।। প্রথম কলকাতা ।।
Geeta Dutta’s Birthday: সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে খ্যাতি তাঁর কম ছিল না। শুধু বাঙালি নয়, তাঁর সুরেলা গলায় আজও মজে সঙ্গীতপ্রিয় সকল মানুষ। তবে সঙ্গীত দুনিয়ায় জনপ্রিয়তা পাওয়ার সঙ্গে দীর্ঘ অবসাদ, আর্থিক অনটনের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন। তাঁর রূপের সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে যেত তাঁর গান। বিখ্যাত সমস্ত সুরকারের সুরে গান গেয়েছেন তিনি। আজ সেই জনপ্রিয় গায়িকা গীতা দত্তের জন্মদিন।
১৯৫০-৬০-এর দশকে তাঁর গান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেই সময় সঙ্গীত জগতে একটি কথা খুব প্রচলিত ছিল, লতা কন্ঠী, আশা কন্ঠী হওয়া যায়, কিন্তু গীতা কন্ঠী হওয়া খুবই মুশকিল। শোনা যায়, সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ‘তুমি যে আমার’ গানটির জন্য বেছেছিলেন গীতাকে। তারপর বম্বে গিয়ে গানের রেকর্ডিং হয়। সাল ১৯৩০, ২৩ নভেম্বর অবিভক্ত বাংলার ফরিদপুর জেলায় ধনী জমিদারি পরিবারে জন্ম হয় গীতা ঘোষ রায়চৌধুরীর। বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঘোষ রায়চৌধুরী। ১০ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের ভিটেমাটি ছেড়ে আসতে হয় কলকাতায়। পরে তৎকালীন বম্বেতে চলে যান তাঁরা। কিন্তু ভিটেমাটি হারিয়ে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ার কারণে গানের টিউশন দিতে হতো গীতাকে। ১৯৪৬-এ সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কর্মজীবন শুরু হয় গীতার। পরিচালক হনুমান প্রসাদের ‘ভক্ত প্রহ্লাদ’ ছবির হাত ধরে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখেন তিনি। যদিও কোরাসে সেই সময় মাত্র দু’লাইনই গাইবার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু তাতেই বাজিমাত করে দিয়েছিলেন। এরপর শচীন দেব বর্মন তাঁর পরের ছবিতে তাঁকে দিয়ে ন’টি গান গাওয়ান।
বলতে গেলে সেটাই তাঁর প্রথম কাজ। এরপর রাতারাতি সঙ্গীত জগতের সেরা তিন গায়িকার মধ্যে নাম আসে তাঁর। তারপর আধুনিক রোম্যান্টিক গানে নাম করেন তিনি। ১৯৫১-তে ‘বাজি’ চলচ্চিত্র তাঁর জীবন ঘুরিয়ে রেখে দেয়। এর পর একে একে নানা ছবিতে গান গাওয়ার সুযোগ পান গীতা দত্ত। ১৯৫৩-তে বিখ্যাত চিত্র পরিচালক গুরু দত্তের সঙ্গে বিয়ের পর নাম হয় গীতা দত্ত। তরুণ, বরুণ এবং নীনা দত্ত তাঁর তিন সন্তান। পি নাইয়ারের সুরে সব ধরনের গানেই তিনি নিজের ছাপ রেখে গেছেন। ‘বাবুজি ধীরে চলনা’, ‘থান্ডি হাওয়া কালি ঘটা’, ‘না যাও সাঁইয়া ছুড়াকে বাঁইয়া’, ‘মেরা নাম চিন চিন চু’র মত একাধিক গান মানুষকে উপহার দিয়েছেন এই গায়িকা।
হিন্দি ছাড়াও গুজরাটি ছবিতে, বাংলা ছবিতে গান গেয়েছেন তিনি। তাঁর বেশিরভাগ বাংলা গানের সুরকার ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু এই জনপ্রিয়তার মাঝে তাঁর সংসার জীবনে ফাটল ধরে। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি শুরু হয়। সুরাশক্ত হয়ে পড়েন স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই। যার ফলে সেই জনপ্রিয়তা চলে যায় আশা-লতার কাছে। গুরু দত্ত মারা যাবার পর ফের সঙ্গীত জগতে ফিরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বম্বের ফিল্মি দুনিয়া সেই সুযোগ দেয় নি তাঁকে। অর্থের অনটন দূর করতে কলকাতার মঞ্চে অনুষ্ঠান করেছেন।
‘দূরের তুমি আজ কাছের তুমি হলে’, ‘নিঙারিয়া নীল শাড়ি’র মতো গান গেয়েও তার সঙ্গেই আড়ি করে বসেছিলেন একসময়। স্বামী গুরু দত্তের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি-দূরত্ব, নেশায় ডুবে যাওয়া, কাজ হারানো, সংসার টানতে স্টেজ শো কী নেই তাঁর জীবনে। একসময় নার্ভাস ব্রেক ডাউনের শিকার হন তিনি। মাত্র ৪১ বছর বয়সেই তাঁর জীবন থেমে যায় সিরোসিস অফ লিভারে। কিন্তু তা সত্বেও তাঁর মৃত্যুতে অবসাদ, মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথাই উঠে আসে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম