।। প্রথম কলকাতা ।।
Pulled Rickshaw in Kolkata: গঙ্গার গা ঘেঁষে থাকা প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো কলকাতার, অনেক কিছুই বদলে গেলেও, বদলাইনি ঐতিহ্য। যদি এখন আপনাকে প্রশ্ন করা হয়, আচ্ছা বলুন তো, কলকাতা বলতেই চোখের সামনে প্রথমে কি ভেসে ওঠে? আপনি নিশ্চয়ই বলবেন ট্রাম, হলুদ ট্যাক্সি, পুরনো বিল্ডিং, অলিগলি আর হাতে টানা কাঠের রিকশা। কানে ভেসে উঠছে ঘন্টির ঠুং ঠুং শব্দ। উনিশ শতকে এই রিকশাই ব্রিটিশদের সাথে সমান তালে কলকাতাকে শাসন করেছে। এটাকে টানাও খুব একটা সহজ নয়, এর চাকা গড়াতে গেলে প্রথমত শক্তির প্রয়োজন। তারপর লাগে ব্যালেন্স। চাকার সাথে গতির মিল থাকতে হয় চালকের পায়ের। কিন্তু দুঃখের বিষয়, নতুন প্রজন্মের আর এই পুরোনো পেশায় মোটেই ইচ্ছে নেই। আধুনিকতার সঙ্গে লড়াই করতে ব্যস্ত।
রিকশা এটা মূলত একটি জাপানি শব্দ, এসেছে জিন-রিকি-শা থেকে। জিনের অর্থ মানুষ, রিকি বলতে বোঝায় শক্তি, আর শা অর্থ যান। সহজ ভাবে বলতে গেলে, এই শব্দের অর্থ মানব চালিত যান। ১৮৬৯ সাল নাগাদ জাপানে রিকশা আবিষ্কার হয়। তারপর তা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মঙ্গোলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া সহ বহু দেশে। জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে ইউরোপেও। ভারতে পালকির ব্যাপক চলছিল। কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসার পর পালকির গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৯০ সাল নাগাদ কলকাতায় আসে জাপানি রিকশার কাঠের সংস্করণ। আমদানি করেছিলেন, এক ইহুদি ব্যবসায়ী। তারপর ১৯৩৩ সাল নাগাদ পাকাপাকিভাবে লাইসেন্স দেয়া হয় ৬০০০ টানা রিকশাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ধীরে ধীরে কিন্তু চীন সহ বহু দেশে টানা রিকশা ব্যবহার বন্ধ হতে শুরু করলেও, কলকাতায় আজও টানা রিকশা একইভাবে অব্যাহত রয়েছে।
শত শত বছরের ঐতিহ্য আর ইতিহাস আষ্টেপৃষ্ঠে রেখেছে প্রাণের শহর কলকাতাকে। বলতে গেলে, টানা রিকশা তিলোত্তমা কলকাতার বিনেদিয়ানার মতোই। উত্তর কলকাতা কিংবা দক্ষিণ কলকাতার অলিগলিতে গেলেই দেখতে পাবেন এমন রিকশা। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি। চাকা গুলো আকারে বেশ বড়। আর হাতল পর্যন্ত লোহা দিয়ে বাঁধানো। যাত্রীদের বসার জন্য কেউ রেখেছেন স্পঞ্জের গদি, আবার কেউ বা খরের গদি। রোদ বৃষ্টিতে বাঁচার জন্য কেউ কেউ রিকশাটাকে সুন্দর করে সাজিয়ে মাথায় দিয়েছেন একটা ছাউনি।
কিন্তু এই ভালোবাসার যান, পরিবেশবান্ধব টানা রিকশা হারিয়ে যাচ্ছে কালের নিয়মে। দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে চোখের অন্তরালে। হতে পারে এটা ঐতিহ্য, হতে পারে এটা পুরনো স্মৃতির গন্ধ মাখা মূল্যবান জিনিস, কিন্তু নির্মম সত্যটা হল, যারা এই রিকশা চালাচ্ছেন তাদের অনেকেরেই এখন ভালো করে পেট চলে না। চলবেই বা কি করে? রাস্তায় যে এখন দৌড়ে বেড়াচ্ছে ক্যাব, বাস, ট্যাক্সির মত দ্রুত গতির গাড়ি। আধুনিকতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পেরে উঠছে না, যেন ছন্দহীন হয়ে পড়ছে টানা রিকশা। তবে হ্যাঁ, এই টানা রিকশা কিন্তু আজও কলকাতার সামাজিক কাঠামোর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
https://www.facebook.com/100069378195160/posts/723257973330136/?mibextid=NTRm0r7WZyOdZZsz
বর্ষায় যখন জল জমে যায়, তখন কিন্তু অটো, ট্যাক্সি গুলো যেতে পারে না, তখন ভরসা হয়ে ওঠে এই টানা রিকশা। চালকরা কোমর পর্যন্ত জলে দাঁড়িয়ে, জল ঢেলে যাত্রীকে পৌঁছে দেন গন্তব্যে। প্রমান করে দেয়, কলিকাতা আছে কলিকাতাতেই। টানা রিকশা অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে লড়াই করে যাচ্ছে। তার থেকেও যেন বেশি লড়াই করছে এই রিকশা টানা মানুষগুলো।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম