।। প্রথম কলকাতা ।।
কাঁদলেন, কাঁদালেন! চোখের জলেই বিশ্বকাপকে বিদায় জানালেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। সেই সঙ্গে কাঁদিয়ে দিয়ে গেলেন একটা প্রজন্মকে। একটা আস্ত প্রজন্ম আর দেখতে পাবে না মেসি বনাম রোনাল্ডোর ডুয়েল। অতি বড় মেসি ভক্তও বোধহয় দেখতে চাননি রোনাল্ডোর এমন দৃশ্য। বিশ্বকাপের আগে তাঁকে নিয়ে কত হইচই, কত বিতর্ক। সব যেন স্তব্ধ হয়ে গেল এক নিমেষে। বিশ্বকাপটাই যে শেষ হয়ে গেলো পর্তুগিজ সুপারস্টারের। ৪১ বছর বয়সে রোনাল্ডো যে মেক্সিকোতে ফিরবেন, এটা তিনি কেন অতিবড় রোনাল্ডো ভক্তও বিশ্বাস করেননা । তাই বিশ্বকাপের মঞ্চে শেষবার রোনাল্ডোকে দেখে নিল বিশ্বফুটবল। বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে চোখে জল নিয়ে মাঠ ছাড়লেন রোনাল্ডো।
বয়স ৩৭ হলেও, মনের অদম্য জেদ আর ইচ্ছাশক্তির জোরে শেষ বিশ্বকাপটা রাঙিয়ে দিয়ে যাবেন রোনাল্ডো, এমনটাই আশা করেছিল তাঁর ভক্তরা। রোনাল্ডোও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নিজের শেষ বিশ্বকাপটা আপন রঙে রাঙাবেন। আর এর জন্য তিনি নিজেকে ভালোভাবে প্রস্তুত করে এসেছেন বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। দু চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে কাতারে পা রেখেছিলেন রোনাল্ডো। প্রিয় তারকার প্রতিশ্রুতির পরেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে রোনাল্ডোর অনুরাগীরা। রোনাল্ডোরও যে স্বপ্ন ছিল পায়ের বুট জোড়া তুলে রাখার আগে একটা বিশ্বকাপ জিতবেন! কিন্তু সব যেন ওলট-পালট হয়ে গেল। এক নিমেষে শেষ হয়ে গেল রোনাল্ডোর বিশ্বজয়ের স্বপ্ন। সবুজ ঘাসে মুখে হাত ঢেকে বসে পড়লেন। চোখ দিয়ে গড়িয়ে অবিরত অশ্রুধারা। যেন একটা অধ্যায় শেষ হয়ে গেল।
খেলায় যে বয়সের ছাপ পড়েছে তা স্পষ্ট। গোলের খিদে নিয়ে মরিয়া চেষ্টা করলেও পেলেননা গোল। যিনি ৩৫ গজ দূর থেকেও ফ্রি-কিকে অবলীলায় গোল করতেন। চোখের নিমেষে ক্ষিপ্র গতিতে বিপক্ষ রক্ষণ ভেঙে চোখ ধাঁধানো গোলে মাতিয়ে দিতেন। অনেক উঁচুতে লাফিয়ে জোরালো হেডে ফাঁকি দিতেন গোলরক্ষককে। কিন্তু কোথায় সেই রোনাল্ডো। ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপে আলোয় রাঙাতে পারলেন পর্তুগালের প্রাণভোমরা। ইউসেবিও বিশ্বকাপ আনার দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন ফিগোর কাঁধে। তিনি পারেননি। ফিগো দায়িত্ব দিয়েছিলেন রোনাল্ডোকে। তিনিও পারলেন না লিসবনে বিশ্বকাপ নিয়ে যেতে। পর্তুগালের সোনালী প্রজন্মের শেষ সদস্যও বিদায় নিলেন বিশ্বকাপ থেকে।
তিনি একটু জেদি, মনের কথা চেপে রাখার মানুষ তিনি নন। যতবার তাঁর সঙ্গে খারাপ হয়েছে ততবার গর্জে উঠেছেন। হবে নাই বা কেন? এই সব যে তাকেই মানায়। তিনিই তো প্রমান করেছিলেন ভাগ্য নয়, পরিশ্রম করে ছিনিয়ে নিতে হয় ভাগ্য। বিশ্বফুটবলকে দেখিয়ে গেছেন তিনি রেকর্ডের পিছনে নয়, রেকর্ড পিছনে তাঁর পিছনে ছোটে। ম্যাজিক নয়, শক্তি দিয়েই এক নিমেষে ভাঙতেন বিপক্ষের জমাট রক্ষণ। দেশের জন্য, ফুটবলের জন্য তিনি কম কিছু করেননি। ২০১৬ ইউরো কাপ, ২০১৯ নেশন্স লিগ দিয়েছেন দেশকে। তবে জীবন যেমন মাধুর্যময় তেমন নিষ্ঠুরও। মহারাজকীয় মেজাজে যাত্রা শেষ করার বদলে পেলেন চোখের জলে সাধের রঙ্গমঞ্চ থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার স্বাদ।
প্রতিটা বড় সাফল্যের পেছনে থাকে নিদারুণ কোনো ব্যর্থতা। বিদায় বেলায় সেটাই সঙ্গী হলো পর্তুগিজ মহাতারকার। প্রায় এক দশক ধরে বিশ্বফুটবলে রাজ করে গেছেন মেসি আর রোনাল্ডো। তাঁদের সময়কালে টেক্কা দেওয়ার মতো কোন তারকার উদ্ভব হয়নি। দুঃখ না থাকলে যেমন সুখের মর্ম বোঝা যায় না। তেমনি রোনাল্ডো না থাকলে মেসির মর্ম বুঝতে পারতেন না ফুটবলপ্রেমীরা। অনেকেই বলবেন রোনাল্ডোর শেষটা এইভাবে না হলেও পারত। একটা গোটা প্রজন্মকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।