।। প্রথম কলকাতা ।।
চীনকে ঘায়েল করতেই ভারত প্রীতি যুক্তরাষ্ট্রের।কিন্তু ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে কতটা সন্তুষ্ট? দুই দেশের সম্পর্কে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি কিরকম এফেক্ট ফেলছে? ভারত যুক্তরাষ্ট্র পরস্পর এক হওয়ার নেপথ্যে কোন স্বার্থ লুকিয়ে? এই দুই দেশের ঘনিষ্ঠতায় চীনের ভূমিকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ভারত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গভীর হচ্ছে, জোরালো হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু দুই দেশের ঘনিষ্ঠতায় আদৌ ভারতের স্বার্থ আছে কি? ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কতদিন টিকবে? উত্তর ফাঁস। কি বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
যা আগে কখনও হয়নি তা হয়েছে গত দুই দশকে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা বেড়েছে। এতে ভারতের যা লাভ, তার দ্বিগুণ লাভ কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের। স্বার্থ উদ্ধারের স্ট্র্যাটেজিটা ভালো মতো জানে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু স্বার্থের বাইরে বেরিয়েও বন্ধু বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলতে পিছপা হচ্ছে না ভারত। হ্যাঁ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে ভিসা নীতি নিয়ে মাতামাতি করছে সেই বিষয়টা অলরেডি ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার কথোপকথনে ইস্যু হয়ে উঠে এসেছে। এখনো বাকি আছে। মোদীর সফরের দিকে নজর রয়েছে। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র? একদিকে বাংলাদেশকে চাইছে নিজেদের পক্ষে অন্যদিকে চীনকে শায়েস্তা করতে ভারতকে কাজে লাগানোর মোটিভ।
ভুলে গেলে চলবেনা, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকা অর্থনীতির দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র সহ অন্যান্য সরঞ্জাম ও পণ্য রপ্তানির বৃহৎ বাজার হয়ে উঠছে ভারত। তবে এটা দুই দেশের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধার সবে শুরু। এটা তো ঠিক যে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের একটি ‘আস্থাশীল’ বাণিজ্যিক অংশীদার। কিন্তু, এসবের মাঝেও যুক্তরাষ্ট্র স্বার্থ হাসিলের ছক কষছে। ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার যুগে চীন ও চীনের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠা রাশিয়ার প্রভাব প্রতিপত্তিকে প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্র তার অংশীদারদের সহযোগিতা কামনা করছে। তাহলে ভারতকে কি হাতছাড়া করা যায়? রাশিয়া-চীনের উদীয়মান জোটের দিকে ভারতের ঝুঁকে যাওয়াটা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মেনে নেওয়া মোটেই সম্ভব নয়। ফলে বাণিজ্য হোক কিংবা ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যথেষ্ট সেনসিটিভ জায়গায় রয়েছে।
ভারতীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতকে হাতে রাখাটাও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য জরুরী। ভারত বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশিসংখ্যক সামরিক মহড়ায় অংশ নিয়েছে। এর মানে তো একটাই এই দুই দেশ অন্য বিষয়ের পাশাপাশি সামরিক স্থাপনা এবং বিমান ও স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য পরস্পরের মধ্যে বিনিময় করতে পারবে! যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানের সঙ্গে মিলিত হয়ে ভারত ইতিমধ্যে কোয়াড-এ যোগ দিয়েছে, যা গ্রুপটিকে তার প্রয়োজনীয় শক্তি জুগিয়েছে, জোগাবে। কিন্তু, এরপরও পশ্চিমের অনেক সংশয়বাদী বিশ্বাস করেন, মনে করেন ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত গাঁটছড়া বাধা শেষ পর্যন্ত খুব একটা কার্যকরী হবে না। কেন?
তাঁদের মতে রাশিয়ার সঙ্গে ঐতিহ্যগতভাবে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে ভারত। তাছাড়া, অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের মধ্যে নাকি অস্বস্তি রয়েছে। যেমন, পাকিস্তানে গণগ্রেপ্তার, গুম ও নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা। অথচ সেই পাকিস্তানকে আঁকড়ে ধরে রেখে মিয়ানমার ও ইরানের ওপর অবরোধ জারি রাখার মার্কিন নীতি ভারতকে অস্বস্তিতে রেখেছে। এছাড়া বাংলাদেশের উপর যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশন, নতুন ভিসা নীতির ভয় দেখানোর বিষয়টাকেও ভালো চোখে দেখছে না ভারত। সেক্ষেত্রে, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত কৌশলগত স্বার্থের কারণেই পরস্পর এক হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারতীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। যত দিন চীন তার বর্তমান নীতির পথে হাঁটবে, তত দিন ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কও টিকে থাকবে। যদিও আপাতত নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অষ্টমবারের মতো এবং জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর দ্বিতীয়বারের মতো যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন। সেদিকেই নজর দুই দেশের।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম