।। প্রথম কলকাতা ।।
বন্যার কারণে লকডাউনে গোটা দিল্লি, বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনার জল। তছনছ করে দিচ্ছে ভারতকে। ভেঙে দিয়েছে ৪৫ বছরের রেকর্ড। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ছে উত্তর ভারত। বাতাসে মানুষের হাহাকার। বাংলাদেশেও একই অবস্থা। ইতিমধ্যেই বহু জায়গায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশে ভারত থেকে ঢুকছে প্রচুর জল। কোন পাপে এমন শাস্তি? মুক্তির কি কোনো উপায় আছে? বাংলাদেশ কেন ভারতকেই দোষারোপ করে? এটা আদৌ কি ঠিক?
ভারতকে ধ্বংস করে দিতে যমুনা নদীই যথেষ্ট। মানুষ বহুদিন ধরে এই নদীর উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। অ্যামোনিয়া আর ফসফেটের আধিক্যে নদীর জল পরিণত হয়েছে সাদা ফেনায়। বর্তমানে যমুনার জল বইছে প্রায় ২০৮.৫৩ মিলিমিটার উপর দিয়ে। নেপথ্যে মানুষের পাপ। যমুনার দুই পাড় আবর্জনায় ভরিয়ে দিয়েছে মানুষ। নদীর তলদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে পলি। নদীর গতিপথ অবরুদ্ধ করে গজিয়ে উঠেছে একাধিক ব্রিজ। নিকাশি ব্যবস্থারও ভয়ঙ্কর অবস্থা। জল এলাকায় ঢুকছে, কিন্তু বেরোনোর পথ পাচ্ছে না।
একই ভাবে ভুগছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। আচ্ছা, বাংলাদেশে বন্যা হলে কেন বারংবার আঙুল তোলা হয় ভারতের দিকে? এর কি সত্যি কোনো পোক্ত কারণ আছে? বাংলাদেশে বন্যা হয় দুটো ভাবে। একটা আন্তর্জাতিক আর একটা অভ্যন্তরীণ। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে বেশিরভাগটাই মানবসৃষ্ট। নির্বিচারে গাছ কাটা, পাথর উত্তোলনের করায় মাটি নরম হয়ে যায়। অত্যাধিক পরিমাণে পলি জমা হয় নদী আর হাওরের তলদেশে। কমতে থাকে নাব্যতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বারংবার চলে আসে ভারতের ফারাক্কা ব্যারেজের নাম। এটি রয়েছে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ভারতের মাত্র ১৮কিমি ভিতরে। এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ১৯৭০ সালে। উদ্দেশ্য ছিল নিয়মিত যান্ত্রিক ড্রেজিং ছাড়া কলকাতা বন্দরের নাব্যতা ঠিক রাখা। যখনই ভারতে বন্যা হয় তখন অতিরিক্ত জলের চাপ সামলাতে ব্যারেজের গেট গুলো খুলে দেওয়া হয়। ভারতের আওতায় প্রচুর নদী রয়েছে। মেঘনা অববাহিকায় আছে প্রায় ১৬টি আন্তদেশীয় নদী। কিন্তু নদীর জল আর পলি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে যৌথ পোক্ত চুক্তি নেই। বন্যা হলে ভোগে দুই দেশই । এর মাঝেই চলে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। বাংলাদেশেও উন্নয়নের কাজে প্রচুর পরিমাণে বাঁধ দিয়ে জল প্রবাহ আটকে রাখা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা মনে করছে, বাঁধ দিয়ে নয় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে জল প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সিলেটে জলের প্রবাহ কিভাবে আসছে, কিভাবে সেখান থেকে সাগরে মিশছে তা বাংলাদেশের হাতেই রয়েছে। তাই সচেতন ভাবে কাজ না করলে মুশকিল।
বাংলাদেশের বন্যার পিছনে অন্যতম কারণ দেশটার অবস্থান। দেশটা মূলত গঙ্গা ব্রহ্মপুত্র আর মেঘনার পলি মাটি দিয়ে তৈরি। হিমালয়ের বরফ গলা জলের একটা বড় অংশ সমুদ্রে মিশে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশের উপর দিয়েই বয়ে চলে। কিন্তু হিমালয় থেকে আসা জলপ্রবাহের পরিমাণ কখনো এক থাকে না। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বাড়তি চাপ পড়লেই ঘটে বিপত্তি, ধারণ ক্ষমতা হারায় নদী। সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয় ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে, এখন থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব মাত্র ২৫ কিলোমিটার। পাহাড় থেকে জল বাংলাদেশের সমতলে অতিসহজেই বন্যা সৃষ্টি করে। বেশি ভোগে রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, বগুড়া, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারি , সিলেট, সুনামগঞ্জ সহ বহু অঞ্চল।
বিশ্ব জুড়ে ক্রমবর্ধমান উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে বহু দেশ মুছে যাবে ম্যাপ থেকে। তার মধ্যে ভারতের বহু অঞ্চল সহ বাংলাদেশেও রয়েছে। এমনটাই আশঙ্কা করছেন বহু বিশেষজ্ঞরা। আসলে প্রকৃতিও চাইছে দূষণের বিষবাষ্প থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচতে। এই বন্যাকে কিন্তু মানুষই আটকাতে পারে। তার জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করতে হবে। আরো সচেতন হতে হবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম