।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran and Israel Power: ইরান আর ইসরায়েলের যুদ্ধ বাঁধল বলে। জিতবে কে? পরমাণু শক্তিতেই ইরানকে মাত দেবে না তো ইসরায়েল? শক্তিশালী হয়েও তাহলে কি হার মানবে ইরান? কলকাঠি নাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র। যে কোনো মুহূর্তে বদলা নেবেন বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। আসল মাস্টার প্ল্যানটা ঠিক কী? আর একটা ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হবে না তো? উড়বে ইরানের শান্তির ঘুম।
যুদ্ধ মানেই তো ক্ষমতা প্রদর্শনের লড়াই। একে অপরের উপর অধিকার কায়েম করার লড়াই। সেখানে কে কত শক্তিশালী, এটা একটা বিগ ফ্যাক্টর। ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, ইরান নাকি ইসরায়েল, সামরিক শক্তিতে কে কতটা এগিয়ে? কার ভাঁড়ারে কত অস্ত্র রয়েছে? যে কোনো মুহূর্তে তো যুদ্ধ বেঁধে যেতেই পারে বলে মনে করছে কূটনৈতিক মহল। তাই তো মধ্যপ্রাচ্যসহ গোটা বিশ্বের নজর ইরান আর ইসরায়েলের পরিস্থিতির দিকে। শুধু তাই নয়, উদ্বিগ্নও বটে। ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণের পর কিন্তু ইসরায়েল ছেড়ে কথা বলেনি। এখনো পর্যন্ত গাজার উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। যতক্ষণ না সমূলে হামাস নির্মূল করতে পারছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই হামলা জারি রাখবে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু । সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইরান আর ইসরায়েলের সংঘাত ছোটখাট ব্যাপার হবে না।
গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার পরিসংখ্যান বলছে, ইরান সামরিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে ইসরাইলের থেকে প্রায় তিন ধাপ এগিয়ে। দুটি দেশই রয়েছে বিশ্বের সামরিক শক্তিধর দেশের শীর্ষ কুড়িটি দেশের মধ্যে। বুঝতেই পারছেন, দুটো দেশ কেউ কারোর থেকে কম নয়। যদি র্যাংকিং এর কথা বলি, তাহলে ইসরায়েলের অবস্থান ১৭, আর ইরানের অবস্থান ১৪। এবার আসা যাক সোজাসুজি একটা রিপোর্ট কার্ডে। ইরানের ভাঁড়ারে থাকা হেলিকপ্টারের সংখ্যা ১২৯ টি, আর ইসরায়েলের আছে ১৪৬টি। ইসরায়েলের অ্যাটাক হেলিকপ্টার রয়েছে ৪৮ টি, আর ইরানের ১৩ টি। এক্ষেত্রে আবার ইরানের চেয়ে শক্তিশালী ইসরায়েল। যদি ট্যাংক আর সাঁজোয়া যানের কথা বলি, তাহলে এগিয়ে ইরান। তেহরানের কাছে আছে ১৯৯৬ টি ট্যাংক, ইসরায়েলের কাছে আছে ১৩৭০টি ট্যাংক। ইরানের কাছে সাঁজোয়া যান আছে ৬৫ হাজারের বেশি, আর ইসরায়েলের কাছে আছে ৪৩ হাজারের বেশি। নৌশক্তির ক্ষেত্রেও এগিয়ে আছে ইরান। রয়েছে ১০১ টি যুদ্ধ জাহাজ, যার মধ্যে ৭টি ফ্রিগেট আর ২১টি টহল জাহাজ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে, ইসরায়েলের কাছে যুদ্ধ জাহাজের সংখ্যা ৪৭ টি। ঝুলিতে কোনো ফ্রিগেট নেই। শুধু তাই নয়, সাবমেরিনের ক্ষেত্রেও এগিয়ে ইরান। ইসরায়েলের কাছে সাবমেরিন মাত্র পাঁচটা। ইরানের কাছে সাবমেরিন আছে ১৯টি। যেখানে ইসরায়েলের সৈন্য সংখ্যা ৬ লক্ষ ৭০ হাজার, সেখানে ইরানের নিয়মিত সৈন্য সংখ্যা ১১ লক্ষ ৮০ হাজার। ইসরায়েলের রিজার্ভ সেনা আছে ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার। ইরানের রিজার্ভ সৈন্য সংখ্যা আবার সাড়ে ৩ লক্ষ। যুদ্ধ বিমানের ক্ষেত্রে এগিয়ে ইসরায়েল, আছে ৬১২টি যুদ্ধবিমান। ওদিকে ইরানের মোট সামরিক বিমানের সংখ্যা ৫৫১ টি। এতক্ষণে এই তথ্যগুলো শুনতে শুনতে আপনার মনে একটা প্রশ্ন নিশ্চয়ই এসেছে, পারমাণবিক শক্তির ক্ষেত্রে কে বেশি শক্তিশালী? এই বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্র যার হাতে আছে তাকেই তো বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউট এর সর্বশেষ তথ্য বলছে, বিশ্বের আপাতত ৯ টা দেশের কাছে প্রায় ১২হাজারের বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। সেই দেশের তালিকায় কিন্তু ইরান নেই, রয়েছে ইসরায়েল। বাকি ৮ টা দেশ হল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, ভারত, পাকিস্তান আর উত্তর কোরিয়া।
তবে হ্যাঁ, এটা কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে বলছি। তা বলে এই নয় যে ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র থাকার সম্ভবনা নেই। থাকলেও থাকতে পারে। কারণ বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন লাগাতার ভাবে দাবী করছে, ইরানের কাছে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। যেহেতু ইরানের কাছে ইউরেনিয়াম মজুদ রয়েছে, সেই ইউরিনিয়াম দিয়ে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে। ইরানও কখনো সোজাসুজি বলেনি তাদের কাছে পরমাণু অস্ত্র নেই। বরং বলেছে, তাদের পরমাণু কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে জারি রয়েছে। যদি ইরানের কাছে সত্যিই পরমাণু অস্ত্র থাকে, যুদ্ধের সময় তা ব্যবহার করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় কথা কি বলুন তো, কে কত অস্ত্রে শক্তিধর সেটা ইম্পরট্যান্ট নয়। কারণ একবার যুদ্ধ বাঁধলে আশপাশ থেকে বহু দেশ সাহায্য করতে চলে আসবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ তার বড় প্রমাণ। আচ্ছা, এই ইরান আর ইসরায়েলের দ্বন্দ্বে কোনো ভাবে কি যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়ে পড়তে পারে? উপসাগরীয় আরব অঞ্চলের ছটি দেশে কিন্তু মার্কিন সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। সিরিয়া ইরাক এবং জর্ডানেও রয়েছে সামরিক ঘাঁটি। যে কোনো মুহূর্তে মার্কিন এই ঘাঁটিগুলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের নিশানায় পরিণত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের উপর রাগ মেটাতে ইরাক একবার ফোঁস করলেই বেজে যাবে যুদ্ধের দামামা।
https://youtu.be/FKGDBsEtRTA?si=0Fvu_ds9R7KLbj85
যুদ্ধ কখনই কাম্য নয়। যুদ্ধ মানেই তো প্রাণহানি। মানবতার অধঃপতন। তাই তো গোটা বিশ্ব ইরান আর ইসরায়েলের সংঘাত নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন। কিন্তু যদি যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে তার পরিণতি কোন দিকে এগোবে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরটাও অপেক্ষা করছে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়ার উপর। ইরানের হামলার পর ইসরায়েল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এই হামলার যথাযথ জবাব দেবে। অন্যদিকে ইরানের মনোভাব অনেকটা শোধবোধের মতো। তোমরা আমাদের উপর হামলা করেছ, আমরাও হামলা করেছি। ব্যাস এবার বিষয়টা শেষ করো। ইরানের হামলার পর দেশটার সাধারণ মানুষ কিন্তু বেশ খুশি। কেউ কেউ বা রাস্তায় নেমে আনন্দ উদযাপন করছে। আর এই সবটা নজর রেখেছে ইসরায়েল। হয়ত ইসরায়েল ভিতরে ভিতরে নিজেকে আরও বেশি শক্তিশালী করে ইরানের উপর হামলা চালানোর প্ল্যান কষছে। রীতিমত কড়া জবাব দেওয়ার অঙ্গীকারও করেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু দেশটার ইতিহাসের সবচেয়ে কট্টরপন্থী সরকার বলে মনে করা হয়। যেভাবে হামাসের জবাব দিচ্ছে, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ইরানকে ছেড়ে দেবে বলে মনে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটা আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই মুহূর্তে ইজরায়েল হয়তো কৌশলগত ধৈর্য প্রদর্শন করবে অর্থাৎ সরাসরি ইরানের বিরুদ্ধে কোন পাল্টা হামলা না চালিয়ে ওই অঞ্চলে ইরানের শরিক দেশগুলোর উপর অভিযান চালাবে। যার মধ্যে রয়েছে লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী কিংবা সিরিয়ায় থাকা ইরানের সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার কেন্দ্রগুলো। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েল দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ইরানের মিসাইল বেস গুলোর উপর অ্যাটাক করতে পারে। আর সর্বশেষ মারাত্মক আশঙ্কা হল, ইরানের শুধুমাত্র মিসাইল বেস নয়, বরং ইরানের যত শক্তিশালী রিভোলিউশনারি গার্ডসের ঘাঁটি রয়েছে কিংবা প্রশিক্ষণ শিবির রয়েছে সেগুলো হবে ইসরায়েলের মেইন টার্গেট। আপাতত সবটাই নির্ভর করছে ইসরায়েলের উপর।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম