।। প্রথম কলকাতা ।।
Donald Trump and Joe Biden: বহু অপরাধ করেছেন জো বাইডেন (Joe Biden)। মারাত্মক অভিযোগ। যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরে বড়সড় ফাটল। নির্বাচনে বাইডেনের দুর্বল পয়েন্ট গুলোকে যেন আতশ কাচে খুঁজে খুঁজে বার করছেন প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। দিলেন বড় হুঁশিয়ারি। ক্ষমতায় এলে বাইডেনকে তুলবেন কাঠগড়ায়। ইসরায়েলের (Israel) সঙ্গে ট্রাম্পের সম্পর্কটা ঠিক কেমন? ট্রাম্প নাকি ক্ষমতায় থাকলে, ইসরায়েলে হামাসের হামলা হতোই না। ইসরায়েল হামাস যুদ্ধে কি ব্যালেন্স করতে চাইছেন ট্রাম্প? এটাই নির্বাচনে জেতার ট্রাম্প কার্ড। পুনরায় গদি ফিরে পেতে মরিয়া দুজনেই। আসন্ন নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের (2024 US elections) নতুন প্রেসিডেন্ট কে হতে চলেছেন? জো বাইডেন নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্প? ক্ষমতার পরিবর্তন হলে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি বদলে যাবে না তো?
নিজের দেশের অন্দরে বাইডেনের গদি নড়বড়ে হওয়ার জোগাড়। এমনিতেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বেশ কয়েকটা ফৌজদারী মামলা লড়তে হচ্ছে। সোজা কোথায়, এটা একপ্রকার বদনামই। আর সেই প্রতিশোধ তুলতে এখন মুখিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের মাথায় একগুচ্ছ অভিযোগ। ক্যাপিটাল হিংসা, যৌন কেলেঙ্কারি, ব্যবসায়িক নথিতে জালিয়াতি, ঘুষ দেওয়ার দায়ে ফৌজদারি মামলা সহ আরো অনেক কিছু। তাই ট্রাম্প আগের গদি ফিরে পেতে মরিয়া। কড়া নজর রেখেছেন বাইডেনের উপর। সামান্য ভুলচুক হলেই সেটা নিয়ে তুমুল সমালোচনা করছেন। সুপ্রিম কোর্টের কাছে দায় মুক্তি চেয়েছেন। উপরন্তু দাবি করেছেন, তাকে নাকি যে সমস্ত মামলায় জড়ানো হয়েছে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তারপরেই রীতিমত হুমকি দেন জো বাইডেনের উদ্দেশ্যে। সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যদি দায়মুক্তি না পান, আর যদি আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি জয়ী হন তাহলে জো বাইডেনকে ছেড়ে দেবেন না। বাইডেন সহ তার গোটা পরিবারকে তুলবেন কাঠগড়ায়। ট্রাম্পের স্বপ্ন পুনরায় আবার ক্ষমতায় আসা। ইতিমধ্যেই তার দ্বিতীয় মেয়াদের শাসনকালের কথাও ভেবে ফেলেছেন। ট্রাম্প কিন্তু আশা করেন, যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট তাকে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেবে। গত বছরের ডিসেম্বরে কলরাডো প্রদেশের সর্বোচ্চ আদালত জানিয়ে দিয়েছিল, ওই প্রদেশের প্রাথমিক নির্বাচনে ট্রাম্প দাঁড়াতে পারবেন না। একই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, মেইনের সর্বোচ্চ প্রাদেশিক আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশগুলিকে চ্যালেঞ্জ চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আদালতে যান ট্রাম্প। তারপর তো বাইডেন আর ট্রাম্প দুজনেই প্রাইমারিতে নিশ্চিত হওয়ার পর এখন নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিয়েছেন।
যদিও ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে জয় পেতে বাইডেনকে সেভাবে বাধার মুখে পড়তে হয়নি। কারণ শক্ত প্রতিপক্ষ ছিল না। তবে এ কথা ঠিক, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিরঙ্কুশ সমর্থন দেওয়ার বিষয় জো বাইডেনের ব্যাপারে হতাশা জানিয়েছেন দলের উদারপন্থী কর্মীরা। আর ওদিকে তো ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রাইমারিতে জয় নিশ্চিত হতেই, এখন বাইডেনকে পরাজিত কিভাবে করা যায়, সেই বিষয়ের দিকেই জোর দিয়েছেন। বাইডেনকে অ্যাখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট বলে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্দরে এখন জোর টক্কর চলছে জো বাইডেন আর ট্রাম্পের মধ্যে।
দেখুন, বর্তমানে ট্রাম্পকে যেভাবে আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে, তাতে বাইডেনের উপর তার একটা রাগ থাকা স্বাভাবিক। তাই তিনি পুনঃনির্বাচিত হলে বাইডেন কে যে ছেড়ে দেবেন, এমনটা ভাবা ভুল। শুধু তাই নয়, বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য বিশেষ কৌঁসুলি নিয়োগ করবেন বলেও ইতিমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, বাইডেন বহু অপরাধ করেছেন। আর সেই সমস্ত অপরাধের বিচার একদিন হবে। যদিও বিষয়টা একেবারেই নতুন নয়। ট্রাম্প এবং তার রিপাবলিকান সমর্থকরা বহুদিন ধরেই বাইডেন এবং তার ছেলে হান্টার বাইডেনের ব্যবসায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে।
এমনি থেকেই বিশ্বজুড়ে নানান সংঘাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তার উপর বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় গুলো। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, বাইডেন কিন্তু এখনো পর্যন্ত চুপ। এই যে বিক্ষোভ হচ্ছে, শুধুমাত্র একটা কারণে। গাজায় ইসরায়েলের হামলার প্রতিবাদে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সাপোর্ট করে, তাই এমত পরিস্থিতিতে এখন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে চুপ করে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। তবে সম্প্রতি হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে হওয়া যুদ্ধ বিরতি নিয়ে বেশ আগ্রহী বাইডেন। হয়তো বা নিজের গদি বাঁচাতে, নিজের মুখ বাঁচাতে এমন প্রচেষ্টা করছেন বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তবে নিজের দেশের মধ্যে বিতর্কিত বিক্ষোভ নিয়ে এখনো তিনি কোনো কথা বলেননি। ধারণা করা হচ্ছে, বাইডেন হয়তো নির্বাচনী প্রচারে কোনো রকম জটিলতা দেখতে চান না। কারণ আগে ঘর, তারপর বাইরেটা সামলাতে চাইছেন বাইডেন। প্রেসিডেন্টের গদি এখন তার কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি।
এই যে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকশো আটকের ঘটনাও ঘটেছে, এই নিয়ে জনসম্মুখে বাইডেন কথা বলেছেন মাত্র একবার। তিনি ইহুদি বিরোধী এই বিক্ষোভের নিন্দা জানিয়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কিছু কর্মসূচিও নিয়েছেন। যারা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ঠিক কি ঘটেছে তা স্পষ্ট বুঝতে পারছে না, তাদের উদ্দেশেও নিন্দা জানান। আগামী নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখোমুখি হতে হবে ৮১ বছরের বাইডেনকে। এই যে দেশের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ চলছে, এই দুর্বল পয়েন্টটাকে কিন্তু টার্গেট করে রেখেছেন ট্রাম্প। সেই ১৯৬০-৭০ দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নিয়ে বিক্ষোভের পর এটাই অন্যতম একটা দীর্ঘস্থায়ী বিক্ষোভ। আর এখানেই রীতিমত বাইডেনকে ঠুকে দিয়ে ট্রাম্প বলেন, দেশে এত বড় ধরনের আন্দোলন চলছে, অথচ বাইডেন কোন কথাই বলছেন না। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, এই বিক্ষোভগুলো ধীরে ধীরে কোনঠাসা করে ফেলছে বাইডেনকে।
কারণ ২০২০ সালে থেকে বাইডেনকে ভোটের ক্ষেত্রে বেশি নির্ভর করতে হয়েছে তরুণ, মুসলিম আর আরব আমেরিকানদের উপর। কিন্তু নির্বাচনে এর মুখে তিনি ধাক্কা খাচ্ছেন ঠিক সেই পয়েন্টে। গাজায় হামলা শুরু হলে, যেভাবে শর্তহীনভাবে তিনি ইসরায়েলকে সাপোর্ট করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই কম সমালোচিত হচ্ছেন না। তাঁকে বিক্ষোভকারীরা দেগে দিয়েছে ‘গণহত্যাকারী জো’ বলে। কূটনৈতিক মহলের দাবি, হয়তো বাইডেনের হাত থেকে এখনো সবকিছু বেরিয়ে যায়নি। তিনি এখনো চাইলে তরুণ ভোটারদের মন জয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে অন্যতম একটা পথ, হামাস আর ইসরায়েলের মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি আর জিম্মিদের মুক্তি। এই কাজে বাইডেন যদি সাহায্য করেন, তাহলে কিন্তু বিক্ষোভ যেমন কমবে, স্থিতিশীলতাও ফিরবে। বাইডেনের উপর কমবে যুব সমাজের ক্ষোভ। তবে বাইডেন যে যুদ্ধ বিরতির চেষ্টা চালাচ্ছেন না, এমনটাও নয়। ইতিমধ্যেই ইসরায়েল সফরে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতিতে হামাসকে অবশ্যই হ্যাঁ বলতে হবে, কারণ এটা ভীষণ দরকার। আর যুদ্ধবিরতি না হলে বুঝতেই তো পারছেন, অস্থিরতার আগুন হুহু করে ছড়িয়ে পড়বে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। যার এফেক্ট ডিরেক্ট গিয়ে পড়তে পারে বাইডেনের পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্নে।
প্রসঙ্গত বলে রাখি, বাইডেনের মতো ডোনাল্ড ট্রাম্পও কিন্তু ইসরায়েলের কট্টর সমর্থক। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলকে কড়া ভাষায় সমালোচনা করতে ছাড়েননি। রাগ তো এমনি থেকেই ছিল। কারণ যখন বাইডেন প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তখন ইসরায়েল শুভেচ্ছা জানালে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন ট্রাম্প। তারপর নেতানিয়াহু আর ট্রাম্পের সম্পর্কে সামান্য হলেও একটু চির ধরেছিল। এমনটাই মনে করছিল সমালোচক মহল। হামাস হামলা সম্পর্কে ট্রাম্প বোমা ফাটানোর মতো বলেন, নেতানিয়াহুর ঘড়ি ধরেই নাকি হয়েছে হামাসের হামলা। ৭ই অক্টোবর হামাস হামলার বিষয়টা নাকি নেতানিয়াহুর নজরে ছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ট্রাম্প একাধিকবার এই যুদ্ধ শেষ করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় ইসরায়েলি নীতির সমালোচনা করেছেন। তবে হ্যাঁ, তিনি ইসরায়েলের পাশেই আছেন। এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, যদি দ্বিতীয়বার নির্বাচন হন তাহলে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সংঘাতে তিনি ইসরায়েলের পাশেই থাকবেন। তবে ইসরাইলের পাশে শান্তিপূর্ণভাবে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। একটা সময় নাকি যখন ছিল, তিনি ভেবেছিলেন দুই রাষ্ট্র কাজ করতে পারে। এখন তিনি মনে করেন দ্বি রাষ্ট্র খুব খুব কঠিন একটা ব্যাপার হতে চলেছে। ট্রাম্পের দাবি, তিনি যদি ক্ষমতায় থাকতেন তাহলে ৭ অক্টোবর ইজরায়েলের উপর হামাসের হামলা ঘটত না। উপরন্তু ইসরায়েলের ইন্টেলিজেন্স এবং অপারেশনাল ব্যর্থতার জন্য তীব্র সমালোচনা করেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এও বলতে শোনা গিয়েছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং বিদেশে ইহুদী বিদ্বেষ বাড়ার।কারণেই নাকি ইসরায়েল হামাসের হামলার পাল্টা জবাব দিয়েছে। গাজায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চলছে, সে বিষয়ে সমালোচনা করে বলেন, ইসরায়েলের এই পদক্ষেপ একটা বড় ভুল। কারণ গাজার বিভিন্ন বিল্ডিংয়ে বোমা হামলার যে দৃশ্য প্রচারিত হচ্ছে, সেগুলো অত্যন্ত ভয়ংকর। বিশ্বের কাছে এই চিত্র অত্যন্ত ভয়াবহ। এই সামরিক অভিযানের ছবিগুলো তৈরি করছে ইসরায়েল বিরোধী এবং ইহুদি বিরোধী মনোভাব। তবে আপাতত পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে না, আগামীতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্ট কে হতে চলেছেন। কারণ, যেকোনো মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে পাশা। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, হামাস আর ইসরায়েলের যুদ্ধ থামলে আস্থা ফিরে পেতে পারেন জো বাইডেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম