Round Up 2022: গোটা বিশ্বে ২০২২ শুরু হয়েছিল নতুন উদ্যম, উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়ে। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ভোল বদলাতে শুরু করে। সারা বিশ্বজুড়ে শুরু হয় যুদ্ধের আতঙ্ক। বিশ্ববাসী ভয়ে কাঁপতে থাকে, এই বুঝি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ( Third World War) বাঁধল। মানুষের আশঙ্কাকে কিছুটা সত্যি করে যুদ্ধের আগুনে ঘি ঢালল রাশিয়া( Russia)। শুরু হয়ে যায় ইউক্রেন রাশিয়ার দ্বন্দ্ব( Ukraine-Russia conflict)। যা গত ১০ মাস ধরে সমানতালে অব্যাহত। পাশাপাশি বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলির মধ্যে কে কতটা শক্তিধর তা দেখাতে ব্যস্ত ছিল বিশ্বের তাবড় তাবড় রাষ্ট্রনেতারা। একের পর এক নতুন নতুন যুদ্ধাস্ত্র লঞ্চ করেছে বিশ্বের নানান দেশ। তৈরি হয় পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা।
ইরানের( Iran) মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ইরানের তেহেরান সহ প্রায় ৮০টি শহর। হিজাব কাণ্ডে বিক্ষোভেরা আগুনে দাউদাউ জ্বলে দেশটি। সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সংঘাত শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে। ২০২২ সালে দুই দেশের সম্পর্কে আবার চিড় ধরে। ইরানের পবিত্র কোম শহরে জামকরণ মসজিদে ওড়ে লাল পতাকা। মার্কিন সংবাদপত্র ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এর তথ্য অনুযায়ী, ইরান মধ্যপ্রাচ্যকে নিজের লক্ষ্যবস্তু বানাতে চায়। এই লাল পতাকাকে ভালো চোখে দেখেনি সৌদি আরব। দেশটি বুঝেছিল তাদের শিয়রে বিপদ, তাই ছুটে যায় আমেরিকার কাছে। আশঙ্কা তৈরি হয় ইরান কুর্দিস্থানে হামলা করতে পারে। ইউক্রেন বারংবার অভিযোগ করেছিল, রাশিয়াকে নাকি যুদ্ধে ড্রোন দিয়ে সাহায্য করছে ইরান। সেই অভিযোগকে কিছুটা সত্যি করে ইরান স্বীকার করে তারা রাশিয়াকে ড্রোন দিয়েছে। প্রশ্ন উঠে, তাহলে কি ইরান আমেরিকার বিরুদ্ধে ঘুরিয়ে চাল দিচ্ছে?
২০২২ এর গোটা বছরে বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা দেখেছে সাধারণ মানুষ। ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের মাঝে শুরু হয়ে যায় উত্তর কোরিয়া আর যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত। একজন ছোঁড়ে মিসাইল, অপরজন কুখ্যাত বোমা। এই দুই দেশের বিদ্বেষের আড়ালে চাপা রয়েছে একরাশ ঘৃণা, যার সূত্রপাত হয়েছিল সেই ১৯৫০ সালে। যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোরিয়ার লড়াইকে বলা হয় ফরগেটেড ওয়ার অর্থাৎ যে যুদ্ধের কথা মানুষ ভুলে গেছে। কিন্তু প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও দুই কোরিয়ার দ্বন্দ্ব এখনো বহমান। প্রায় সময় দেখা যায় দুই দেশের রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। ২০২২ এর নভেম্বর মাসের শুরুতেই দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে প্রায় দশটি মিসাইল ছুঁড়েছে উত্তর কোরিয়ার কিম। দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান মহড়ার মাঝে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ আগুনে ঘি ঢালার মতো উত্তেজনা বাড়ায়। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের দূরপাল্লার বিমানবাহিনীর মেরুদণ্ড ভয়ঙ্কর ল্যান্সার বিমান নিয়ে মহড়া চালায়।
রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমানতালে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এনেছে নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। যা বুঝিয়ে দেয় যে বাইডেনের চোখ রাঙানি সহ্য করবে না পুতিন। যুদ্ধের মাঝেই রাশিয়া অস্ত্রাগারে যোগ করে ধ্বংসাত্মক কিছু অস্ত্র, যে তালিকায় ছিল নিউক্লিয়ার সাবমেরিন। যুদ্ধে প্রথম থেকেই ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা, এই বিষয়টি একেবারেই হজম করতে পারেনি রাশিয়া। অপরদিকে তুমুল চর্চা শুরু হয়, রাশিয়ার ত্রাস হয়ে উঠছে পাকিস্তান। পাকিস্তান নাকি ব্যবহার করতে পারে নিউক্লিয়ার টেকনোলজি। পৃথিবীতে মোট যে নয়টি দেশের কাছে পরমাণু অস্ত্র আছে তার মধ্যে একটি পাকিস্তান। দেশটির কাছে রয়েছে প্রায় ১৫০ থেকে ১৬০টি নিউক্লিয়ার বোম। গুঞ্জন ওঠে যুদ্ধের মাঝে পাকিস্তান ইউক্রেনকে নিউক্লিয়ার অস্ত্র বানাতে সাহায্য করবে।
বছরের শেষে ভারত আর চীনের সম্পর্ক কিছুটা হলেও যেন তিক্ত হয়ে উঠলো। অরুণাচল প্রদেশের কাছে দুই দেশের সৈন্যের যে সংঘাত হয়েছে তা উসকে দিয়েছে ২০২০ সালের লাদাখের স্মৃতি। নভেম্বরে ভারত মার্কিন সেনার যৌথ মহড়াকে ভালো চোখে দেখেনি চীন। অপরদিকে তাইওয়ানকে কেন্দ্র কেন্দ্র করে চীনের সঙ্গে আমেরিকার উত্তেজনা চরমে। চীনের বিদেশ মুখপাত্র সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, ভারত আমেরিকার যৌথ মহড়া ভারতের সঙ্গে চীনের ১৯৯৩ এবং ১৯৯৬ সালে যে চুক্তি হয়েছিল, সেই চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। যদিও ভারত বিষয়টিকে একেবারেই আমলে নেয়নি। অপরদিকে প্রশ্ন ওঠে, সন্ত্রাসবাদকে ভারতের বিরুদ্ধে হাতিয়ার করছে চীন।
পাকিস্তানকে বিপুল পরিমাণে অর্থ সাহায্য করে দেশটি। কিন্তু সন্ত্রাসের আস্তানা গুঁড়িয়ে দিতে চায় ভারত। ভারত দিল্লিতে ‘নো মানি ফর টেরর’ নামক একটি গ্লোবাল কনফারেন্সের আয়োজন করলে সেখানে বিশ্বের প্রায় ৭২ টি দেশ এবং ১৫টি বহজাতিক সংস্থা উপস্থিত ছিল। কিন্তু ছিল না পাকিস্তান এবং চীনের কোন সদস্য। পাক জঙ্গিকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার প্রস্তাব ভারত যতবার দিয়েছে, ততবারই রাষ্ট্রসঙ্ঘে বিরোধিতা করেছে চীন। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘে বারংবার ভারতের বিরোধিতা করা আর পাকিস্তানের হয়ে কথা বলা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসবাদকে সাপোর্ট করা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম