির।