।। প্রথম কলকাতা ।।
Round up 2023: কবির কথায় ‘কী পাইনি, তার হিসেব মিলাতে মন মোর নহে রাজি’ ..বছর আসে বছর যায়। দেখতে দেখতে পেরিয়ে যাচ্ছে আরও একটা বছর। এই সময়ে দাঁড়িয়ে পুরনো বছরের হিসেব মেলানো একটা পুরনো রীতি। ২০২৩ সালে দেশজুড়ে এমন বেশ কয়েকটি ঘটনা বিতর্ক তৈরী করেছে । যে বিতর্ক যেন এখনো প্রবাহমান …আজকের প্রতিবেদনে আলোচনা করবো সেই রকমই কয়েকটি ঘটনা , যা চলতি বছরে বিতর্কের কারণে উঠেছিল সংবাদ শিরোনামে।
১) বাতিল সাংসদ পদ: মোদী বিরোধী একটি মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী। রাহুল বলেছিলেন ,”নীরব মোদি, ললিত মোদি, নরেন্দ্র মোদি, সব চোরের পদবিই মোদি কেন? ২০১৯ সালে গুজরাটে সুরাট আদালতে মানহানির মামলা হয় রাহুলের বিরুদ্ধে। সেই মামলার রায়ে সুরাট আদালত তাকে দুই বছরের সাজা শোনায়। এরপরেই লোকসভার সচিবালয় কর্তৃক বাতিল করা হয় তাঁর সদস্য পদ। অন্যদিকে, সপ্তাহ খানেক আগেই বাতিল করা হয় মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ। নগদের বিনিময়ে প্রশ্ন তোলায় ৮ ডিসেম্বর তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের সংসদ পদ বাতিল করা হয়। সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি মৈত্রকে বহিষ্কারের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেব যা লোকসভা ধ্বনিভোটে অনুমোদিত হয়। মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও সেই মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
২) কুস্তিগিরদের বিক্ষোভ: ভারতের কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ এনে ধর্মঘটে বসেন অলিম্পিকে পদকজয়ী কুস্তিগিররা। কুস্তিগিরদের দাবি ছিল, ব্রিজভূষণের অপসারণ এবং তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ। স্বাধীনতা দিবসের দিন দিল্লির রাজপথে ফেলে নৃশংসভাবে বিক্ষোভরত কুস্তিগিরদের মারধর করে দিল্লি পুলিশ। সেই ছবি দেখে রীতিমত কম্পিত হয়েছিল গোটা দেশ।
৩) হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট: গৌতম আদানি। হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টে নাম জড়িয়েছিল আদানি গ্রুপের। তারপর থেকে শেয়ারেও পতন ঘটতে থাকে। নিজেদের ফায়দার জন্য নানাভাবে ভারতের বাজার প্রভাবিত করছে আদানিরা, দাবি করে মার্কিন শর্টসেলার সংস্থা। চলতি বছরের ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর থেকেই আদানির শেয়ার ক্রমাগত কমতে থাকে। নরেন্দ্র মোদীর জমানায় আদানি গোষ্ঠীর উত্থানে বড়সড় দুর্নীতির ইঙ্গিত দেয় ওই সংস্থা। ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই হু হু করতে পড়তে থাকে আদানিদের শেয়ারের দাম। রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই, মোদী এবং আদানির আঁতাঁতের অভিযোগ তুলে বিরোধীরা দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
৪) সংসদে হামলা: সংসদ হামলার ২২ বছর পূর্তির দিনে লোকসভায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। যা নিয়ে রীতিমত চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় গোটা সংসদে। ২২ বছর আগে সংসদে হামলার স্মৃতি ফিরিয়ে দেয় এই ঘটনা। এর আগে ২০০১ সালে সংসদে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছিল। মালদহ উত্তরের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু সভায় ওই সময়ে বক্তৃতা করছিলেন। আচমকা দেখা যায়, অধিবেশন চলাকালীন পাবলিক গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়েন দুই ব্যক্তি। বেঞ্চের উপর উঠে দাঁড়িয়ে পড়েন তাঁরা। আসন ছেড়ে উঠে পড়তে দেখা যায় সাংসদেরও। আতঙ্কিত হয়ে পড়েন সংসদে উপস্থিত সকলেই। সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীকে বলতে শোনা গিয়েছিল , ”আচমকাই সাংসদের গ্যালারিতে লাফিয়ে নেমে পড়ে। এবং তারা গ্যাস ছুড়তে থাকে। যার ফলে চোখের জ্বালার সৃষ্টি হয়। সাংসদরা এবং নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে গোল করে ঘিরে ফেলে আটক করে । গোটা ঘটনায় নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন অনেকেই। ঘটনায় দোষীদের পরবর্তীকালে গ্রেফতার ওহ করা হয়।
৫) লোকসভায় বহিস্কৃত সাংসদরা: চলতি বছরের একেবারে শেষের দিকে দলে দলে সংসদ থেকে সাসপেন্ড বিরোধী শিবিরের সাংসদরা। শীতকালীন অধিবেশনে লোকসভা এবং রাজ্যসভা মিলিয়ে এক সপ্তাহে লোকসভা এবং রাজ্যসভা থেকে মোট ১৪৩ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়। সংসদের নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করার কারণে লোকসভা (Loksabha) থেকে বহিষ্কৃত হতে দেখা যায় সাংসদদের।
৬) ইন্ডিয়া-ভারত নাম নিয়ে বিতর্ক: রাতারাতি বদলে ফেলা হবে দেশের নাম। ইন্ডিয়ার পরিবর্তে নাম হবে ভারত। জি২০ উপলক্ষে সব রাজনৈতিক দলকে এক নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণপত্রে ইংরাজি ভাষায়, ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র পরিবর্তে লেখা ছিল ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। সেই থেকেই দেশের নাম পরিবর্তন উস্কে দিয়েছিল। বিরোধীরা দাবি জানিয়ে বলে, মোদীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইন্ডিয়া নামের জোট গঠন করার পরই দেশের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার।
৭)২০০০ টাকার নোট বাতিল: প্রায় বছর সাতেক আগে ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই সময় নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। তার পরিবর্তে নতুন ৫০০ টাকা এবং ২০০০ টাকার নোট চালু করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। চলতি বছরে ২০০০ টাকার নোট ফের বাতিল করার কথা ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তাতে বলা হয়েছিল যে, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত সমস্ত ব্যাঙ্কে ২০০০ টাকার নোট জমা কিংবা বিনিময় করার সুবিধা পাওয়া যাবে। সরকারিভাবে ২ হাজারের নোট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম