।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: গড়ে উঠবে স্মার্ট বাংলাদেশ, সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এই রোমাঞ্চকর যাত্রায় পারস্পরিক বিশ্বাস নিয়ে একসাথে পথ চলবে বাংলাদেশ আর বিশ্ব ব্যাঙ্ক। দ্রুত উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা পাবে বাংলাদেশ, বন্ধুর মতো পাশে থাকবে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। বাংলাদেশ বলবে সফল উন্নয়নের গল্প। যতই মনোমালিন্য হোক না কেন, যে কোন সংকটে বাংলাদেশ সাহায্য পাবে। বর্তমানে সহজে ঋণ পেতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশের কাছে অপরিহার্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সদর দপ্তরে বাংলাদেশ এবং বিশ্ব ব্যাঙ্কের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপনের সময় পাঁচটি আর্থিক চুক্তি স্বাক্ষরের কথা হয়। যেখানে বিশ্ব ব্যাঙ্ক বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য প্রায় ২.২৫ বিলিয়ন ডলার প্রদান করেছে। যার মধ্যে ৭৫৩ মিলিয়ন ডলার এক্সিলারিটি ট্রান্সপোর্ট এন্ড ট্রেড কানেক্টিভিটি ইন ইস্টার্ন সাউথ এশিয়া প্রোগ্রাম ফেস এক আঞ্চলিক বাণিজ্য উন্নত করতে সাহায্য করবে। ৫০০ ডলারের রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফর অ্যাডাপটেশন অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি রিডাকশন প্রকল্প বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যানকে সমর্থন করার জন্য সবথেকে বড় বিনিয়োগ প্রকল্প। যা অভ্যন্তরীণ বন্যার বিরুদ্ধে দুর্যোগ প্রস্তুতির উন্নতিতে সাহায্য করবে। বাংলাদেশকে আরও সবুজ এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক উন্নয়নে সাহায্য করবে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। এছাড়াও টেকসই মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড রেসিলিয়েন্ট ট্রান্সফর্মেশন প্রকল্প মাইক্রো এন্টারপ্রাইজ সেক্টরকে আরো গতিশীল করে তুলবে। সাহায্য করবে বাংলাদেশের সম্পদ, দক্ষতা, পরিবেশ বান্ধব পরিস্থিতি এবং জলবায়ু স্থিতিস্থাপক বৃদ্ধির খাতে।
দেখতে দেখতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৫০ বছরের সম্পর্ক। সেই সম্পর্কে উদযাপন করতে দুই তরফ থেকেই বেশ আয়োজন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের উপর বাংলাদেশ বিশেষভাবে নির্ভরশীল। বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি শাখা রয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, এই শাখা বিশ্বের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর উন্নয়নের জন্য ঋণ প্রদান করে। যার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম সুবিধাভোগী দেশ। বাংলাদেশের যতগুলি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা রয়েছে তার মধ্যে একটি বড় স্তম্ভ বিশ্বব্যাঙ্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্ক মনে করে, স্বাধীনতার সময়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের সক্ষমতা সম্পর্কে তারা যতটুকু ধারণা করেছিল, বাংলাদেশ বর্তমান সময় দাঁড়িয়ে সেই গণ্ডিকে বহু অংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ৫০ বছরের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছ থেকে অনুদান, সুদ মুক্ত ঋণ আর কম সুদে প্রায় ৩৯০০ কোটি ডলার ঋণ পেয়েছে। এখানেই থেমে নেই, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৫৫ টি প্রকল্প চলছে যার পিছনে প্রায় ১৬০০ কোটি ডলার দিয়ে সাহায্য করছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের উদ্দেশ্য, কোনো দেশকে আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাঠামো মজবুত করা। দেশটির মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। বিশ্ব ব্যাঙ্কের সুবিধাভোগী দেশের তালিকায়ে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া বাংলাদেশের ঋণের বরাদ্দের পরিমাণ অনেকটা বেড়েছে। যার অন্যতম কারণ অর্থায়নযোগ্য প্রকল্প। ২০১৬ সালের পর থেকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের এই শাখার কাছে বাংলাদেশে এই ধরনের প্রকল্প উপস্থাপন করতে পেরেছে বলেই খুব সহজেই ঋণ পাচ্ছে। পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের সঙ্গে একটু মনোমালিন্য হয়েছিল। পদ্মা সেতু বিশ্ব ব্যাঙ্কের ইতিহাসে সব থেকে বড় উন্নয়ন প্রকল্প ছিল, হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১২০ কোটি ডলার। পরে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এই প্রকল্প থেকে সরে আসে, যদিও বাংলাদেশ পিছিয়ে যায়নি। নিজেদের অর্থায়নে তৈরি করেছে পদ্মা সেতু। বিশ্ব ব্যাঙ্ক তখন ভাবনা চিন্তা করেছিল যে তারা এবার থেকে বাংলাদেশের হাই রিস্ক প্রকল্পে একটু ভেবেচিন্তে ঋণ দেবে। যদিও ফল হয়েছে উল্টো। পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে এসে বাংলাদেশের প্রতি আরো দ্বিগুণ নমনীয় হয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্ক। আসলে এর পিছনে কাজ করছে অন্য স্ট্র্যাটেজি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক গোটা বিশ্বের বাজারে তাদের সাফল্য বা কাজ দেখাতে হয়। তাদের সমস্ত টাকা আসে বিশ্বের বাজার থেকে। সেক্ষেত্রে গোটা বিশ্বজুড়ে তাদের কাজের উন্নয়নের সাফল্যের দৌড় ঠিক কতটা তার হিসেব রাখা বড্ড জরুরি। কিন্তু ৮০ থেকে ৯০ এর দশকে তাদের সেই হিসেবে বড়সড় ঘাটতি রয়েছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তারা সাফল্যের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছে বাংলাদেশকে।
বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কিছুটা হলেও টালমাটাল। একদিকে ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ, অপরদিকে মহামারী পরবর্তী সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাত। সব মিলিয়ে মিশিয়ে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি থেকে শুরু করে দেশটির সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। এছাড়াও রয়েছে ব্যাংকিং খাত এবং ডলার সংকট। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে রয়েছে প্রচুর চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে মোটা ঋণের প্রয়োজন। বাংলাদেশ আপ্রাণ চেষ্টা করে গিয়েছে গোটা বিশ্বজুড়ে চলা মূল্যস্ফীতির আঁচ থেকে বাঁচতে, কিন্তু পারেনি। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২২ সালে যেসব সমস্যার মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ গিয়েছে তার খুব একটা পরিবর্তন ২০২৩ এও হবে না। তাই এই মুহূর্তেই রাশ না টানলে মুশকিল। তবে চলতি বছরের শেষের দিকে অর্থনীতি আবার ঘুরে দাঁড়াবে। ধীরে ধীরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। সামনে নির্বাচন, সাধারণত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ড দেখা যায়। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে বেশি করে নজর দিতে হবে আর্থিক খাতের সংস্কারের দিকে। সেখানে বাংলাদেশকে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মতো ঋণদাতার সঙ্গে হাতে হাত না মিলিয়ে চলাটা বড্ড জরুরি।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম