।। প্রথম কলকাতা ।।
Train: ভেবে দেখেছেন? ভারতে কেন বারবার ট্রেন লাইনচ্যুত হয়? করমন্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার পর খুব প্রাসঙ্গিকভাবেই এই প্রশ্নটা উঠে আসছে। একই সাথে উঠে আসছে কারণগুলোও। রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট আপনাকে রীতিমতো টেনশনে ফেলে দেবে। আদৌ কি রেললাইনগুলোর নিরমিত রক্ষণাবেক্ষণ হয়? করমণ্ডলের ক্ষেত্রে ত্রুটি টা কোথায় ছিল জানেন? বিষয়টা খুব অদ্ভুত নয়কি? লাইনচ্যুত হচ্ছে একের পর এক ট্রেন, যা ভারতের রেলওয়ে খাতের জন্য অবশ্যই উদ্বেগের বিষয় হয়ে উঠছে দিনে দিনে। এর নেপথ্যে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে।
- রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণের অভাব হতে পারে।
- ত্রুটিপূর্ণ কোচের কারণে হতে পারে।
- ট্রেন চালনায় সমস্যা থেকেও হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হলো করমন্ডল এর ক্ষেত্রে এর কোনটা হয়েছিল? বিবিসির বিশ্লেষণে ভারতের সরকারি রেলওয়ে সেফটি রিপোর্ট ২০১৯-২০-র তথ্য বলছে রেললাইনে ত্রুটি থাকার কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনাগুলো ঘটেছে। এর মধ্যে ফাটল এবং রেললাইনের সংকোচন-প্রশমন দুটো বড় কারণ। বুঝতে হবে ধাতুতে তৈরি রেললাইনগুলো গ্রীষ্মকালে প্রসারিত হয় এবং শীতকালে তাপমাত্রার ওঠানামার কারণে সংকোচনের মধ্য দিয়ে যায়। এইজন্য এই রেললাইনগুলো নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু, আদৌ কি সেটা করা হয়? উঠছে প্রশ্ন।
ঢিলে হয়ে থাকা লাইনগুলোকে টাইট দেওয়া, নিয়মিত স্লিপার পরিবর্তন করা, অ্যাডজাস্টিং সুইচগুলোকে লুব্রিকেন্ট দিয়ে পিচ্ছিল রাখা জরুরী, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই ধরনের রেললাইন পরীক্ষা করা হয় সাধারণত পায়ে হেঁটে অথবা ট্রলি, লোকোমোটিভ এবং রিয়ার ভেহিকলে চড়ে। ভারতের রেলপথগুলোর সক্ষমতা ট্র্যাক রেকর্ডিং কারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়। মূলত লাইনের ওপর দিয়ে ট্রেনগুলো প্রতি তিন মাসে অন্তত একবার ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে কিনা এবং লাইনগুলো সেই অনুযায়ী ডিজাইন করা হয়েছে কিনা সেটা দেখার জন্য। এসবই করা উচিৎ, কিন্তু হয় কতটুকু?
ভারতে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ এর মধ্যে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় নিরীক্ষকদের প্রতিবেদনে কি উঠে এসেছে?
- লাইনচ্যুত হওয়ার একটি প্রধান কারণ রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণ অভাব, শুধু এই কারণে ১৭১টি দুর্ঘটনা ঘটেছে।
- ১৮০টিরও বেশি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে যান্ত্রিক কারণে,এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশের বেশি ক্ষেত্রে কোচ এবং ওয়াগনে ত্রুটি ছিল।
- খারাপ ড্রাইভিং এবং অতিরিক্ত গতিও ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার জন্য দায়ী।
- এছাড়া, ট্র্যাক রেকর্ডিং কারগুলোর পরিদর্শনেই ৩০% থেকে ১০০% পর্যন্ত ঘাটতি আরেকটা বড় কারণ।
রিপোর্ট জুড়ে একের পর এক ভুল ত্রুটির উল্লেখ, সাধারণ মানুষের টেনশন আরো বাড়াচ্ছে। এদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ট্রেন দুর্ঘটনাও। ভারতীয় রেলওয়ের মতে, ২০২১-২২ সালের মধ্যে ৩৪টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যার হিসেবে আগের বছরের তুলনায় ২৭টা বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। আর, গত ৩১শে মে ‘দ্য হিন্দু’ সংবাদপত্র জানিয়েছে ২০২২-২৩ সালে এই ধরনের দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে ৪৮টি হয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ক্রমবর্ধমান দুর্ঘটনার বিষয়ে উদ্বিগ্ন, কিন্তু তারপরেও কোথাও একটা বড়সড়ো গাফিলতি থেকে যাচ্ছে। প্রাণ দিয়ে যার খেসারত দিতে হচ্ছে নিরীহ সাধারণ মানুষকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম