।। প্রথম কলকাতা ।।
দক্ষিণ আমেরিকার মাটির নীচে ঠাসা হোয়াইট গোল্ড। লিথিয়ামের লোভে জোঁকের মতো আটকে চীন। তীক্ষ্ণ নজর আমেরিকার। এই পরশপাথরেই কী ঘুরবে ভাগ্য? নাকি ডেকে আনবে চরম সর্বনাশ? খনি থেকে ধাতু সরে যাচ্ছে, চীনকে নিয়ে আমেরিকার টেনশন বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেন লিথিয়াম নিয়ে ওয়াশিংটন-বেইজিং এর মধ্যে এতো দড়ি টানাটানি? কোন দিকে ঝুঁকছে দক্ষিণ আমেরিকা? ব্যাটারি শিল্পে তাক লাগাতে কে এগিয়ে? চীন নাকি যুক্তরাষ্ট্র? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা? সময় বদলেছে, জ্বালানির বাজার রূপান্তরিত হচ্ছে, এখন বিকল্প জ্বালানিই মেইন টার্গেট। আর তাই চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো বিকল্প জ্বালানির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান, সোনার চেয়েও দামী লিথিয়াম সরবরাহ নিশ্চিত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাহলে কী, সেই পরশপাথরে ভর করেই এবার জ্বলে উঠবে দক্ষিণ আমেরিকা?
প্রাকৃতিক সম্পদ এই দেশটার জন্য বড় আশীর্বাদ। বিশ্বের মোট লিথিয়ামের অর্ধেকেরও বেশি পাওয়া যায় দক্ষিণ আমেরিকার তিন দেশে আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া ও চিলিতে। তাই এই ৩ দেশের হাতে সুযোগ অনেক গুণ মারাত্মক। নানা ধরণের ব্যাটারি, এমনকি গাড়ির ব্যাটারি তৈরিতেও লিথিয়াম প্রধান উপকরণ ফলে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের চোখ আটকে গেছে দক্ষিণ আমেরিকায়, কারণ সাদা সোনা বা লিথিয়ামের সবচেয়ে বড় মজুদ সেখানেই। হিসেব বলছে, বলিভিয়ায় বিভিন্ন খনিতে লিথিয়ামের মজুদ ২১ মিলিয়ন টনের মত, আর্জেন্টিনায় ১৯.৩ মিলিয়ন টন, চিলিতে ৯.৬ মিলিয়ন টন অস্ট্রেলিয়ার পর চিলি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম লিথিয়াম উৎপাদনকারী দেশ। কাঁচামাল হিসাবে লিথিয়াম বিক্রির বদলে তা দিয়ে ইলেকট্রিক ব্যাটারির মতো পণ্য তৈরি করে বিক্রি করলে মুনাফার পরিমাণ বাড়বে। তাই, হোয়াইট গোল্ডের মুনাফা দেশেই রেখে দেওয়ার প্ল্যান দেশটার। কিন্তু সেই চেষ্টা সহজ নয়, কারণ চীন যুক্তরাষ্ট্র এই সম্পদ হাতানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে দক্ষিণ আমেরিকার লিথিয়ামে ভাগ বসাতে চীন খুবই আগ্রাসী তৎপরতা চালাচ্ছে। অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
বিনিয়োগের ভান করে খনি থেকে ধাতু তুলে নেওয়া হচ্ছে, বিস্ফোরক অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের টেনশন যে বাড়ছে সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না।আর চীন তো স্পষ্টভাবে বলেই দিচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদের জন্য চীন অন্য দেশের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। এমনকি চীনা সরকার ২০১৬ সালে প্রকাশিত তাদের জাতীয় প্রাকৃতিক সম্পদ পরিকল্পনায় যে ২৪টি খনিজ সম্পদের কথা উল্লেখ করেছে তার মধ্যে রয়েছে লিথিয়াম। চীনের পরিকল্পনায় বলা হচ্ছে লোহা, তামা, অ্যালুমিনিয়াম, সোনা, নিকেল, কোবাল্ট, লিথিয়ামের মতো খনিজ সম্পদ অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শিল্পের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ইম্পরট্যান্ট আর চীনকে দোষারোপ করার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও এখন খোলাখুলি বলছে কম্পিউটার থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক গাড়ি, ব্যাটারি, সোলার প্যানেল বা উইন্ড টারবাইনের মত পণ্যের উৎপাদনে লিথিয়াম, কোবাল্ট বা রেয়ার আর্থের মতো খনিজ দ্রব্য প্রয়োজন! এসব খনিজ দ্রব্যের চাহিদা আগামী কয়েক দশকে চারশো থেকে ছশো শতাংশ বৃদ্ধি পাবে, লিথিয়াম এবং গ্রাফাইটের চাহিদা বাড়বে চার হাজার গুণ।
মোদ্দা কথা দক্ষিণ আমেরিকা কে নিয়ে ওয়াশিংটন বেইজিং এর দড়ি টানাটানি চলছে কিন্তু, দক্ষিণ আমেরিকা বেশি প্রায়োরিটি দিচ্ছে চীনকে। কেন? চীন লাতিন আমেরিকায় ব্যাটারি তৈরিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছে, ফলে চীন আমেরিকার চেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আর, গ্রিন প্রযুক্তি তৈরিতে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে সাহায্য করতে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে কাঁচামাল নিয়ে আসতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর কাছে চীনের প্রস্তাব অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। কারণ আগেই বললাম তারা চাইছে কাঁচামাল না বেঁচে তা দিয়ে পণ্য তৈরি করে রপ্তানি করতে। বিশেষজ্ঞদের মতে এটা পরিষ্কার লক্ষ পুরণে যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে এই দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। তবে, শুধু চীন যুক্তরাষ্ট্র নয়। আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, চিলির লিথিয়ামের বাজারের ওপর অনেক দিন ধরেই অনেক দেশের সরকারের তীক্ষ্ণ নজর রয়েছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম