।। প্রথম কলকাতা ।।
New Year Travel List: শেষ হতে চলেছে ২০২২। এরই মধ্যে ভ্রমণ পিপাসুরা বেরিয়ে পড়েছেন ঘুরতে। তবে যদি এখনও কেউ ঠিক করে না থাকেন যে কোথায় ঘুরতে যাবেন, তাহলে বেছে নিতে পারেন এমন কিছু অচেনা-অজানা জায়গাকে। সাধারণত ছুটি পেলেই আমরা দার্জিলিং (Darjeeling), দীঘা (Digha), মন্দারমনি (Mandarmani), সিমলা (Shimla), সিকিম (Sikim) এই জায়গাগুলোকে বেছে নিই। কিন্তু তার মধ্যেও এমন অনেক জায়গা রয়েছে যার নাম হয়তো অনেকের কাছে অজানা বা জানা থাকলেও যাওয়া হয়নি। শীতের ছুটি পড়ে গিয়েছে। আর দু’দিন বাদেই ২০২৩ শুরু হবে। বছরের (New Year) শুরুতে সকলেরই ঘুরতে যেতে ইচ্ছে হয়। পাহাড় আর সমুদ্র তো সেই তালিকায় থাকে, কিন্তু যাদের ইচ্ছে দেশের সমস্ত জায়গায় যাওয়া বা ঘোরা বা এমন অদ্ভুত জায়গা দেখার যার নাম আগে শোনেননি, তাহলে তাঁরা তাঁদের তালিকায় রাখতে পারেন এই জায়গাগুলি। চলুন এই বছরটা শুরু হোক কিছু অন্যরকমভাবে। এই বছরটায় ট্রাই করা যাক অন্য কিছু।
লেক ন্যাট্রন (Lake Natron)-
নাম শুনে প্রথমেই হয়তো ভাবছেন, এটি আবার কোন জায়গা? কোথায়ই বা অবস্থিত? লেক ন্যাট্রন তানজানিয়ায় অবস্থিত। এখানে গেলে আপনার চোখে পড়বে, পশু-পাখির মূর্তি। কিন্তু সেগুলো আসলে মূর্তি বা ভাস্কর্য নয়, এর পেছনে রয়েছে অন্য কাহিনী। এখানে মৃত্যুপুরীর মত থমথমে পরিবেশ দেখে ঘাবড়ে যেতে পারেন কিছুটা। কিন্তু সেইসঙ্গে এই হ্রদটি দেখতে সুন্দর যা, আপনাকে মুগ্ধ করবে। ভয়ঙ্কর কিন্তু সুন্দর। লবণাক্ত এই হ্রদটির নাম লেক ন্যাট্রন। এই হ্রদের জলের রং লাল। অনেক বিজ্ঞানীরা বলেছেন, পশু-পাখিরা এই রঙের জন্য আকৃষ্ট হয়ে হ্রদে নামেন। যে কারণে মৃত্যু হয় তাঁদের। এখানে অত্যাধিক পরিমাণে সোডিয়াম কার্বনেট এবং সোডা রয়েছে। যা চামড়াকে পুড়িয়ে দেয়। বলতে গেলে, টকটকে লাল রঙের এই হ্রদে নামলে পাথর হয়ে যায় পশু-পাখিরা। দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ২২ কিলোমিটার। এই হ্রদে নায়গ্রো নদীর জল এসে পড়ে। সেইসঙ্গে আশেপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের জলও এই হ্রদে পড়ে থাকে। ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই হ্রদের জল। মূলত হ্রদের জলে ক্ষার থাকায় ত্বক পুড়ে যায়। জলের তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিলফ্রা রিফট (Silfra Rift)-
সিলফ্রা রিফটের জল অত্যন্ত পরিষ্কার আর পরিচ্ছন্ন। এটি অবস্থিত আইসল্যান্ডে। এখানে অনেকেই স্কুভাড্রাইভিং করেন। যদি উত্তর আমেরিকা ও ইউশিয়ান প্লেট আপনি নতুন বছরে স্পর্শ করতে চান, তাহলে আইসল্যান্ডের সিলফ্রা রিফটে অবশ্যই ঘুরে আসুন। আর করে আসুন স্কুভাড্রাইভিং। এখানকার মনোরম পরিবেশ আপনাকে সত্যিই মুগ্ধ করবে। জলের নিচের পরিবেশ কেমন হয়, তা দেখার জন্য যদি আপনার মধ্যে উৎসুকতা থাকে, তাহলে আগামী বছরের শুরুতে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যানিং আগে রাখুন এই জায়গাটিকে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গল (Bermuda Triangle)-
এই জায়গাটিকে ‘ডেভিল ট্রায়াঙ্গল’ বলা হয়ে থাকে। এখানকার বাসিন্দারা এটির নাম ‘শয়তানের ত্রিভুজ’ রেখেছেন। এর পেছনে রয়েছে একটি কারণ। বলা হয়, এই বিশাল জায়গায় অনেক বিমান-জাহাজ হারিয়ে গিয়েছে। এর তিনটি প্রান্তের একটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা, অপরটি পুয়ের্তো রিকো এবং আরেকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বারমুডা দ্বীপের সঙ্গে যুক্ত। তবে এখানকার বাসিন্দারা এটিকে ‘ডেভিল’ বললেও, এখানকার হ্রদটি খুবই সুন্দর। যা দেখলে মন জুড়িয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম একটি। এটি দেখে চিরকাল বিস্মিত হয়েছে মানুষ। ১৯৪৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত বহু রহস্যজনক ঘটনা ঘটেছে এখানে। অনেকে মনে করেন, এটি আসলে অশুভ শক্তির ডেরা। তবে অস্ট্রেলিয়ান বিজ্ঞানী কার্ল ক্রুজেলনিকি জানিয়েছেন, এখানে কোনও রহস্যই নেই।
ডেড ভ্যালি (Death Valley)-
এই জায়গাটি খুবই শুষ্ক প্রকৃতির। দেখলে মনে হয়, মৃত্যু যেন হাতছানি দিচ্ছে। তাই নামে ‘ডেড’ও এই কারণেই মনে হয়। এটি অবস্থিত নাম্বিয়াতে। বিশ্বের সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান এটি। এতটাই শুষ্ক একটি জায়গা যে, মরা গাছগুলির শিকড় পর্যন্ত বেরিয়ে আসে। কিন্তু এরকম একটি জায়গায় থাকেন কয়েকশো মানুষ। কারোর কথায়, এখানে যখন লোক থাকতে শুরু করে তখন গরমের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এখানকার লোকজনদের বাড়িতে এয়ারকন্ডিশনিং-এর ব্যবস্থা থাকে, ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য। কাজেই থাকতে অসুবিধা হয় না।
সোকোট্রা দ্বীপ (Socotra)-
এটি ইয়েমেনে অবস্থিত। একে আবার ‘এলিয়ান আইসল্যান্ড’ বলা হয়ে থাকে। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ যথেষ্ট সুন্দর। কিন্তু সেইসঙ্গে ভয়ানকও বটে। এখানে অনেক বিরল প্রজাতির গাছপালা ও পশু-পাখি দেখা যায়। এই দ্বীপের গাছপালা দেখলে মনে হবে যেন কোনও সিনেমা দেখছেন। এই সম্পর্কে মানুষের কাছে দীর্ঘকাল কোনওরকম কোনও তথ্য ছিল না। জায়গাটি খুঁজে পাওয়ার পরে, এখানকার গাছপালা আর পরিবেশ দেখে অবাক হয়েছেন মানুষ। ইয়েমেন থেকে ৩৪০ কিলোমিটার দূরে এই দ্বীপে অধিকাংশ গাছপালা প্রায় দু’কোটি বছরের পুরনো। এখানে আসা বিজ্ঞানী-গবেষকরা দাবি করেছেন, প্রায় ৮০০ রকমের বিরল প্রজাতির প্রাণী আর গাছপালা দেখতে পাওয়া যাবে এখানে গেলে।
কুরুকড ফরেস্ট (Crooked Forest)-
এটি পোল্যান্ডে অবস্থিত। এখানে গেলে অদ্ভুত গাছের হদিশ পাওয়া যাবে। গাছের গোড়াগুলি বাঁকানো থাকে এখানে। এমন গাছ বেশি আর কোথাও নেই। কিন্তু কেন থাকে এই গাছগুলির গোড়া বাঁকানো? এর পিছনের আসল কারণ অনেকের কাছেই অজানা। অনেকে আবার এই বিষয়ে নানা মত পোষণ করেছেন। এখানে যেমন অনেক মানুষ ঘুরতে আসেন, তেমন অনেকে শ্যুটিংও করতে আসেন। কারোর মতে, কোনও এক তুষারঝড়ে গাছগুলির এরকম অবস্থা হয়েছে। কেউ আবার বলে থাকেন, কৃত্রিম কোনও পদ্ধতি অবলম্বন করে এগুলিকে এরকম আকৃতি দেওয়া হয়েছে। কারোর কথায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর শহরটি ধ্বংস হয়ে যায়। বিশ্বযুদ্ধের সময় সামরিক ট্যাঙ্ক গিয়েছিলে এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে। আর তাই ট্যাঙ্কের আঘাতে গাছগুলির গোঁড়া এরকম বাঁকানো। তবে এখানকার প্রকৃতি দেখতে খুবই সুন্দর।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম