Shaoli Mitra: অভিনয় ছিল তাঁর রক্তে, প্রয়াণ দিবসে স্মরণে শাঁওলি মিত্র

।। প্রথম কলকাতা ।।

Shaoli Mitra: নাট্যমঞ্চের এক অভাবনীয় প্রতিভার নাম শাঁওলি মিত্র। শম্ভু মিত্র এবং তৃপ্তি মিত্রের কন্যা ছোট থেকেই বড় হয়েছেন নাট্য পরিবেশে। বলতে গেলে, অভিনয় তাঁর রক্তে রয়েছে। জন্মেছিলেন ১৯৪৮-এ। বড় হয়েছেন বাবা-মার অভিনয় দেখে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাটকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।

তাঁর বাড়িতে ‘বহুরূপী’র মহড়া চলত। আর সেই মহড়ার ডায়লগ শুনে শুনে মুখস্ত করে ফেলতেন তিনি। বাবা-মা একত্রে কাজ করতেন ‘বহুরূপী’ নামের একটি গ্রুপ থিয়েটারে। তবে আর পাঁচটা মধ্যবিত্ত পরিবারের মত বাবা-মার সান্নিধ্য পাননি। বেশিরভাগ সময়ই বাবা শম্ভু মিত্র নাটকের শোয়ের দিন তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। মঞ্চের উইংসের ধার থেকে ছোটবেলাতেই দেখেছেন বহু নাটক। মা-বাবার ব্যস্ততার মাঝেই বড় হয়ে উঠেছেন ছোটো শাঁওলি। স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীনই নাট্যমঞ্চে পদার্পণ। ‘বহুরূপী’ দলের ‘ছেঁড়া তার’ নাটকে প্রথম শিশু বয়সে অভিনয় করেন তিনি। এই সময় থেকেই দুঃখের দৃশ্যে প্রচন্ড কাঁদতেন তিনি। তাঁর কান্না নাটককে এক অন্য মাত্রা দিত। তিনি অভিনয়ের মধ্যে এতটাই ডুবে যেতেন যে, তাঁর কান্না দেখে কেঁদে উঠতেন দর্শকরা। তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনায় ‘ডাকঘর’ নাটকে অভিনয় করেছেন। যেটি কলকাতা দূরদর্শনে সম্প্রচারিত হয়। ১৯৬৯ সালে’ কিংবদন্তী’ বলে একটি নাটকে অভিনয় করেন।

যখন তাঁর বয়স ২১, তখন বাদল সরকারের লেখা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকে মিসেস ইথার্নির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তবে এই নাটক করতে করতে প্রয়োজনে তবলা, হারমোনিয়াম, সেতার কিনে নিয়মিত গানের রেওয়াজ শুরু করেন তিনি। ১৯৭১-এ বাবা শম্ভু মিত্রের নির্দেশনায় বাদল সরকারের লেখা ‘পাগলা ঘোড়া’ নাটকে অভিনয় করেন। যদিও বাবার নির্দেশনায় খুব বেশি কাজ করার সুযোগ হয়নি। কারণ তিনি বড় হওয়ার পরে শম্ভু মিত্র ‘বহুরূপী’ দল ত্যাগ করেন। পরে ‘রাজা’ নাটকে তৃপ্তি মিত্রের বদলে সুরঙ্গমার চরিত্রে অভিনয় করেন তিনি। তৃপ্তি মিত্রের নির্দেশনাতে ‘টেরোড্যাকটিল’, ‘ঘরে-বাইরে’ নাটকে অভিনয় করেছেন। ১৯৮০ সালে ‘বহুরূপী’ দল ছেড়ে দেন তিনি। তবে নতুন কোনও দল তৈরি বা অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়ার খুব একটা ইচ্ছে ছিল না। বেতারে সেই সময় নাট্যাভিনয় করতেন তিনি।

পরবর্তীতে তিনি নাটক লেখা শুরু করেন। ১৯৮৫-তে দিল্লিতে প্রথম কথকতার অভিনয় দেখেন তিনি। এরপর সেই আঙ্গিকে লেখেন ‘কথা অমৃত সমান’। তবে শুধু নাটক নয়, বহু গল্প-প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। ১৯৮৯-এর পর গল্প লেখা শুরু বলা যায়। তাঁর লেখা প্রথম গল্প ‘অনৃত’। এছাড়া ‘অপারগতা’, ‘দায়গ্রহণ’, ‘একাকিত্ব’ ইত্যাদি গল্প লিখেছেন। তাঁর লেখা ‘প্রজ্ঞা ওরফে রীনা ওরফে ১১৭ নম্বর’ গল্পটি প্রথম ‘সানন্দা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সেটা তাঁর প্রথম প্রকাশিত গল্প। এর পর ১৯৯৯-এ মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স থেকে তাঁর লেখা গল্পগুলির একটি সংকলন প্রকাশিত হয় ‘ভ্রান্তিকাল’ নামে। তিনি ১৯৯-তে প্রথম ‘নাথবতী অনাথবৎ’ নাটকটি লেখার জন্য আনন্দ পুরস্কার পান। পরবর্তীতে ২০০৩-এ ‘সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার’ পেয়েছেন। ‘পদ্মশ্রী’, ‘বঙ্গবিভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি। ২০২২-এর আজকের দিনে তাঁর চলে যাওয়া নাট্যমঞ্চের জন্য অত্যন্ত বড় ক্ষতি।

 

খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়

সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম

Exit mobile version