।। প্রথম কলকাতা ।।
United States and North Korea: বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের দামামা। রাশিয়া-ইউক্রেন লড়ইয়ের মাঝে শুরু উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত। একজন ছুঁড়ছে মিসাইল, অপরজন কুখ্যাত বোমা। আড়ালে তীব্র ঘৃণা, যার সূত্রপাত ১৯৫০ সালে। উত্তর কোরিয়া নিজের মতো করে একের পর এক পারমাণবিক পরীক্ষা চালিয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের রক্তচক্ষুর পরোয়া করেনি। দিনের পর দিন তিক্ত হয়েছে দুই রাষ্ট্রের সম্পর্ক। এই সাপে-নেউলের সম্পর্কের জল কোন দিকে এগোবে? কিম কি আদৌ বোমারু বিমানের সাথে পেরে উঠবে?
কোরিয় যুদ্ধ হয়েছে প্রায় ৭০ বছর হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনো দুই দেশের মধ্যে শত্রুতার উত্তেজনা বিন্দুমাত্র কমেনি। সময়ের গভীরতা ৭ দশক কেটে গেলেও যুদ্ধের রেশ রয়ে গিয়েছে। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উত্তর কোরিয়ার প্রধান কিমের মাথায় এখন বড়সড় প্ল্যান। একদিকে উত্তর কোরিয়া ছুঁড়ছে ব্যালেস্টিক মিসাইল, অপরদিকে আমেরিকা দেখাচ্ছে B1B ল্যান্সার বোমারু বিমানের কামাল। উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রে টার্গেট হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপান। আর জাপানে আঘাত হানা মানে আমেরিকার আতেঁ ঘা দেওয়া। অপরদিকে দেশটি দক্ষিণ কোরিয়ার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে । কোন হুঁশিয়ারি ছাড়াই কোন প্রতিবেশী দেশে এইভাবে মিসাইল ছোঁড়া উস্কানিমূলক এবং বিপদজনক, যাকে এক কথায় বলা হয় আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন। বিশ্ব রাজনীতির দিক থেকে শক্তিধর যুক্তরাষ্ট্র চারিদিক থেকে একটু চাপে পড়ে গেলেও, দমে যায়নি। সামনেই রয়েছে আমেরিকার মধ্য মেয়াদী নির্বাচন। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে কিম। তার সামরিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে আমেরিকায় আলোচনার টপিক হতে চাইছে। ইচ্ছা করেই প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও বড় কিছুর। যেমনটা করেছিল ২০১০ এবং ২০১৭ সালে। প্রথমে উত্তেজনার পারদ ছড়ানো, তারপর তা ভীতিতে নিয়ে যাওয়া। একদল বিশ্লেষক মনে করছে, উত্তর কোরিয়ার ব্যালেস্টিক প্রযুক্তি এখনো পোক্ত নয়, তাই পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়ে সে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর মাথার অংশ গুলি আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সঠিকভাবে লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করতে পারছে না। কিন্তু কিমের আগ্রাসী মনোভাবের সঙ্গে এই যুক্তি ধোপে টেকেনি। এটি পারমাণবিক শক্তি সম্পন্ন আমেরিকার প্রতি হুমকির প্রদর্শন । কিমের চোখ রাঙানি কোনদিনই আমেরিকা সহ্য করেনি। আজ নয় সেই ১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধের সময় থেকেই আমেরিকা আর উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক একেবারেই ভালো নয়। যার জেরে শুরু হয়েছে কিমের ব্যালেস্টিক মিসাইল ভার্সেস বাইডেনের বোমারুর লড়াই।
ঝামেলার সূত্রপাত
যুক্তরাষ্ট্রে দুই কোরিয়ার লড়াইকে বলা হয় ‘ফরগেটন ওয়ার’ অর্থাৎ যে যুদ্ধের কথা মানুষ ভুলে গেছে। কিন্তু প্রায় ৭০ বছর পেরিয়ে গেলেও দুই কোরিয়ার দ্বন্দ্ব এখনো বহমান। প্রায় সময় দেখা যায় দুই দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুঙ্গে। নভেম্বর মাসের শুরুতেই দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে প্রায় দশটি মিসাইল ছুঁড়েছে কিম। যদিও দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়ার এইরূপ আক্রমণাত্বক মনোভাব এর আগেও দেখেছে। আসলে দুই দেশের দ্বন্দ্বের ইতিহাস লুকিয়ে রয়েছে ১৯১০ থেকে ১৯৪৫ সালের ইতিহাস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন জাপানের সাম্রাজ্য ভাঙ্গতে শুরু করে তখন কোরিয়া নিয়ে শুরু হয় লড়াই। অবশেষে ১৯৪৮ সালে দুই কোরিয়ার ভাগ হয়। একদিকে থাকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত দক্ষিণ কোরিয়া, অপরদিকে যায় কমিউনিস্ট সমর্থিত উত্তর কোরিয়া। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। দুই কোরিয়া কেউ কাউকে বৈধ হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। যার কারণে 1950 সালে একে অপরকে আক্রমণ করে। যাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় স্নায়ুযুদ্ধ। এই যুদ্ধে চীন বড়সড় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় উত্তর কোরিয়ার দিকে। দুই কোরিয়াকে সামনে রেখে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে চীন আর যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৫৩ সালে উত্তর কোরিয়া, চীন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি যুদ্ধ বিরোধী চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হলেও দক্ষিণ কোরিয়া এই চুক্তিতে সায় দেয়নি। এই তিন বছরের লড়াইয়ে উভয় পক্ষের ব্যাপক ক্ষতি হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের মৃত্যুর পাশাপাশি বহু মানুষের হদিস আজও মেলেনি। এই যুদ্ধের পর এখনো পর্যন্ত প্রায় সাত হাজারের বেশি মার্কিন সেনা নিখোঁজ রয়েছেন। যার জেরে উত্তর কোরিয়া এবং আমেরিকার মধ্যে চলছে গোপন লড়াই।
দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান মহড়ার মাঝে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ আগুনে ঘি ঢালার মত উত্তেজনা বাড়িয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া সীমায় বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করছে উত্তর কোরিয়া। যার মধ্যে চারটি স্বল্প পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে। উত্তর কোরিয়ার চলতি সপ্তাহে কয়েক ডজন ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ এক প্রকার যুদ্ধের উস্কানি।
B-1B ল্যানসারের ভয়ে কাঁপে গোটা বিশ্ব
B-1B ল্যানসারের ভয়ে কাঁপে গোটা বিশ্ব। বলা হয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের দূরপাল্লার বিমান বাহিনীর মেরুদণ্ড। যুক্তরাষ্ট্র এই মডেলের প্রায় ১০০ টি বিমান তৈরি করেছে, যার মধ্যে ৬৬ টি সার্ভিসে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আজ পর্যন্ত এই মারাত্মক বোমারু বিমান কাউকে বিক্রি করেনি। এটি সবথেকে শক্তিশালী যুদ্ধবিমান। B-1B খুব সহজেই এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে উড়ে যেতে পারে। এর ইলেকট্রনিক জ্যামিং ইকুইপমেন্ট, শক্তিশালী ইঞ্জিন , ইনফ্রারেড কাউন্টার মেজার, রাডারের অবস্থান এবং সতর্কতা ব্যবস্থা অন্যান্য দেশের যুদ্ধাস্ত্র থেকে অনেক এগিয়ে । এর উড্ডয়নের দুর্দান্ত গতি জয় করেছে প্রায় ৫০টি বিশ্ব রেকর্ড। এগুলি আকারে প্রায় ১৪৬ ফুট লম্বা এবং প্রস্থে ১৩৭ ফুট। প্রায় ৩৫ হাজার কেজি পেলোড অর্থাৎ অস্ত্র, গোলাবারুদসহ সৈন্য নিয়ে এটি অনায়াসে বহুদূর পর্যন্ত উড়ে যেতে পারে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়তে পারে। এই বোমারু বিমান পরিচালনা করতে ভিতরে থাকেন দুই জন পাইলটের সঙ্গে চারজন ক্রু মেম্বার। এটা শুধু শত্রুকে ধ্বংস করে না, শত্রুর আক্রমণকে রুখে দিতে রয়েছে বিশেষ ইলেকট্রনিক্স ব্যবস্থা। যদি অন্য কোন দেশে অবস্থিত ঘাঁটিতে এই বিমান মোতায়ন করা থাকে সেক্ষেত্রে কিন্তু ধরে নিতে হবে সেই দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র। এই বিমানটির সবথেকে বড় শক্তি হল, এটি AGM 86 লং ক্রুজ মিসাইলের পাশাপশি AGM 69 বহন করতে সক্ষম। এখানে অস্ত্র রাখার জন্য প্রায় তিনটি স্তরের ব্যবস্থা রয়েছে। যার মধ্যে রাখা যাবে প্রায় ৩৫ হাজার কেজির অস্ত্র। এছাড়াও বাহ্যিক হার্ট পয়েন্টে রাখা যাবে প্রায় ২৬০০০ কেজির অস্ত্র। যদিও বর্তমানে এই বিমান থেকে পরমাণু অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র এক বার কোমর বেঁধে এই বোমারু বিমান নিয়ে যুদ্ধে নামে তাহলে মুশকিলে পড়তে পারে কিম।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম