।। প্রথম কলকাতা ।।
দুর্গাপুজো মানে চার দিন নানান আচার, পুজোর নানান ব্যস্ততা। ভক্তদের বিশ্বাস, নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো করলে দেবীর আশিস মেলে। দুর্গাপুজোর মহাসপ্তমীতে পুজোর সূচনা হয়। এই দিন পুজোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি রীতি মেনে চলতে হবে জানেন কি? বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই প্রতিবেদনে। বাঙালির বছরের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। পুজো মানেই নতুন পোশাক পরে প্যান্ডেল হপিং, খাওয়া দাওয়া। তবে পুজোর দায়িত্বে থাকেন যাঁরা তাঁদের ব্যস্ততার শেষ থাকে না। মহাসপ্তমীতে পুজোর কি কি প্রথা রয়েছে তা এখন দেখে নেওয়া যাক।
এই দিন প্রথমে গৃহকর্তা পুরোহিতকে কাপড় ও নানা দ্রব্য দিয়ে বরণ করে নেবেন। তারপর হবে নবপত্রিকা স্নান। গঙ্গা বা কোনও জলাশয়ে নবপত্রিকাকে স্নান করানো হয়।এরপর নতুন কাপড় পরিয়ে যথাযথ মন্ত্র উচ্চারণ করে দুর্গামণ্ডপে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাধারণত নবপত্রিকা মা দুর্গার ডান দিকে গণেশের পাশে থাকে। তবে অনেক পরিবারের রীতি অনুসারে নবপত্রিকা মা দুর্গার বাম পাশেও প্রতিষ্ঠা করা হয়। এবার শুরু প্রতিমার চক্ষুদানের পালা। প্রথমে ঊর্ধ্ব নেত্র, তারপর বাম ও পরে দক্ষিণ নেত্রে চক্ষুদান করা হয়। এরপর বিল্বডাল দিয়ে মন্ত্র সহ দেবীর দন্তমার্জনা করা হয়। এসব আচার পালিত হয় মায়ের সামনে একটি তাম্রাধার রেখে। তার ওপরে স্থাপন করা হয় দর্পণ। সেই দর্পণের ওপর মায়ের প্রতিবিম্ব পড়ে। তাই দর্পণের ওপরই এইসব কাজ সম্পন্ন হয়।
শুরু হয় দেবীর মহাস্নান। দর্পণ প্রতিবিম্বে দেবীকে চন্দন, হলুদ, পিটুলি, পঞ্চশস্য দেওয়া হয়। মাখানো হয় মাটি ও নানা ধরনের সুগন্ধি তেল। এরপর মন্ত্রপাঠ সহ শীতলজলে দেবীকে স্নান করানো হয়। এর মধ্যে থাকে শঙ্খজল, গঙ্গাজল, বৃষ্টির জল। থাকে সাতসমুদ্রের জল, ঘি, দুধ, অগুরু। এছাড়াও থাকে চন্দন জল, শিশিরের জল, মধু, নারকেলের জল, মুক্তোজল। স্নানের পর নতুন বস্ত্র প্রদান করা হয় মাকে। এরপর মন্ত্র দ্বারা মাকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, স্নানীয়, বস্ত্র, আভরণ, শঙ্খাভরণ দিয়ে মায়ের অর্চনা করা হয়। এসময় সিন্দুর, চন্দন, পুষ্প, বিল্বপত্র, মাল্য, কজ্জল, ধূপ, দীপ, রচনা, নৈবেদ্য, পানার্থোদক, তাম্বুল দেওয়া হয়। অর্চনার পর পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করা হয়।
এরপর হয় আভরণ পুজো। তারপর নবপত্রিকার পুজো শুরু হয়। নয়টি দ্রব্য দ্বারা নবপত্রিকা তৈরি করা হয়। সেই নয়টি দ্রব্যের প্রত্যেকটি এক একজন দেবীর প্রতীক। এরপর ভোগ নিবেদন করা হয় গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, মহাদেব, নারায়ণ, মহিষাসুরকে। সেইসঙ্গে দেব-দেবীদের বাহন, অস্ত্র, গঙ্গা, যমুনা, চতুর্বেদ, নীলকণ্ঠ, দশাবতার, অষ্টবসুর পুজো করে সকল দেবতাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। মূল মন্ত্র জপ, চণ্ডীপাঠ করে ভোগ প্রদান হয়ে গেলে আরতি করে সপ্তমী পুজো সমাপ্ত হয়। মা দুর্গা ও তাঁর চার ছেলেমেয়ে আমিষ অর্থাৎ মাছ, বলির মাংস ভোগরূপে গ্রহণ করেন। আবার নিরামিষ ভোগও গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু শিব বা বিষ্ণুর ভোগ সব সময়ই নিরামিষ। সন্ধের পর মাকে শীতল ভোগ দেওয়া হয়। তাতে নাড়ু, তক্তি, মুড়কি, মিষ্টি নিবেদন করা হয়। আরতি করে মাকে শয়ন দেওয়া হয়। সপ্তমীর দিন চণ্ডীপাঠ হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম