।। প্রথম কলকাতা ।।
Modi-Nitish: ফিকে মোদী ম্যাজিক। কাজ করল না রাম মন্দিরের হাওয়া। এই মুহূর্তে ভারতে সরকার গঠন করবে কে? এনডিএ নাকি ইন্ডিয়া? আসল ট্রাম্প কার্ড নীতীশ কুমারের হাতে। গোটা দেশ তাকিয়ে এই একটা মানুষের দিকে। যে কোন মুহূর্তে তিনি খেলাটা ঘুরিয়ে দিতে পারেন। সরকার ভাঙ্গা গড়ার আসল খেলা তো এবার হবে দিল্লিতে। জোড়া বৈঠকেই ঠিক হয়ে যাবে, কেমন হবে জোটের রাজনীতি। এনডিএর বৈঠকে মোদির হাতে লেটার অব সাপোর্ট তুলে দেওয়ার কথা রয়েছে নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর। কিন্তু যদি এই আগাম হিসেবের অঙ্কটা না মেলে? যদিও বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার এগিয়ে রয়েছে, পেয়েছে ২৯৩ টি আসন। কিন্তু পিছিয়ে নেই এই ইন্ডিয়া জোটও। পেয়েছে ২৩৪ টি আসন। আর এখানেই তো রয়েছে মূল ফ্যাক্টর টা। যদি একবার ইন্ডিয়া জোট নাইডু আর নীতীশকে নিজেদের জোটে টেনে দিতে পারে তাহলে কিন্তু মোদি সরকারের গদি টলমলে হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই নীতীশের সঙ্গে এনডিএ এবং ইন্ডিয়া দুই জোটই যোগাযোগ করেছে। এখন নীতীশ এনডিএ জোটে থাকলেও, তিনি যে পাল্টি খাবেন না এমন কোন গ্যারান্টি নেই। এখন প্রশ্নটা হল এমনই, নীতীশ তুমি কার? কোন দিকে মোড় নেবে ভারতের জাতীয় রাজনীতি?
২০২৪ এর লোকসভা ভোটে এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি, পেরোতে পারল না ২৭২ এর গন্ডি। পরিস্থিতি সামলাতে ইতিমধ্যেই তড়িঘড়ি বৈঠক ডেকেছে এনডিএ জোট। তাহলে কি তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে নরেন্দ্র মোদীর? যে এনডিএ জোটকে নিয়ে তিনি এত প্রচার করেছেন, এত আশাবাদী ছিলেন, সেই এনডিএ জোটের মধ্যেই ঘুন। কোনো একটা দল পাল্টি খেয়ে ইন্ডিয়া জোটে গেলেই মহাসর্বনাশ। ভাগ্য খুলে যেতে পারে রাহুল গান্ধীর। ৫৪৩টি আসনের মধ্যে অন্ততপক্ষে ২৭২টি আসনে জিতলে তবে সেই দল সরকার গঠন করতে পারবে। তবে লোকসভা নির্বাচনের লড়াইটা হচ্ছিল, দুই জোট পক্ষের মধ্যে। এক দিকে এনডিএ, তো অপরদিকে ইন্ডিয়া জোট। আর এনডিএ জোটের নেতৃত্বে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু এই জোটের সুর এখন খারাপ। আগে থেকেই অঙ্ক কোষে কিছুই বলা যাচ্ছে না।
গুঞ্জন বলছে, কংগ্রেস নাকি এনডিএর শরিকদের সঙ্গে আগাম আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। প্রশ্নটা তো এখানেই, তাহলে কি এবার সরকার গড়ার তোড়জোড় শুরু করে দিল কংগ্রেস? খটকা লাগাটাই স্বাভাবিক। কারণ একটা সময় ইন্ডিয়া জোটের হোতা ছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার। কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি পাল্টি খেয়ে হাত মেলান এনডিএ জোটের সঙ্গে। যার জন্য তাকে শুনতে হয়েছিল দলবদলুর তকমাও। গতবছরে এই নীতীশ কুমারের ডাকে পাটনার বিরোধী জোটের বৈঠকে ছিল প্রায় ১৫টি দল। ঠিক তার পরের মাসে বেঙ্গালুরুতে সেই সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল ২৬। তারপর চলতি বছরের প্রথমদিকে, নীতীশ সদলবলে ফিরে আসেন এনডিএতে। কিন্তু এখন ইন্ডিয়া জোট যে জায়গায় রয়েছে, সেখানে যদি নীতীশ কুমার আবারও পাল্টি খান, তাহলে মহা বিপাকে পড়তে পারে এনডিএ জোট। বিষয়টা শুধু এখানেই থেমে নেই, শোনা যাচ্ছে ওদিকে কংগ্রেস নাকি যোগাযোগ করেছে দক্ষিণের অন্যতম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তেলেগু দশম পার্টির নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডুর সঙ্গে। এমত পরিস্থিতিতে যদি এনডিএ জোট ভেঙে যায় এবং রাজনৈতিক দলগুলো পাল্টি খেয়ে ইন্ডিয়া জোটের সঙ্গে যোগ দেয়, তাহলে কিন্তু ইন্ডিয়া জোটের সরকার গড়া একেবারে অসম্ভব ব্যাপার নয়। বিশাল চাপে পড়বে বিজেপি।
আসলে কি বলুন তো, এই এনডিএ জোটের ভাঙা গড়া খেলা কিন্তু একদমই নতুন নয়। তাই বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ ভাঙা মনে শক্তি বাড়বে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তি যৌথ মঞ্চ ইন্ডিয়ার। নির্বাচনের চর্চায় বারংবার কংগ্রেসের তোপের মুখে পড়েছে এনডিএ জোট। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে দাবি করেছিলেন, এনডিএর শরিক হিসেবে নাকি এমন সব দলের নাম করা হচ্ছে, তাদের অনেকেরই নাম শোনেননি তিনি। পাল্টা জবাবে নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, সারা ভারতে ছড়িয়ে থাকা ৩৮ দলের এনডিএ জোট সময় পরীক্ষিত জোট। যারা আরও বেশি জাতীয় অগ্রগতি আর আঞ্চলিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চায়।
আচ্ছা, এই এনডিএ জোট কী অতটাই দুর্বল? যে সহজে ভেঙে যেতে পারে? এই জোটের শুরুটা ঠিক কোথায়? গতবারের লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে বিজেপি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরে, নরেন্দ্র মোদী অমিত শাহদের কাছে এই জোট শরিকদের প্রয়োজন কিছুটা হ্রাস পেয়েছিল। তারই মধ্যে অনেকটা বদলে এসেছে এনডিএ জোটের সাবেক গড়নেও। কৃষি আইনের বিরোধিতা করে শিরোমনি আকালি দল এই জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায়। পাশাপাশি নীতীশ কুমারের বিরোধিতা করে এই জোট ছেড়েছিল এলজেপির চিরাগ পাসোয়ান। মহারাষ্ট্রে এনডিএ ছেড়ে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলায় শিবসেনা। উল্টোদিকেই আবার মহারাষ্ট্রে শিবসেনা ভেঙে শিন্দে গোষ্ঠী জোড়ে বিজেপির সঙ্গে।
উইকিপিডিয়া বলছে, এনডিএ হল ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বে ভারতীয় রাজনৈতিক জোট। যার ইতিহাস অনেক পুরনো। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে। মূলত ওই সময় সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তখন এই জোট গঠন হয়, যার মূল লক্ষ্য ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বিরোধী জোট গঠন করা। বিজেপির নেতৃত্বে থাকলেও এতে সমতা পার্টি, AIADMK, শিবসেনা সহ বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক দল অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শিবসেনা ২০১৯ সালে কংগ্রেস এবং এনসিপি-এর সাথে মহা বিকাশ আঘাদিতে যোগ দিতে জোট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। জনতা দল (ইউনাইটেড) গঠনের পর ২০০৩ সালে সমতা পার্টিও জোট থেকে বেরিয়ে যায়।
এআইএডিএমকে সমর্থন প্রত্যাহার করায় এক বছরের মধ্যে সরকার পতন হয়। আরও কয়েকটি আঞ্চলিক দলের প্রবেশের পর, এনডিএ ১৯৯৯ সালের নির্বাচনে বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে। বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হন এবং এই সময় পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। এনডিএর ২০০৪ সালের নির্বাচনে প্রচারণা ছিল “ইন্ডিয়া শাইনিং” স্লোগানকে ঘিরে। মনে করা হয়েছিল এনডিএ সরকার দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তন আনবে। কিন্তু তেমনটা হয়নি, পরাজয়ের সম্মুখীন হয় এনডিএ। তখন লোকসভায় মাত্র ১৮৬টি আসন জিতেছিল, যেখানে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের ২২২টি আসন জেতায় প্রধানমন্ত্রী হন মনমোহন সিং। সেই সময় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেছিলেন, গ্রামীণ জনগণের কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থতার কারণে এনডিএ-র পরাজয় হয়েছে। তবে নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বায়িত্বে এলে, দ্রুত বদলাতে থাকে এনডিএ জোটের চেহারা।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম