।। প্রথম কলকাতা ।।
Bangladesh: মানবাধিকার লঙ্ঘণ করছে বাংলাদেশ? বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের চেনা সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। একের পর এক গুরুতর অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। বড় আন্তর্জাতিক খেলা চলছে, বলছেন শেখ হাসিনা। কি খেলা? কী ইঙ্গিত করতে চাইছেন তিনি? সত্যিই কি বাংলাদেশের উন্নতি সহ্য করতে পারছে না যুক্তরাষ্ট্র? বিস্ফোরক দাবি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর “যুক্তরাষ্ট্র আমাকে ক্ষমতায় চায় না”। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে কেন এই বিরক্তি প্রকাশ শেখ হাসিনার? কেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কিছু কিনবে না বলে জানিয়ে দিল বাংলাদেশ? বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কোন টার্নিং পয়েন্টের দিকে মোড় নিচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে কতটুকু জানেন আপনারা? মুখ খুললো বাংলাদেশ, জানিয়ে দিল নিজেদের স্ট্যান্ড পয়েন্ট। কি বলছে বিবিসির রিপোর্ট?
বাংলাদেশের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অভিযোগ, বিচার বর্হিভূত হত্যা, গণতন্ত্র এবং রোহিঙ্গা ইস্যু সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিবিসির সাক্ষাৎকারে অকপট শেখ হাসিনা। কিন্তু, কোন নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হচ্ছে? ২০২১ সালের ডিসেম্বরে, বাংলাদেশের সামরিক ও পুলিশের কর্মকর্তা সহ ৭ জনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ। এরপর ওই নিষেধাজ্ঞা আর প্রত্যাহার করা হয়নি। কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্র কেন বাংলাদেশের এক বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে? কি মনে করেন শেখ হাসিনা? বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, যে বাহিনীর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেটা তাঁদের পরামর্শেই ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। তাঁদের প্রশিক্ষণ আর সরঞ্জাম যুক্তরাষ্ট্রই দিয়েছিল
যেভাবে তাঁরা বাহিনীটাকে তৈরি করেছে, তাঁরা সেভাবেই কাজ করছে। তাহলে কেন যুক্তরাষ্ট্র এই নিষেধাজ্ঞা দিল? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েই, মারাত্মক দাবি করে বসলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, তাঁর কাজ অব্যাহত থাকুক তা চায় না যুক্তরাষ্ট্র। তাঁর দাবি, গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্র অব্যাহত থাকায় দেশে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের জন্য যেসব উন্নতি করেছেন, সেটা যুক্তরাষ্ট্র সহ্য করতে পারছে না।
এরপরই রীতিমতো বিরক্তি প্রকাশ করে প্রশ্ন তুলেছেন কীসের ভিত্তিতে স্যাংশান দিল যুক্তরাষ্ট্র? একইসাথে জানিয়ে দিয়েছেন নিজেদের সিদ্ধান্তের কথাও। বলেছেন, যারা বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন দেবে, তাদের কাছ থেকে কোনো জীনিস কিনবে না বাংলাদেশ। জেদ দেখিয়ে বাংলাদেশ বলেই দিয়েছে, দরকার হলে এক বেলা খেয়ে থাকবে, তাতেও অসুবিধা নেই। তবে, শুধু নিষেধাজ্ঞা নিয়েই মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তা নয়। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আগে বাংলাদেশে বন্দুকযুদ্ধের একটি পরিসংখ্যান এর ও জবাব দিয়েছেন তিনি। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির আগে ২০১৮ সালে ৪৬৬ জন মানুষ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। ২০১৯ সালে ৩৮৮ জন। ২০২০ সালে ১৮৮ জন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার পর এই সংখ্যা মাত্র ১৫ জনে নেমে এসেছে। যদিও, বাংলাদেশ তা মানতে নারাজ। বাংলাদেশ এর বক্তব্য, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এসব হত্যাকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করেনি। স্বাভাবিকভাবেই এরপর যে প্রশ্নটা আসে, আমেরিকায় কি ঘটছে? প্রায় প্রতিদিন একাধিক হত্যাকাণ্ড এক্ষেত্রে বাংলাদেশ মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নিজেদের ব্যাপারে আরও মনোযোগী হওয়া উচিত।
আসলে, বাংলাদেশ বেশ চাপে রয়েছে এটা পরিষ্কার। কারণ, বাংলাদেশের বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং সংবাদ মাধ্যমের ওপর চাপ তৈরি করা সম্পর্কেও বিভিন্ন সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতি অভিযোগ তুলে বাংলাদেশের বক্তব্য। বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সমর্থন করে না বাংলাদেশ। তাঁদের দেশে আইন আছে, আইন প্রয়োগকারীরা কোন অন্যায় করলে তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হয়, তাঁদের শাস্তির ব্যবস্থাও করা হয়। শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলেছেন, মানবাধিকার সংস্থাগুলো কখনো তাঁর মানবাধিকার নিয়ে কেন কথা বলেনি? আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় খেলা চলছে, আঁচ করছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি ক্রমেই যেন জটিল হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সম্পর্কের সমীকরণ যখন বদলাচ্ছে, তখন আমেরিকার কেউ কেউ মনে করছে, বলছে আধা-সামরিক বাহিনী র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার আসল কারণ, বাংলাদেশের মানবাধিকার অবস্থাকে আবার সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা। তাহলে কি বাংলাদেশ এর মানবাধিকার অবস্থা ঠিক নেই? কি মনে করছে বাংলাদেশ?
বাংলাদেশ এর দাবি, সবসময়েই মানবাধিকার রক্ষা করে আসছে তাঁরা। কারণ এটা বুঝতে হবে যে তাঁদের কাছে মানবাধিকার মানে শুধু শরীরের নিরাপত্তা নয়। বাংলাদেশের কাছে মানবাধিকার মানে তাদের নিরাপত্তা, খাদ্য, শিক্ষা, ভোট, সুস্থ থাকার অধিকার। যেসব কটাই বাংলাদেশ রক্ষা করছে বলে দাবি করা হচ্ছে। একইসাথে মুক্ত ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগ্রাম করেছেন সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে, সেই বিষয়টাও এই সময় সামনে এসেছে। সামনেই নির্বাচন, এই ইস্যুটা ভীষণ রকম প্রাসঙ্গিক। যদিও, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বলছে, অবাধ এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হয়নি বাংলাদেশে। উঠে এসেছে রোহিঙ্গা প্রসঙ্গও। বাংলাদেশের বক্তব্য, মানবাধিকারের কথা বিবেচনা করেই রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তবে, জাতিসংঘ এবং অন্য সংগঠনগুলোর এখন ব্যবস্থা করা উচিত যাতে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশেই নিরাপদ থাকতে পারে, এটা জাতিসংঘের নিশ্চিত করার দায়িত্ব, বাংলাদেশ এর নয়।
কিন্তু এই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বাংলাদেশ কি আদৌ সমর্থন পাচ্ছে? সমর্থন পেলেও, তা ইতিবাচক নয় বলে মনে করছে বাংলাদেশ। সবথেকে অদ্ভুত ব্যাপার, এরপরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় অভিযোগ করে বাংলাদেশ মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। তাই বিষয়টা ভাবাচ্ছে। যদিও বাংলাদেশ এর সাফ জবাব, এসব অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি নয়। মানবাধিকার অবস্থা থেকে শুরু করে নির্বাচন, রোহিঙ্গা ইস্যু সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ বেশ কনফিডেন্ট। আর রইল বাকি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রসঙ্গ। সেক্ষেত্রে, একটা বিষয় মনে করিয়ে দিই এবার প্রথম নয়। বাংলাদেশের পার্লামেন্টে গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়েও শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেছিলেন, আমেরিকা বাংলাদেশের ক্ষমতায় পরিবর্তন আনতে চায়। কিন্তু, কেন তিনি এটা মনে করছেন বা বলছেন? সেটাও এবার পরিষ্কার করে দিয়েছেন, যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের সন্ত্রাস মোকাবিলার জন্য কাজ করছে, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তখন যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু লঙ্ঘনকারীদের পক্ষ অবস্থান নিচ্ছে, যারা ভুক্তভোগী, তাদের পক্ষে নয়। এটাই ভাবাচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা শেখ হাসিনাকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম