।। প্রথম কলকাতা ।।
C. V. Raman: তাঁর নাম কে না জানে। অন্ততপক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সকল পড়ুয়ারা পদার্থ বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা ভালো করে জানে তাঁকে। তবে শুধু তাঁর নামই নয়, তাঁর আবিষ্কারের সঙ্গেও তাঁরা ভালোভাবে পরিচিত। বর্তমান সময়ে আমাদের দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা বিজ্ঞানকে কাজে লাগাই। এক কথায় বলতে গেলে বিজ্ঞানকে (Science) ছাড়া আমরা অচল। আর সেই বিজ্ঞান চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ হলেন সি ভি রামন, পুরো নাম চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রামন (Chandrasekhara Venkata Raman)। তাঁর আবিষ্কার পদার্থ বিজ্ঞানের দুনিয়ায় ‘রামন এফেক্ট’ নামে পরিচিত।
১৮৮৮-র ৭ নভেম্বর জন্ম তাঁর। বাবা গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন। মাদ্রাজের তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৫ সালে গণিতে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতক হয়েছিলেন। আবার এই কলেজেই এমএতে ভর্তি হন এবং তাঁর প্রধান বিষয় ছিল রসায়ন। পরবর্তীতে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন রামন। সরকারের অর্থ বিভাগের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম হয়েছিলেন তিনি। ১৯০৭-এ কলকাতায় সহকারি হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করেন। কিন্তু তাঁর প্যাশন ছিল বিজ্ঞান। তাই চাকরির সঙ্গে সেই দিকটাও বজায় রেখেছিলেন। তিনি বলেছেন, বিজ্ঞানের সারমর্ম হল স্বাধীন চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম, কোনও উপকরণ নয়। তাঁর বক্তব্য ছিল, মাতৃভাষায় বিজ্ঞানের শিক্ষা প্রয়োজন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে (University of Calcutta) পদার্থ বিজ্ঞানের প্রথম অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর ১৯১৭ সালে তিনি সরকারি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স-এ নিজের গবেষণা চালিয়ে যান। তিনি তাঁর কর্মজীবনের এই সময়টিকে সুবর্ণ যুগ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। যদিও গবেষণার ক্ষেত্রে কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছিল না তাঁর।
এমনকি কোনও শিক্ষকও ছিল না। নিজেই নিজের পথ খুঁজে নিয়েছিলেন তিনি এবং সফল হয়েছিলেন। ‘রামন এফেক্ট’ (Raman Effect) আবিষ্কারের জন্য তিনি পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ১৯৩০-এ। সমগ্র এশিয়ায় তিনিই প্রথম বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আলো যখন স্বচ্ছ পদার্থের মধ্যে দিয়ে যায়, তখন তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তিত হয়। এটাই হল ‘রামন এফেক্ট’। আলোর গতির ওপর তাঁর এই অসামান্য কাজের জন্যই তাঁকে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ১৯৩৩-এ ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়ন্সেস-এর প্রথম ভারতীয় ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্বভার কাঁধে নেন। জীবনের শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যাঙ্গালোরেই কাটিয়েছেন। ১৯৫৪-তে তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়।
২৮ ফেব্রুয়ারি তাঁকে স্মরণ করেই বুক গর্বে ফুলে ওঠে সকলের। যদিও সেদিনটি তাঁর না জন্মদিন, না মৃত্যুদিন। এমনকি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার দিনও নয়। তবে? এই দিনটিতেই বিখ্যাত ‘রামন এফেক্ট’ আবিষ্কার করেছেন তিনি। আর এই দিনটিকে বিজ্ঞান দিবস হিসেবে (National Science Day) পালন করা হয়ে আসছে। প্রতি বছর বিজ্ঞান দিবসের একটি করে থিম থাকে। ২০২৩-এর থিম ‘সার্বজনীন কল্যাণে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান’। ব্রিটিশ ভারতের বিজ্ঞান চর্চাকে অ্যাকাডেমিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে রামনের ভূমিকা অপরিসীম। তিনি বিজ্ঞানের জটিল সমস্যার সমাধান খুব সহজেই করে দিতেন। এত সরলভাবে জটিল বিষয়গুলিকে ছাত্রদের সামনে তুলে ধরতেন যে, তাঁরা বিজ্ঞানের প্রতি উৎসাহিত হয়ে পড়ত। ১৯৭০-এর ২১ নভেম্বর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় এই বিজ্ঞানী।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম