।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran President Dies In Chopper Crash: ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুর পর একদম চুপ পশ্চিমি দুনিয়া সহ ইসরায়েল। কপাল পুড়বে ইরানের, এখনই দরকার শক্ত কান্ডারি। মারাত্মক ফল ভুগতে চলেছে গোটা বিশ্ব। সামান্য ভুলেই দুর্বল হয়ে যেতে পারে ইরানের গদি। তাহলে কি রাইসিকে হারিয়ে ইরান শেষ পর্যন্ত হার মানবে? জিতে যাবে ইসরায়েল? আমুল বদলে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ রাজনীতি। পুরো অঙ্কটা গোলমেলে হয়ে যাবে ইরানের কারণে। রাইসির মৃত্যুতে পশ্চিমা বিশ্ব নীরবতা পালন করছে কেন ? কোনো অভিসন্ধি নেই তো? তলে তলে কোন প্ল্যান কষছে ইসরায়েল?
সংকটে ইরান, পশ্চিমাদেশে রহস্যজনক নীরবতা
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর, পশ্চিমা দেশগুলোকে ঘিরে ধরেছে রহস্যজনক নিরবতা। একটা দেশে হঠাৎ করে রাষ্ট্রপতি আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মৃত্যুটা সত্যি যেন একটু সন্দেহজনক। একটু ভেবে দেখুন তো, যে কোন দেশের ক্ষেত্রে এই ক্ষতিটা সামলানো ঠিক কতটা কঠিন? হিসাব অনুযায়ী, দেশটার মাথার উপর থেকে ছাতা সরে যাওয়ার মত। এই মুহূর্তে শক্ত কোন হাত যদি কান্ডারি না ধরে, মুহূর্তে বেসামাল হয়ে যেতে পারে ইরানের অর্থনীতি থেকে শুরু করে রাজনীতি। দেখুন, সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান আর ইসরায়েল সংঘাতে জড়িয়েছে, সেই সূত্র ধরেই কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো জড়িয়ে পড়েছিল ইরানের সঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই এত বড় ঘটনায় সমালোচক মহল পশ্চিমা দেশগুলো কিংবা ইসরায়েলের দিকে আঙুল তুলতেই পারে। বিশ্বের কোনো প্রান্তে সামান্য ঘটনা ঘটলেই, পশ্চিমা বিশ্বকে অতি উৎসাহ দিয়ে এগিয়ে আসতে দেখা যায়। শুধু তাই না, কোন কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপেও করে। কিন্তু ইরানের এত বড় ঘটনাতে পশ্চিমা নেতারা রীতিমত নীরবতা পালন করছেন। আর তা নিয়ে উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন। গত সপ্তাহে যখন স্লোভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকোর উপর হামলা হয়েছিল, তার দ্রুত প্রতিক্রিয়া আসতে শুরু করেছিল গোটা বিশ্ব থেকে। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইরানের ঘটনা একদমই বিপরীতমুখী। কিন্তু ঘটনাটা সামান্য নয়। তাহলে কি, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কে যে দীর্ঘদিন টানাপোড়ন চলছিল, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের বিপদেও পাশে নেই? শুধুমাত্র, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট এই দুর্ঘটনায় সমবেদনা জানিয়েছেন।
ইরানের স্বপ্ন ভঙ্গ, রাইসির বিকল্প পাওয়া দুষ্কর!
ইব্রাহিম রাইসির হাত ধরেই নতুন করে স্বপ্ন দেখছিল ইরান। ইরান, রাশিয়া, তুরস্কের জোটের কাছে কোথাও গিয়ে কোনঠাসা হচ্ছিল পশ্চিমা বিশ্ব। সেই ভয় ধরে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের মনেও। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের এত বড় দুঃসংবাদ বড় সুযোগ করে দিল পশ্চিমা দুনিয়াতে। রাইসি ইরানের প্রেসিডেন্ট হয়েছেন খুব বেশিদিন হয়নি। কিন্তু তার পরেও তাঁর প্রভাব প্রতিরোধ প্রতিপত্তি ছিল অপ্রতিরোধ্য। ইসরায়েলকে সামনে দাঁড়িয়ে রুখে দেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। ইসরায়েলের উপর পাল্টা হামলা করতেও ছাড়েননি। ধীরে ধীরে গোটা বিশ্বের কাছে পরিচিতি পাচ্ছিলেন, মুসলিম বিশ্বের একজন শক্তিশালী নেতা হিসেবে। স্বপ্ন ছিল, ইরানকে গড়ে তুলবেন শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে। কোনো কোনো বিশ্লেষক মনে করছেন, রাইসির বিকল্প খুঁজে পাওয়া বড্ড কঠিন। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির অত্যন্ত বিশ্বস্ত ছিলেন তিনি। শক্ত হাতে সামলাচ্ছিলেন ইরানের শাসনভার। শুধু তাই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের সহ এশিয়াতে ইরানের যে ক্ষমতা বলয় তৈরি হয়েছিল, সেই বলয়টা ধীরে ধীরে বাড়াচ্ছিলেন ইব্রাহিম রাইসি। এবার সেই সুরেই কাটল তাল। মুহূর্তে নড়ে গিয়েছে ইরানের শক্ত ভীত। এখন যদি ইসরায়েল বা পশ্চিমা দুনিয়ার কোন দেশ ইরানের উপর অ্যাটাক করে, সেটা হয়তো মানবিকতার দিক থেকে একটা খারাপ সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু বলা বাহুল্য, সেই হামলা রুখতে হিমশিম খাবে তেহরান। সোজা কথায়, বিশ্ব ভূ রাজনীতিতে যে অঙ্কে চলছিল তেহেরান, যে স্ট্র্যাটেজিতে নিজেদের শক্তি বাড়াচ্ছিল, সেখানেই এবার দেশটা খেল একটা বড় ধাক্কা।
শত্রুতায় বদল নয়, ইরানের নীতি কেমন হবে?
এক্ষেত্রে পশ্চিমা বিশ্ব শুধু নীরবই নয়, বরং চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এক মার্কিন সিনেটরের বক্তব্য। যখন ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর রিক স্কট নামক এক রিপাবলিক আইন প্রণেতা এই দুর্ঘটনাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। লেখেন, রাইসিকে ভালোবাসা কিংবা সম্মান নয়, এমনকি তাকে কেউ মিসও করবে না। যদি রাইসি মারা যান তাহলে তিনি আশা করেন, ইরানি জনগণ তাদের দেশকে খুনি স্বৈরশাসকের হাত থেকে ফিরিয়ে আনার সুযোগ পাবে। একদিকে যখন হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পর রাশিয়া আজারবাইজান আর্মেনিয়া ইরাক সহ বহু দেশ ইরানকে উদ্ধার কাজে সহায়তা করছিল, তখনও কিন্তু নিশ্চুপ ছিল পশ্চিমা বিশ্ব। ইসরায়েলও খুব ভালোভাবে বুঝে গিয়েছে, এই ঘটনায় আঙুল উঠতে পারে ইসরায়েলের দিকে। তাই ইতিমধ্যে ইসরায়েলের বহু কর্মকর্তা বলেই দিয়েছেন, রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের কোন হাত নেই। রাইসির মৃত্যুতে ভারত তুরস্ক সৌদি আরব রাশিয়া চীন পাকিস্তানসহ বহু দেশ থেকে শোক প্রকাশ করলেও ইসরায়েলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেভাবে কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ইসরায়েলের বিরোধী দলীয় নেতাদের মতে, রাইসির মৃত্যুর পর মধ্যপ্রাচ্যে যে ইরানের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে, ইসরায়েল কিন্তু এমনটা আশা করে না।
অর্থাৎ ইসরায়েলের মতে, ক্ষমতার হাত বদল হলেও ইরান তার নীতিতেই চলবে। আর একইভাবে শত্রুতা বজায় রাখবে ইসরায়েলের সঙ্গে। রাইসির মৃত্যু ইসরায়েলের জন্য নাকি কোন ঘটনাই নয়। আর এই ঘটনা ইরানের প্রতি ইসরায়েলের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিন্দুমাত্র প্রভাব ফেলবে না। কারণ ইরানের নীতি নির্ধারণ করেন দেশটা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহু আলি খামেনি। ইরানের প্রেসিডেন্ট যে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিলেন, তাতে নাকি ইসরায়েলের কোন সন্দেহ নেই। ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমকে এমনটাই বলেছেন বিরোধী দলীয় নেতা এমকে আভিগদর লিবারম্যান। তবে ইরানও নিজেকে আস্তে আস্তে সামলে নিচ্ছে। রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বর্তমানে দেশটার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নিয়োগ করা হয়েছে উপরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরী কানিকে। আর অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, দেশটার প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার।
মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে বদল, গোটা বিশ্বে প্রভাব
ইরান যতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুক না কেন প্রভাব পড়তে পারে বড় আকারে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যের এমন একটা দেশ যে দেশে বিন্দুমাত্র টালমাটালও অস্থির করে তুলতে পারে জ্বালানি তেলের বিশ্ব বাজার। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, দেশটার প্রেসিডেন্ট নিহত হওয়ার খবর সামনে আসতেই তার কোপ পড়েছে তেলের বাজারে। যেদিন রাইসির মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে, সেদিনই লেনদেন শুরুর পরপরই ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৩২ সেন্ট বেড়ে ব্যারেল প্রতি দাঁড়িয়েছে ৮৪.৩০ ডলারের। হঠাৎ করে তেলের দাম উর্ধ্বমুখী হওয়ার পিছনে বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন দুটি কারণ। একটা রাইসির মৃত্যু, আর একটি হল সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমানের জাপান সফর বাতিল। মূলত বৈশ্বিক চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরে, জ্বালানি তেলের বাজার এখন অনিশ্চয়তার মুখে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তেলের দাম আরো বাড়তে বলে আশঙ্কা করছেন ভূ রাজনীতির বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি প্রভাব পড়বে শেয়ার বাজারসহ সোনার দরে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রাইসির মৃত্যু ফলে এফেক্টেড হতে পারে ভারত-ইরান সম্পর্কও।
আর একটা প্রশ্ন, রাইসির মৃত্যুতে কি আমুল বদলে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ? উত্তরটা যেমন হ্যাঁও হতে পারে, আবার নাও হতে পারে। কোন কোন কূটনৈতিক মনে করছেন, রাইসির মৃত্যুর ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যকে পৌঁছে দিতে পারে আঞ্চলিক যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। কারণ, বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সক্রিয় বহু সশস্ত্র গোষ্ঠীকে সামরিক সহায়তা দিয়ে এসেছে ইরান। বিশেষ করে ইয়েমেন ইরাক সিরিয়ায় লেবানন বাহরাইন এবং ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ আর সমরাস্ত্রের অন্যতম যোগানদাতা ইরান। যা ক্রমাগত হুমকি তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের সামনে। রাইসির আমলেই কিন্তু ইসরায়েলের অভ্যন্তরে তেহেরান অতি সহজেই ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে পেরেছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইসরায়েলও। ইরানের এহেন পদক্ষেপের আগে, মধ্যপ্রাচ্যের অন্য কোনো দেশ কোনোদিন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এত বড় হামলা করার পরিকল্পনাও করতে পারেনি। সেই সাহস একমাত্র দেখিয়েছেন রাইসি। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েল সহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের পরমাণু কার্যক্রমে বেশ অসন্তুষ্ট। মনে করা হচ্ছে, রাইসির মৃত্যু বড় প্রভাব ফেলতে পারে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতেও। পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রভাব পড়বে মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপীয় রাজনীতিতে। ইউক্রেন -রাশিয়া যুদ্ধে প্রথম থেকেই তেহেরান রুশ বাহিনীকে বিপুল পরিমাণ ড্রোন আর সমরাস্ত্র সংগ্রহ করেছিল। এখন সেই ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে কিনা সেটা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম