।। প্রথম কলকাতা ।।
চাঁদে বড় লাফ ভারতের। ভূরাজনীতি থেকে চান্দ্র অর্থনীতি, ভারতের শেকড়-বাকড় ছড়িয়ে যাচ্ছে। চাঁদে হিলিয়াম ভান্ডার থেকে রিয়েল এস্টেট এর ব্যবসা, ভারতের উইশলিস্টে আর কী কী? ‘লুনার ইকোনমি’ আসলে কী? চাঁদেও পথ দেখাচ্ছে ভারত। জানেন, কেন চাঁদের প্রতি অমোঘ আকর্ষণ সবকটা দেশের? চাঁদে অবতরণ ভারতকে ভূরাজনীতিতে কী সুবিধা দিতে পারে?আসলেই, ভারতের মুন ল্যান্ডিং একটি বিরাট জিওপলিটিক্যাল স্টেপ। এটা মানতে হবে, মানছে গোটা বিশ্ব। দেশগুলোর মধ্যে চাঁদের দক্ষিণ মেরুকে ঘিরে যে নতুন ‘স্পেস রেস’ চলছে তাতে ফার্স্ট অ্যাচিভার’ হিসেবে ভারত অবশ্যই কিছু অ্যাডভান্টেজ পাবে মত বিশেষজ্ঞদের। কিন্তু ভারতের এই সাফল্য লুনার ইকোনোমি বা চান্দ্র অর্থনীতিতে কতটা এফেক্ট ফেলবে? লুনার ইকোনোমি বা কী?
চাঁদের বুকে যত ধরনের সম্পদ আছে, চাঁদের বুকে, পৃথিবীতে ও চাঁদের কক্ষপথে তার সফল ব্যবহারই এই অর্থনীতির সূচক। যেমন চাঁদে হিলিয়ামের একটি আইসোটোপ হিলিয়াম-থ্রির বিরাট ভান্ডার আছে, যা পুনর্নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিপুল উৎস হয়ে উঠতেই পারে। চান্স আছে কিন্তু সেই হিলিয়াম-থ্রিকে কীভাবে পৃথিবীর উপকারে কাজে লাগানো যায়, সেটাই লুনার ইকোনমির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এমন কী, চাঁদের বুকে ‘রিয়েল এস্টেট’ বা জমিজমা নিয়েও একদিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। যদি কোনও দিন সত্যিই তা হয়, তাহলে দক্ষিণ মেরুতে ‘ফার্স্ট মুভার’ হিসেবে ভারতের যে অবশ্যই একটা শক্ত দাবি থাকবে অনেক বিশেষজ্ঞই সে কথা মেনে নিচ্ছেন, কিন্তু চাঁদকে ঘিরে যে আন্তর্জাতিক রাজনীতি শুরু হয়েছে, তার নেপথ্যে কোন কারণ লুকিয়ে?
আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হল চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চল, যেখানে বিজ্ঞানীরা জল বা বরফের অস্তিত্ত্ব আছে বলে প্রমাণ পেয়েছেন। ভাবতে অবাক লাগলেও, এটা বাস্তব। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সত্যিই জল পাওয়া গেলে তা রকেটের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে। এমন কী, পর্যাপ্ত জলের জোগান নিশ্চিত হলে চাঁদের বুকে একটি স্থায়ী স্টেশন বা পার্মানেন্ট বেস, কিংবা মঙ্গলগ্রহ বা আরও দূরে অভিযান চালানোর জন্য লঞ্চপ্যাডও তৈরি করা যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। ওখানে জল পাওয়া গেলে ভবিষ্যতের মহাকাশচারী ও স্পেসক্র্যাফটগুলোরও খুবই কাজে আসবে কিন্তু ওই এলাকায় যদি চীন প্রথম তাদের কোনও মহাকাশচারীকে নামাতে পারে, তারা চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের ওপর নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
মনে করিয়ে দিই এই ধরনের প্রতিযোগিতা যখন তখন শুরু হতে পারে। এটা আশঙ্কা করেই যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালে ‘আর্মেটিস অ্যাকর্ডসে’ এনেছিল, যে চুক্তিতে শরিক দেশগুলো মহাকাশচর্চার ক্ষেত্রে অভিন্ন নীতি ও সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হয়েছে। পৃথিবীর বহু দেশই এই সমঝোতায় সামিল হয়েছে। গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ভারতও এই অ্যাকর্ডে সই করেছে। কিন্তু চীন-রাশিয়ার মতো দুটো বড় ‘স্পেস পাওয়ার’ এখনও এই সমঝোতার শরিক হয়নি তবে এই পটভূমিতেও ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান-থ্রির সাফল্য ভারতকে ‘পোল পোজিশনে’ নিয়ে আসবে। আন্তর্জাতিক দৌড়ে এগিয়ে রাখবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মিলিয়ে নেবেন মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই ভারতের স্পেস সেক্টর বা মহাকাশ খাত এক ট্রিলিয়ন মানে এক লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হবে। ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং এর এই পূর্বাভাস অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাবে বলেই আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা। চন্দ্রযান-থ্রির অভূতপূর্ব সাফল্যের পর ভারতের পক্ষে এটা মোটেই অসম্ভব নয়। এই সাফল্য ভারতের তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশকে মহাকাশচর্চায় উৎসাহিত করবে, যারা এটাকে পেশা হিসেবেও নিতে চাইবেন। তবে আরও প্রিপেয়ার হতে হবে ভারতকে। চন্দ্রযানের এই অর্জনের ভিত্তিতে ভারতকে এখন ‘লুনার জিওপলিটিক্স’ বা ‘চান্দ্রেয় ভূরাজনীতি’র জন্যও নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। তাহলে অচিরেই চাঁদেও পথপ্রদর্শক হয়ে উঠবে ভারত। ভারত এখন কোথায়? বুঝিয়ে দিই। যখন, বিশ্বের বহু দেশ মহাকাশচর্চার বিভিন্ন মাইলফলক স্পর্শ করার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে, বিপুল পরিমাণ টাকা ইনভেস্ট করছে। বিশেষ করে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অভিযান চালানোর জন্য রাশিয়া, চীন বা আমেরিকা, প্রত্যেকেই জান লড়িয়ে দিচ্ছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভারতের এই নজিরবিহীন সাফল্য তাদের জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলে দিচ্ছে। এটাই ভারতবর্ষ।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম