।। প্রথম কলকাতা ।।
Dogs Cry Reason: ঘুটঘুটে নিশুতি রাত, তার মাঝে হঠাৎ করে করুণ সুরে কেঁদে (Cry) উঠল কুকুর (Dog), মুহূর্তে ভেঙে গেল নিস্তব্ধতা। ঘুমের ঘোরেই অনেক আঁতকে উঠে ভাবলেন শিয়রে বিপদ কিংবা আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে অশরীরী আত্মারা। মানুষ দেখতে না পেলে তেনাদের ঠিক দেখতে পায় কুকুর! তাই কুকুর কেঁদে ওঠে! এমনটা আপনি ছোটবেলা থেকে বারংবার শুনে এসেছেন। কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ সংস্কার বসে কত কিনা মেনে চলে। এই ধরনের বিশ্বাসকে মানুষ যুগের পর যুগ মান্যতা দিয়ে এসেছে। দিনের পর দিন অশুভ বলে দেগে দেওয়া হয়েছে কুকুরের কান্নাকে। কুকুর কাঁদলেই অনেকে অমঙ্গলের ভয়ে তাদের গায়ে জল ছিটিয়ে দেয় কিংবা লাঠি নিয়ে তেড়ে যায়। এই ভুল আপনি করছেন না তো? কুকুর রাত্রে কেন কাঁদে? আদৌ কি কুকুরের ডাক অশুভ? কুকুর কাঁদলে ভুলেও তাদেরকে লাঠি দিয়ে মারবেন না।
শীতের রাত মানে চারিদিকে কুয়াশা ঘেরা অন্ধকার আর গা ছমছমের নিস্তব্ধ পরিবেশ। সেখানে হঠাৎ করেই যদি কুকুর কাঁদে তাহলে অনেকেই ভয়ে কুঁকড়ে যান। যদি সেই দিন সেই এলাকায় কারোর মৃত্যু হয় তাহলে তো আর কথাই নেই। এই নিয়ে শুরু হয়ে যায় নানা আলোচনা। অনেকে বলতে থাকেন, কুকুর কেঁদেছিল অর্থাৎ কুকুর বুঝতে পেরেছিল যে বড়সড় বিপদ আসতে চলেছে। আবার মনে করা হয়, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ক্ষেত্রেও নাকি কুকুর কেঁদে আগাম বার্তা দেয়। কুকুরের কান্না নাকি অশুভ যা অমঙ্গল ডেকে আনে। এইরকম নানান প্রচলিত বিশ্বাস বহু মানুষের মনে এখনও গেঁথে রয়েছে। এক্ষেত্রে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক যুক্তি আছে, যা জানলে একটু অবাক হবেন। ভেঙে যাবে এতদিনের ধারণা।
কুকুর ডাকা মানেই চারিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে অশরীরী অশুভ আত্মাদের দল! এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসাই ভালো। কুকুর ডাকা মানে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার লক্ষণ নয়। প্রচলিত ধ্যান ধারণা অনুযায়ী, অনেকে বিশ্বাস করেন কুকুরের ঘ্রাণ, দেখা এবং শোনার ক্ষমতা নাকি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। তারা মৃত মানুষের আত্মাদের দেখতে পায়। কুকুর নাকি ভৈরব বাবার বাহন, কুকুর কাঁদা মানে ভৈরব বাবা বিশেষ কোনো সংকেত দিচ্ছেন। কুকুর নাকি পূর্বপুরুষের আত্মাদের দেখতে পায় যা অশুভ লক্ষণ, অপরদিকে বলা হয় পূর্বপুরুষদের দেখা পাওয়া অত্যন্ত শুভ।
কুকুর কেন কাঁদে?
এর পিছনে এমন কিছু বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে যা জানলে আপনার চিন্তাধারা একটু বদলে যাবে। আসলে অধিকাংশ কুকুর একা থাকতে এক্কেবারে পছন্দ করে না। তাই তারা তাদের সঙ্গীদের ডেকে একত্রে জড়ো হওয়ার জন্য ওইভাবে চিৎকার করে। যা অনেকটা কান্নার মত শুনতে লাগে। কুকুর খুব মিসুখে, যদি দেখেন প্রায়ই রাতে তারা বেশি কান্নাকাটি করছেন করছে তাহলে ভাববেন সেই কুকুর বড্ড একা।
অনেক সময় মনে হয় কুকুর কাঁদছে, আসলে তা নয়, তারা ওই ভাবেই তাদের সঙ্গীদের বোঝায় যে তারা ঠিক কোথায় রয়েছে। যাতে ডাক শুনে সবাই এক জায়গায় এসে হাজির হতে পারে। কুকুরের ব্যথা যন্ত্রণা বা শরীরে কোন চোট আঘাত লাগলে কষ্ট বোঝাতে সঙ্গীদের সাহায্যের জন্য ওইভাবে আওয়াজ করে।
যেসব কুকুরের বয়স বেড়েছে কিংবা যাদের দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা রয়েছে তাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে অন্যদের তুলনায় তারা রাতে একটু বেশি কান্নাকাটি করে। কখনও কখনও কুকুরদের জন্য এমন খাবার উপযুক্ত নয় তারা খেয়ে ফেলে, যার কারণে পেট ফাঁপা হয়ে যায় বা পেট খারাপ হয়। তখনও কুকুর রাতে কান্নাকাটি করে।
তাই যদি দেখেন আপনার এলাকার আশেপাশে বারংবার কোন কুকুর রাত হলেই কাঁদছে তাহলে সেই সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। হয়ত তাদের কোন শারীরিক সমস্যা কিংবা তারা একা থাকার কারণে কান্নাকাটি করছে। বাড়ি পোষা কুকুর দিনের পর দিন এইভাবে কাঁদতে থাকলে তাকে দ্রুত পশু চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। খেয়াল রাখুন আপনি দিনে কুকুরকে ঠিক কোন খাবার খেতে দিচ্ছেন। হয়ত সেই খাবার সে ঠিক হজম করতে পারছে না। হয়ত মাঝে মাঝে ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে থাকতে থাকতে সে হাঁপিয়ে পড়েছে। অনেকেই আছেন যারা কুকুর কাঁদতে দেখলে উল্টে লাঠি নিয়ে তেড়ে গিয়ে মারধর করেন কিংবা গায়ে জল ছুঁড়ে দেন, এই শীতের রাতে এমন কাজ ভুলেও করবেন না। এমনটা অত্যন্ত অমানবিক এবং লজ্জাজনক কাজ। কুকুরের কান্না হল তাদের সমস্যা ব্যক্ত করার এক মাধ্যম। কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে একটু ভাবলে এই নিরপরাধ প্রাণী গুলোর উপর অত্যাচার একটু কমে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম