।। প্রথম কলকাতা ।।
Kim Jong Un: কিম জং উনের থেকেও ভয়ঙ্কর নেতা পেতে চলেছে উত্তর কোরিয়া। কিমের পিছন থেকে আসল কলকাঠি নাড়ছেন অন্য একজন। আশঙ্কায় গোটা বিশ্ব। বিশাল চাপে পড়তে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। একটা কিমকেই সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ওয়াশিংটন, তার উপর আর একটা কিম আসা মানে, গোটা বিশ্বের ত্রাস হয়ে উঠবে দেশটা। উত্তর কোরিয়ার সিংহাসনে বসতে পারে পৃথিবীর নিষ্ঠুরতম মহিলা, পদে পদে সাপোর্ট করছে কিমকে। কে ইনি? কেনই বা কিমের থেকে এনাকে বেশি ভয় পাবে শত্রুপক্ষ? ইনি কিমের বোন, যিনি সু কৌশলে রাশিয়ার বন্ধুত্ব মজবুত করছে, আর যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি হুমকি দিচ্ছে। কিমের বোনের মতো নেতৃত্ববান মহিলা গোটা বিশ্বে দুটো পাওয়া মুশকিল।
বোনের মাস্টারপ্ল্যানে কিমের বাজিমাত!
গোটা বিশ্বে কিম জং উনের নাম কে না শুনেছে! যার নাম শুনলে, ভয় কাঁপে শত্রুপক্ষ। যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্তও কিমের প্রতিটা পদক্ষেপে কড়া নজর রাখে। কারণ উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এমন একজন ব্যক্তি, তিনি যে কখন কি করবেন, আগে থেকে ধরা খুব মুশকিল। বলা হয়, কথার চেয়ে তিনি যেন মিসাইল ছুঁড়তে বেশি ভালোবাসেন। তার কথা ছাড়া, গোটা উত্তর কোরিয়ায় একটা গাছের পাতাও নাকি নড়ে না। মাত্র ৪০ বছর বয়সেই গোটা বিশ্বে কারো কাছে নায়ক, তো কারো কাছে যমদূতের খেতাব কুড়িয়েছেন। সেই জায়গা থেকে, একবার শুধু ভাবুন, একটা কিম জং উনেই থরহরি কম্প। গোটা উত্তর কোরিয়ায় শোনা যাচ্ছে, এবার নাকি দেশটা পেতে চলেছে কিমের থেকেও আরো ভয়ঙ্কর নেতা। দেখুন, কোন দেশের শাসকের অবর্তমানে সেই দেশটার শাসনভার কার হাতে যাবে, এটা একটা ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন। যখনই কিম অসুস্থ হয়েছেন, তখনই এই প্রশ্নটা শুধু উত্তর কোরিয়া নয়, গোটা বিশ্বে পুরো ঝড় তুলেছে। কারণ একটাই, উত্তর কোরিয়ার বন্ধুর থেকে শত্রুর সংখ্যাটা যেন একটু বেশি। দেশটা এমনি থেকেই কাউকে খুব একটা পাত্তা দেয় না। সামান্য ভুলেও রেয়াত দেয় না বন্ধু রাষ্ট্রকে। এরকম একটা দেশের পরবর্তী শাসন ব্যবস্থা কার হাতে যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই একটাই নাম ঘুরেফিরে বারংবার আসে। তিনি হল কিমের বোন কিম ইয়ো জং। হয়তো কিম উত্তর কোরিয়ায় চালকের আসনে বসে দেশকে শাসন করছেন, কিন্তু পিছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে তার বোন। যদি বিগত কয়েক বছরে বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তর কোরিয়ার ভূমিকার কথা বিশ্লেষণ করা হয়, সেখানে বারংবার চলে আসবে ইয়ো জংয়ের নাম। বিশ্বমঞ্চে উত্তর কোরিয়ার হয়ে তিনি বহুবার প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
কিম ভালো করেই বুঝে গিয়েছিলেন, ক্ষমতার একটা প্যারালাল কেন্দ্র তৈরি করতে না পারলে ভীষণ বিপদ। পশ্চিমা দেশের কাছে হার মানতে হবে উত্তর কোরিয়াকে। সেই জায়গা থেকেই তিনি ধীরে ধীরে বোনকে গড়ে তুলেছেন উত্তর কোরিয়ার ডেপুটি করে। ইয়ো জংয়ের কিন্তু কম যোগ্যতা নেই। বাপ দাদারা যে পথে হেঁটেছেন, কিম আর তার বোন সেই পথে হাঁটছেন না। বরং যুক্তরাষ্ট্রকে টেক্কা দিয়ে বিশ্ব মঞ্চে শ্রেষ্ঠ হতে চাইছে দেশটা। আর সেখানে গিয়েই তো যত সমস্যা, এত বিরোধ।
ইয়ো জং বিপজ্জনক নারী, মুখে হুমকির ফোয়ারা
বাবার মৃত্যুর পর ভাই কিম জং উনের বিদেশ মুখ হয়ে ধীরে ধীরে ক্ষমতার শীর্ষে আসেন ইয়ো জং। বয়স বেশি নয়। এর মধ্যেই সফর করেছেন রাশিয়ায়। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন , ইয়ো জংয়ের হাত ধরে উত্তর কোরিয়ায় আরও পোক্ত হচ্ছে ক্ষমতার বলয়। দাদা কিম জং উন পশ্চিমি শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে থাকার কারণে যেভাবে উত্তর কোরিয়াকে আধুনিক করে তুলছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় নিজের ক্ষমতা বাড়াচ্ছে ইয়ো জং। তাকে হালকা ভাবে নেওয়ার কোন মানেই হয় না। শুধু কোরিয়ার ইতিহাসই নয়, হয়তো বা গোটা বিশ্বে ইয়ো জং হয়ে উঠতে পারেন বিপ্পজনক নারী। সর্বপ্রথম ২০১১ সালে বাবার হাত ধরে প্রকাশ্যে এসেছিলেন ইয়ো জং, বাবার মৃত্যুর পর ২০১৮ সালে দক্ষিণ কোরিয়ায় শীতকালীন অলিম্পিকে উত্তর কোরিয়ার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ঠিক তার কয়েক মাস পর, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন এর ঐতিহাসিক সামিটেও তাকে দেখা গিয়েছিল। তারপর থেকেই তিনি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠেন।
বহু কূটনৈতিক মনে করেন, কিম জং উনের পর উত্তর কোরিয়ার সম্ভাব্য নেতা হতে পারে ইয়ো জং। আবার এমনটাও হয়তো হয়তো হতে পারে, কিমের সন্তানরা যতদিন না বড় হবে ততদিন পর্যন্ত সেই দায়িত্বটা নিজে পালন করতে পারেন তিনি। সত্যি কথা বলতে, এই যে গোটা বিশ্বের কাছে কিমকে একজন অদ্ভুত ব্যক্তি হিসেবে মনে করা হয়, আবার কেউ ভয় পায়, অথচ এই কিমের সঙ্গে তার বড় বোনের বোঝাপড়াটা দুর্দান্ত। দাদা আর বোনের মধ্যে পারিবারিক বিবাদ প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা থেকে শুরু করে শত্রুতা, সেখানে দাদার মতো কোন অংশে কম যায় না, ইয়ো জং। দক্ষিণ কোরিয়ার সফরের পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তিনি। শুধু তাই নয়, উত্তর কোরিয়ার প্রায় ৪০টা লিখিত বিবৃতির কারিগর এই ইয়ো জং। উত্তর কোরিয়া আর দক্ষিণ কোরিয়ার সীমানায় একটা জয়েন্ট অফিস ছিল, সেটাও নাকি গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন ইয়ো জং। এমনকি উত্তর কোরিয়ায় যদি একটিও গুলি ছোঁড়ে হয়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ায় পরমাণু বোমার হুমকি দেন তিনি। গোটা বিশ্ব জানে, কিম জং উন নিজের ক্ষমতাকে সংহত করতে নিজের সৎ ভাইকে হত্যা করেছেন। মোটামুটি ভাবে কিম যাকেই নিজের পথের কাঁটা মনে করেন, তাকেই যখন তখন সরিয়ে দিতে পারেন। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, কিমের দরকার পড়ছিল একজন বিশ্বস্ত আর ক্লিন ইমেজের মানুষ। সেখানে তিনি রেখে দিয়েছেন নিজের বোনকে। তাইতো আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহলের মতে, ইয়ো জং হলেন আরেকজন লেডি কিম জং উন।
দাদাকেও টেক্কা দেবে বোন, আরো শক্তিশালী হবে উত্তর কোরিয়া
আসলে বহুল সমালোচিত হওয়ার কারণে, বিশ্ব নেতাদের তালিকায় কিম জং উন একটু কোনঠাসা। এমত পরিস্থিতিতে তার পাশে একজন শক্তপোক্ত সহযোগীকে দরকার। এই তো, চলতি বছরে কিম দক্ষিণ কোরিয়াকে তার দেশের প্রধান শত্রু বলে চিহ্নিত করেছে। বুঝতেই পারছেন, ব্যাপারটা ঠিক কতটা জটিল। দক্ষিণ কোরিয়াকে যুদ্ধের হুমকি দেওয়া মানেই কিন্তু পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকেও সেই হুমকি দেওয়া। কারণ দক্ষিণ কোরিয়াকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন। স্বাভাবিকভাবেই এখন প্রশ্ন উঠছে, কিম কি তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে দুই কোরিয়ার যুদ্ধের বার্তা দিতে চাইছে? দুই কোরিয়ার শত্রুতা কিন্তু কম নয়, অতীতেও এই দুই দেশের সশস্ত্র সংঘাতে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটা মাধ্যম ছিল। কিন্তু সেটা এখন আর নেই। এই যে দক্ষিণ কোরিয়াকে কিম প্রধান শত্রু হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন, এটা কথার কথা নয় কিন্তু। উত্তর কোরিয়ায় এটা কাজেও পরিণত করার চেষ্টা করতে পারে। তখন কিমের মূল পরামর্শদাতা হয়ে উঠবে তার বোন ইয়ো জং। উত্তর কোরিয়া বলেই দিয়েছে, দুই কোরিয়ার মধ্যে থাকা সমুদ্র সীমার স্বীকৃতি কোনোভাবেই দেবে না। এখানেও কিন্তু চলছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটা বড় ঘোটালা। কারণ উত্তর কোরিয়ার রাজধানী পিয়ংইয়ং ক্রমাগত ঝুঁকছে রাশিয়ার দিকে। অপরদিকে ওয়াশিংটন আর দক্ষিণ কোরিয়ার দাবি, ইউক্রেনের যুদ্ধ পরিচালনায় রাশিয়ার জন্য কিম পাঠাচ্ছে ভয়ংকর সব ক্ষেপণাস্ত্র। যার বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে স্যাটেলাইট কর্মসূচি চালাতে সাহায্য করছে।
দ্য উড্রো উইলসন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর স্কলারসের ফেলো সু সুং ইউন লি ‘ দ্যা সিস্টার নর্থ কোরিয়াস কিম ইয়ো জং, দ্যা মোস্ট ডেঞ্জারাস ওমেন’ বইতে লিখেছেন, যদি কিম জং উন কোনোভাবে শাসন কাজ চালাতে অক্ষম হয়ে পড়েন, তখন সেই শাসনের লাগাম ধরবেন তার বোন কিম ইয়ো জং। প্রতিনিয়ত তিনি তার ভাইয়ের ছায়া সঙ্গী হয়ে থাকেন। যদি কোনো কারণে উত্তর কোরিয়ার শাসকের সিংহাসন খালি হয়ে যায়, সেই মুহূর্তে ইয়ো জংয়ের ওই পদে বসা কোন ব্যাপারই নয়। গত কয়েক বছরে, তিনি তার ভাইয়ের প্রত্যেকটা পদক্ষেপে সমর্থন করেছেন। শুধু তাই নয়, তার ভাইয়ের প্রতিটি গোপন খবরের কথা খুব ভালোভাবেই জানেন। ভাইয়ের এতটাই প্রবল আস্থাভাজন যে, প্রধান পররাষ্ট্রনীতির উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেন। ইয়ো জং উত্তর কোরিয়ার এমন একজন মহিলা, যার ওই দেশের গোটা সিস্টেমের উপর শক্ত দখল রয়েছে।
ওদিকে রীতিমত হুমকি দিয়ে বলেই রেখেছেন, রাশিয়া যেভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিরোধ করছে, উত্তর কোরিয়াও একইভাবে তাদের প্রতিরোধ করবে। উত্তর কোরিয়া সবসময়ই রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করে এসেছে। তাদের দাবি যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যবাদী মনোভাবের কারণেই নাকি ইউক্রেনে হামলা চালাতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়া। কোরিয়া যুদ্ধের শেষ হওয়ার পর ইনি কিন্তু প্রথম ব্যক্তি, যিনি দক্ষিণে পা রেখেছিলেন। দেখুন গত ৭৫ বছর ধরে উত্তর কোরিয়া শাসন করছে কিম পরিবার। আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, উত্তর কোরিয়ার নৃশংস পুরুষতান্ত্রিক রাজনৈতিক ভূখণ্ডে ইয়ং যেন প্রথম বিশেষ একজন ক্ষমতাধর নারী ব্যক্তি। আধুনিক, স্পষ্টভাষী, এমনকি হুমকি দেয়া সহ বেশ ক্ষমতা দেখান। দক্ষিণ কোরিয়ার বিরুদ্ধে পারমাণবিক হামলা চালানোর হুমকি দিতে তিনি রীতিমত অভ্যস্ত। তাইতো নির্দ্বিধায় উত্তর কোরিয়ায় তাকে সবচেয়ে ক্ষমতাশালী নারী বলে মনে করা হয়।
শুধু তাই নয়, তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দপ্তরকে ভীতু কুকুরের চিৎকারে আর যুক্তরাষ্ট্রের পোষা তোতাপাখি বলে অভিহিত করেছেন। আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট কে মানসিক ভারসাম্যহীন বুড়ো বলেও মন্তব্য করতে দেখা গিয়েছে। ২০২০ সালের জুন মাসে তিনি এক লিখিত বিবৃতিতে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে সীমান্তের এপারে অর্থাৎ উত্তর কোরিয়ায় টুথপেস্ট ওষুধ অর্থসহ বহু পণ্য পাঠানোকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে একটা নতুন আইন পাস করার আহ্বান জানান। ডিসেম্বরে পাস হয়ে যায় সেই নতুন আইন। আন্তর্জাতিক মহলের গুঞ্জন বলছে, মূলত নিয়ম অনুযায়ী কিম জং উনের ক্ষমতা তার ভাই বোনের পরিবর্তে তার সন্তানদের যেকোনো একজনের কাছে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই জায়গায় যদি ক্ষমতায় আসেন ইয়ো জং, তাহলে তা হবে উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে একটা নতুন ঘটনা। যদিও কবে তিনি উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করবেন? এই প্রশ্নের যেমন সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই, আবার এই প্রসঙ্গটা অযৌক্তিক নয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম