।। প্রথম কলকাতা ।।
যেখানে না গেলে তিলোত্তমাকে চেনা বাকি থেকে যায়।
নিউ জেনারেশন এর কাছে কলকাতার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রিন্সেপ ঘাট। কিন্তু প্রিন্সেপ কেন? মানুষটি কে, কেনই বা তাঁর নামে এত বড় একটা স্মৃতি সৌধ? ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে কোন অজানা ইতিহাস? রোমান্টিক ডেট থেকে শুরু করে গঙ্গার ধারে বসে মন ভালো করার ঠিকানা। হুগলী নদীকে ছুঁয়ে দেখার সুযোগ, প্যালাডিয়াম পোর্চের গায়ে হাত দিয়ে মুঠোফোনের গ্যালারি ভরিয়ে তোলা। ভোজনরসিকদের জন্যেও সপ্তাহান্তের পারফেক্ট ডেস্টিনেশন।
প্রিন্সেপ ঘাটের নেপথ্যে রয়েছে কাহিনি-কিংবন্তি-ইতিহাস।
শহর কলকাতা তার রূপ ,গুণ সৌন্দর্যতা ঢেলে দিয়েছে এখানে। বিদ্যাসাগর সেতুর ঠিক পাশেই প্রিন্সেপ ঘাট। যে ঘাটটি ব্রিটিশ যুগে তৈরি হয়েছিল ১৮৪১ সালে। ঘাটের নান্দনিক প্যালাডিয়ান পোর্চটির নকশা করেন ডব্লিউ ফিজগেরাল্ড। কিন্তু যে মানুষটার নামে এত বড় একটা স্মৃতিসৌধ তার পেছনে লুকিয়ে রয়েছে কোন কাহিনী সেটা আজও কলকাতার অনেক মানুষের কাছে অজানা। সপ্তাহ আনতে অনেক মানুষ বেড়াতে আসেন এখানে। অনেক প্রেমের না বলা কথা লেখা আছে ঘাটের ইতিহাসের পাতায়। যারা খেতে ভালোবাসেন তাদের জন্য নদীর গা ঘেঁষে রাস্তার ধারে খাবারের দোকান রয়েছে। ঘাটের কাছে রয়েছে চল্লিশ বছরের পুরনো আইসক্রিম ও ফাস্টফুড বিক্রির দোকান। পড়ন্ত বিকেলে হুগলী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকো বিহার এখানে ভীষণ পপুলার। হাত ধরাধরি করে যুগল প্রেমের কাহিনী লেখা হয় এই ঘাটের বুকে। কিন্তু তারপরেও প্রিন্সেপ ঘাটের প্রিন্সেপ অনেকের কাছেই অচেনা।
জেমস প্রিন্সেপ ভারতীয় প্রত্নতত্ত্বকে নতুন জীবন দিয়েছিলেন। সম্রাট অশোকের শিলালিপির পাঠোদ্ধার করেছিলেন তিনি। গ্রীক হরফ থেকে শুরু করে ব্রাহ্মীলিপি সবেতেই তাঁর দক্ষতা ছিল। তাঁর পরিশ্রমের ফলেই প্রাচীন ভারত, সম্রাট অশোক থেকে শুরু করে গৌতম বুদ্ধ সম্পর্কে জানা সম্ভব হয়েছে। মাত্র ২০ বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ড থেকে চাঁদপাল ঘাটে নেমেছিলেন। কলকাতার টাঁকশালে অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে মাস্টার মানে সহকারী ধাতু পরীক্ষক হিসেবে জয়েন করেছিলেন। তারপর তাকে নতুন টাঁকশাল খোলার জন্য কাশিতে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ফিরে এসে কলকাতার টাঁকশালে ফের জয়েন করেন ডেপুটি এসে মাস্টার হিসেবে। মুদ্রার প্রতি প্রিন্সেপের প্রবল আগ্রহ ছিল। কুষাণ আমলের মুদ্রার পাঠোদ্ধার, ছাপাঙ্কিত মুদ্রা সহ সমস্ত ভারতীয় স্থানীয় মুদ্রা, স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্রের মুদ্রা, গুপ্ত আমল ও অন্যান্য সময়ের মুদ্রার পাঠোদ্ধার করেন। গ্লেনিংস অব সায়েন্স নামে একটি সাময়িক পত্রিকা সম্পাদনা করেছিলেন তিনি!
যা পরবর্তীতে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটির মুখপাত্র হয়।
১৮৩২ থেকে ১৮৩৮ সাল পর্যন্ত তিনি এই এশিয়াটিক সোসাইটির সম্পাদক ছিলেন। পরিশ্রম করতে করতে প্রিন্সেপ একদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে তাঁর কাজের মাঝপথেই দেশে ফিরতে হয়। মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৮৪০ সালে ইংল্যান্ডেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর অধিকাংশ কাজই অসমাপ্ত থেকে যায়। জেমস প্রিন্সেপের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তদকালীন ব্রিটিশ বড়লাট লর্ড এডেনবরা ১৮৪১ সালে জেমস প্রিন্সেপের নামে গঙ্গার ধারে এই স্মৃতিসৌধ ও ঘাট তৈরি করেন। ডব্লিউ ফিৎজেরাল্ড পরিকল্পিত প্যালাডিয়ান ধাঁচের স্তম্ভটি এই ঘাটের সৌন্দর্য বহু গুণ বাড়িয়ে দিছে। ১৮৪৩ সালে জনসাধারণের জন্য এটি উন্মুক্ত করা হয়। তার পর থেকে একাধিক বার সংস্কার হয়েছে এই ঘাটের। এই ঘাটটি বিনোদন জগতের বিভিন্ন কাজেকর্মে ব্যবহৃত হয় আজও। বলিউড ছবি পরিণীতা’র ও একটা গানের শ্যুটিং হয়েছে এই ঘাটে।তাছাড়াও আরো কত ছবির কত দৃশ্য প্রিন্সেপ ঘাটের সঙ্গে জড়িয়ে ফটোশুট থেকে প্রি ওয়েডিং শ্যুট, সবদিক থেকেই পছন্দের তালিকার শীর্ষে প্রিন্সেপ ঘাট। ব্রিটিশ পিরিয়ডে সূচনা হওয়া এই প্রিন্সেপ ঘাটে ইতিহাস ও সৌন্দর্য ফ্রেমবন্দি হয় একসাথে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম