।। প্রথম কলকাতা ।।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে সরছে বাংলাদেশ? হামাস ইসরায়েল যুদ্ধের এফেক্ট এবার পদ্মাপাড়ের দেশটায়। তেল, চাল, গমে হাত দেওয়া যাবে তো? ওপার বাংলার প্রবাসী আয়ের উপর ঝুলছে কোন ফাঁড়া? কোন স্ট্রাটেজিতে মধ্যপ্রাচ্যের জায়গা নিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব? মধ্যপ্রাচ্যের উপর এতো ভরসা? ফল কতটা ভয়ংকর হতে পারে? সামনের দিনগুলোতে কী দেখবে বাংলাদেশ? বাংলাদেশের মাটিতে কোন জাদুকাঠি ছোঁয়ালো পশ্চিমা বিশ্ব? আর বিদেশে কাজের ক্ষেত্রে যে বাংলাদেশ আগে পিছে না ভেবেই মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দেয়, তারাই কিনা চক্ষুশুল? পুরো ফ্যাক্টটা জানতে হবে। ১৯৭৬ সালে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন ও লিবিয়ায় ৬ হাজার ৮৭ জনকে পাঠানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রবাসী কর্মসংস্থানের জার্নি শুরু। ওই সময় থেকেই ওপার বাংলার প্রবাসী আয়ের প্রধান অঞ্চল হিসেবে ধরা হয় মধ্যপ্রাচ্যকে কিন্তু দীর্ঘ সময় পর পুরো ছবিটা বদলে যাচ্ছে। প্রবাসী আয়ের গতিপথে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে।আর সেই জায়গা দখল করে নিচ্ছে পশ্চিমা দেশ। কি ঘটছে?
শীর্ষ স্থানে থাকা সৌদি আরবকে ডিঙিয়ে চলতি অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসীরা বাংলাদেশে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়ে শীর্ষস্থানে পৌঁছে গেছে। তুলনামূলক কম প্রবাসীর দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আয় বেড়ে যাওয়া স্বস্তি দিলেও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তথ্য বলছে চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে মানে জুলাই-ডিসেম্বর সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স বাংলাদেশে ঢুকেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এরপরই সৌদি আরবে। অথচ গত দশ বছরে কখনো প্রবাসী আয়ে সৌদিকে পেছনে ফেলতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন শুধু সৌদি আরব নয় সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ কুয়েত থেকেও বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমেছে দেখার মতো। তাহলে কি এর মধ্যেই যুদ্ধের এফেক্ট পড়তে শুরু করলো ওপার বাংলায়?বিশ্লেষকদের মতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের আয় কম। তাছাড়া ওমানের মতো দেশগুলো যেভাবে বাংলাদেশীদের ভিসা দিতে রাজি হচ্ছে না তাতে সেই এফেক্ট ও রেমিটেন্সে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
আর ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস ইসরাইল যুদ্ধ যদি এভাবেই চলতে থাকে তাহলে সেই এফেক্ট রেমিট্যান্সে কতটা কিভাবে পড়বে, বা আদৌ পড়বে কিনা সেই সম্পর্কে এখন থেকেই কিছু প্রেডিক্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মনে করা হচ্ছে, হামাস-ইসরায়েল সংঘাতকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি জটিল হলে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য। ভুলে গেলে চলবে না, চাকরির বাজারের বাংলাদেশের জন্য মধ্যপ্রাচ্য খুবই গুরত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের চাকরি বাজারে এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে। বিশ্লেষকদের একাংশের মতে এই যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেরকম হলে মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে ছড়িয়ে যেতে পারে। তাই এখনই এই সংঘাত বন্ধ না করা গেলে তাহলে সারাবিশ্বে এর প্রভাব পড়বে। সেই আঁচ থেকে বাংলাদেশ বাদ যাবেনা।
বিশ্বের কোনো প্রান্তে খারাপ কিছু ঘটলে তার প্রথম ধাক্কাটা লাগে তেলের বাজারে। অলরেডি কিন্তু জ্বালানি তেলের দাম প্রতি ব্যারেলে বেড়ে গেছে। তেলের দাম বাড়ার প্রভাব কিন্তু কৃষিপণ্যের ওপরও পড়ে। তখন অন্যান্য সংকটগুলো সামনে আসে। বিশেষ করে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সংকট দেখা দিতে পারে। তেল-ডলার সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্যের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। অতএব এটা একেবারে পরিষ্কার যে হামাস ইসরাইল যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সেটা বাংলাদেশের জন্য খুব একটা ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে না। আবার এটাও ঠিক যে শুধু বাংলাদেশ নয়। কোভিড মহামারি এবং ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে এখন বিশ্ব ভুগছে। এরপরে মধ্যপ্রাচ্য সংকট শুরু। তাই বলাই বাহুল্য হামাস-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে এটা কারোর জন্যই সুখকর হবে না। এর প্রভাব সবাইকে ভোগ করতে হবে, গোটা বিশ্ব কে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম