।। প্রথম কলকাতা ।।
La Rinconada: একটা শহর, যেখানে সোনা দিয়েই শুরু হয় দিন, সোনাতেই শেষ হয় রাত। সোনার গদিতে ঘুমায় মানুষ! বেঁচে থাকেও কি সোনা খেয়েই? কাদা চ্যাটচ্যাটে মহাকাশের এতো কাছের এই শহর কিন্তু একদম শূণ্য।কিচ্ছু নেই। তবুও এই শহরের মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে চায় মানুষ।।লাইফস্টাইলে রয়েছে অদ্ভুত এক রহস্য। পাহাড়ের ভেতর সুড়ঙ্গ কেটে তৈরি রাস্তায় মুঠো মুঠো সোনা। কিন্তু কিভাবে এলো এত সোনা? কেন কেউ ছুঁয়েও দেখেনা? সূর্যের ঘামের এতো দাম? ভুলেও মোহোয় জড়াবেন না, ঠিকানাটা মনে রাখুন।
মহাকাশের সবচেয়ে কাছের, পৃথিবীর সর্বোচ্চ শহর সোনালি আভায় মোড়ানো, লা রিনকোনাডা। পুরো শহরটাই যেন মেঘের উপর ভাসছে। কিন্তু এই রোমাঞ্চকর শহরে টিকে থাকা ভাবনার খুব কঠিন।তারপরেও লা রিনকোনাডার ম্যাগনেটিক পাওয়ার মানুষকে টেনে নেয় নিজের কাছে।এই শহরের হাজার হাজার মানুষ মাটি খুঁড়েই পায় বেঁচে থাকার রসদ। সাজানো সোনার ভাণ্ডার । বাকি কিছুই নেই এই শহরে। এখানের অক্সিজেন খুব কম। প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়া, হিমাঙ্কের কয়েক ডিগ্রি নীচে তাপমাত্রা। চারিদিকে ধূসর পাথর আর সাদা বরফ। সবুজের লেসমাত্র নেই। এমনকি নেই খাবার মতো বিশুদ্ধ জল সরবরাহ ব্যবস্থা। নেই পয়োঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, পুরো শহরে নেই কোনও পাবলিক টয়লেট। ওখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দা যে লেক থেকে জল নেয়, সেটাও দূষিত। এই শহরের জলে ভেসে বেড়াচ্ছে পারদের মতো ক্ষতিকর ধাতু। বৃষ্টিও নিতান্ত কম হয় না, কাদায় মাখামাখি। এমন অস্বাস্থ্যকর জায়গায় শ্রমিকরা প্রায়ই শ্বাসকষ্ট আর ডায়রিয়ায় ভোগে। উচ্চতাজনিত সমস্যা, মাথা ব্যথা, মাথা ঘোরা, বমি-বমি ভাব, অনিদ্রা, মানসিক অবসাদ নিত্যসঙ্গী। কিন্তু, তারপরেও পেরু-বলিভিয়া সীমান্তের একদম কাছেই এই শহরে, প্রতিকূল পরিবেশে এতো এতো মানুষ থাকে। সংখ্যাটা প্রায় পঞ্চাশ হাজার। ভেবে দেখেছেন যেখানে
একটা হোটেল নেই, রেস্তোরাঁ নেই, শপিংমল নেই, হাসপাতাল, স্কুল, বাস স্টপ, রেল স্টেশন কিছুই নেই।শুধু তুষারভূমি জুড়ে গজিয়ে উঠেছে ছোট ছোট ঘরের পর ঘর। তারপরেও সূর্যের ঘাম, “স্বর্ণ”র টানে মানুষ লা রিনকোনাডায় ছুটে যায়। এখানে সবকিছুই আবর্তিত হয় সোনাকে ঘিরে। ভূতত্ত্ববিদদের মতে এখানে এখনো কয়েকশো কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সোনা রয়েছে। কিন্তু সেই সোনাকে হাতের মুঠোয় পাওয়া।সহজ কথা নয়।
এটা ঠিক যে এখানে অসংখ্য ছোট বড় সোনার খনি রয়েছে। যেমন পাহাড়ের গা থেকে কিংবা মাটি খুঁড়ে আকরিক সংগ্রহ করা হয়, তেমনই সুড়ঙ্গ কেটে পাহাড়ের ভেতরে ঢুকে সেখান থেকেও আকরিক সংগ্রহ করা হয়। যাকে বলা হয় “হার্ড রক মাইনিং”। তবে যে সোনার জন্য এতো এতো শ্রমিক ওখানে জড়ো হয়েছে সেটাও কিন্তু শহরে নয়। পাশের এক পর্বতে। সেখানে পৌঁছাতে শ্রমিকরা তাদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে সরু একটা পথ দিয়ে হেঁটে এক কিলোমিটার এর মতো পাড়ি দেয়। ওই খনি থেকে বছরে ১০০ ডলারেরও বেশি ধাতু উত্তোলিত হয়। এর মধ্যে থাকে সোনাও। এখানে স্বর্ণের সন্ধানে যুগের পর যুগ ধরে পাহাড়ের ভেতরে সুরঙ্গ কাটা হয়েছে। খনির ভেতর হাঁসফাঁস গরম, ডিনামাইট বিস্ফোরণের ধুলো, কখনও বিষাক্ত গ্যাস আর খুব কম আলো। তার মাঝেই শ্রমিকরা এখানে কাজ করে যাচ্ছে। তবে , এই শ্রমিকদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় স্প্যানিশ আমলে চালু হওয়া কাচোরিও পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতির আওতায় শ্রমিকরা ৩০ দিন বিনা বেতনে খনিতে কাজ করে। ৩১ তম দিনে তাদেরকে চার ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময়ের একটা সুযোগ দেওয়া হয়। মানে ওই দিন শ্রমিকরা খনি থেকে যে যা উত্তোলন করবে, তা সবই তাদের।।যত খুশি তত আকরিক খনি সেদিন তাদের নিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকে। তবে, যত খুশি তত বলা হলেও সুযোগটা তারা পান মাত্র একবার এবং বস্তা বহনের জন্য কোনো যানবাহন ব্যবহার করতে পারেন না, অর্থাৎ শারীরিক শ্রমে যতটুকু নেওয়া যায় ততটুকুই। তাও এই লটারি পদ্ধতিতে ভরসা রাখে ওখানকার মানুষ। পেরু সরকার এই সিস্টেমটা পরিবর্তন করতে চেয়েছিল কিন্তু শ্রমিকরাই তাতে বাধা দিয়েছে। কারণ, এই পদ্ধতিতে যে সোনা চোরাচালানেরও একটা সুযোগ থাকে।
এ তো গেল পুরুষদের কথা। লা রিনকোনাডায় বেশ কিছু মহিলা ঘুরে ঘুরে সোনা খুঁজে বেড়ায়। তাদের বলা হয় পাল্লাকুয়েরাস। তবে এদের খনির ভেতরে ঢোকার অনুমতি নেই। ওখানকার বিশ্বাস, মেয়েরা খনিতে ঢুকলে অমঙ্গল হয়। খনি থেকে উত্তোলিত পাথর থেকে সোনাসহ বিভিন্ন ধাতু আলাদা করে ফেলার পর সেগুলো খনির বাইরে ফেলে দেওয়া হয়। এরা সেই ফেলে দেওয়া পাথরের স্তূপ ঘেঁটে বেড়ায়, তাতে কোনো সোনা বা দামি ধাতু পাওয়া যায় কি না। ওখানে প্রায় ৭০০ পাল্লাকুয়েরাস আছে, যারা খনিতে কাজ করতে যাওয়া শ্রমিকদের স্ত্রী। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার ১০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত লা রিনকোনাডা এমনই অদ্ভুত।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম