।। প্রথম কলকাতা ।।
সুইংয়ের সুলতান হিসেবে পরিচিত পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও ফাস্ট বোলার ওয়াসিম আকরাম। একটা সময় তার দাপটে কাঁপত তাবড় তাবড় ব্যাটাররা। বিশ্ব ক্রিকেটে অন্যতম সেরা বাঁ-হাতি পেসার হিসেবে গণ্য করা হত। সেই ওয়াসিম আকরাম কিনা অবসরের পর মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। নিজের আত্মজীবনীতে এমনটাই জানিয়েছেন আকরাম স্বয়ং।
শিগগিরই প্রকাশিত হতে যাওয়া তার নতুন আত্মজীবনী ‘সুলতান এ মেময়র’-এ তিনি এই তথ্য জানিয়েছেন। আত্মজীবনী প্রকাশিত হওয়ার আগে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আকরাম বলেন ২০০৩ সালে সারা বিশ্বে টেলিভিশন বিশেষজ্ঞ হিসাবে কাজ করার সময় কোকেন ব্যবহার শুরু করেছিলেন। মাদকাসক্ত হওয়ার পর তাঁর জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। আক্রমের প্রথম স্ত্রী হুমা ২০০৯ সালে বিরল ফাংগাল ইনফেকশনে মারা হওয়ার পর তিনি এই নেশা পরিত্যাগ করেন।
৫৬ বছর বয়সী পাক কিংবদন্তি বলেছেন, “দক্ষিণ এশিয়ার খ্যাতির সংস্কৃতি সবই গ্রাসকারী, প্রলোভনসঙ্কুল এবং কলুষিত। আপনি এক রাতে ১০টি পার্টিতে যেতে পারেন, এবং কেউ কেউ যানও। এবং এটি আমার উপর প্রভাব ফেলেছিল। হুমার শেষ নিঃস্বার্থ, অচেতন কাজটি আমাকে আমার ড্রাগ সমস্যা থেকে নিরাময় করেছিল। জীবনের সেই পথটি শেষ হয়ে গেছে, এবং আমি কখনই আর পিছনে ফিরে তাকাইনি।”
পাকিস্তানের বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য আকরাম জানান তিনি প্রথমে তার জীবনের এই অংশটি প্রথম স্ত্রী হুমার কাছ থেকে গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি বলেন, “ইংল্যান্ডের একটি পার্টিতে যখন আমাকে একটি কোকেন সেবনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তখন এটি যথেষ্ট নির্দোষভাবে শুরু হয়েছিলাম, আমার ব্যবহার ক্রমাগতভাবে আরও গুরুতর হয়ে উঠতে থাকে, এই পর্যায়ে আমি অনুভব করেছি যে এটি কাজ করার জন্য আমার প্রয়োজন। এরপরই ঘুমাতে পারতাম না। খেতে পারতাম না। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।”
এই অন্ধকার জীবন থেকে কিভাবে বেড়িয়ে এসেছিলেন তাও জানিয়েছেন সুইং সুলতান। “একটা সময় প্রথম স্ত্রী হুমার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় কোকেনের জন্যই। মানিব্যাগে কোকেনের প্যাকেড পেয়ে যায় হুমা। কোকেন পাওয়ার পর হুমা আমায় সাহায্য করতেও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু ২০০৯ সালে হুমার মৃত্যু আমায় নাড়িয়ে দেয়। এবং ধীরে ধীরে কোকেন পরিত্যাগ করি।”
অন্ধকার জীবনের আগে বিশ্ব ক্রিকেটে রাজ করেছেন পাক কিংবদন্তি। বিপক্ষ ব্যাটারদের উপর ত্রাস সৃষ্টি করতেন। পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ছাড়াও, তিনি ১৯৯৯ সালের আইসিসি বিশ্বকাপের ফাইনালে তার দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশ্ব ক্রিকেটে তাকে সর্বোত্তম বাম-হাতি ফাস্ট বোলার হিসাবে গণ্য করা হয়। আকরাম ১০৪ টেস্টে পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, ৪১৪ উইকেট নেওয়া, যা একজন পাকিস্তানি বোলারের জন্য সর্বোচ্চ। ৩৫৬টি ওয়ানডেতে ৫০২ উইকেটও নিয়েছেন তিনি। ২০০৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ২২ গজকে বিদায় জানান এই পাক কিংবদন্তি। অবসরের পর ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হিসেবে সুপরিচিত ওয়াসিম আকরাম। বিভিন্ন জায়গায় টিভি বিশেষজ্ঞ হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি। ২০১০ সাল থেকে ভারতের জনপ্রিয় ক্রিকেট লিগ আইপিএলে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বোলিং কোচের দায়িত্ব সামলেছেন।