।। প্রথম কলকাতা ।।
Uniform Civil Code: ২০২৪র আগে দেশে ইউনিফর্ম সিভিল কোড আনতে পারে মোদী সরকার। ৩৭০ ধারার পর মোদী সরকারের বড়সড় স্টেপ। ইউনিফর্ম সিভিল কোড কি? এই আইন লাগু হওয়া মানেই দেশের ইতিহাসে বড় সিদ্ধান্ত। কেন কংগ্রেস এর বিরোধিতা করতে উঠেপড়ে লেগেছে? ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগেই বড় কিছু ঘটতে চলেছে দেশে৷ ৩৭০ ধারার থেকেও বড়। এবার ভারতে লাগু হতে পারে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। জল্পনা বাড়ছে কারণ জাতীয় আইন কমিশন বিভিন্ন ধর্মীয় সংস্থা ও সংগঠনের এ নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন ২০২৪শের আগে আবারও বিতর্কের ঝড় উঠবে দেশে।
ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সবার আগে এটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন৷ দেশের বিরোধী দল কংগ্রেস লাগাতার বিরোধ করছে এই আইন নিয়ে। কেন করছে কী স্বার্থ রয়েছে নেপথ্যে সেটা পরিস্কার হয়ে যাবে এখনই। ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হলে সব ধর্মের মানুষ একই রকম বিবাহ
বিবাহ বিচ্ছেদ ও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইন মানতে বাধ্য থাকবেন। ওই আইন কার্যকর হলে মুসলিমদের পার্সোনাল ল’বোর্ডের কার্যত কোনও ভূমিকা থাকবে না। এমনকি খ্রীষ্টান বা অন্যান্য সম্প্রদায় যে আলাদা আইন মেনে চলেন তার বদলে সব ধর্মের মানুষের জন্য থাকবে এক ধরণেরই আইন।
মোদী সরকার কেন চাইছে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু হোকে দেশে? ইতিহাস জড়িয়ে রয়েছে নেপথ্যে৷ তবে তার আগে একটু বিস্তারিত জেনে নিন৷ যেমন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রায় ২০০ জনজাতি তাদের নিজস্ব আইন মেনে চলেন। তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিও রয়েছে। হিন্দুদের ব্যক্তিগত আইনে নাবালক সন্তানের প্রথম অভিভাবক বাবা দ্বিতীয় অভিভাবক মা। কিন্তু বিবাহ বহির্ভুত সন্তানের ক্ষেত্রে প্রথম অভিভাবক মা। এদিকে মুসলিম ধর্মাবলম্বিদের ক্ষেত্রে যেমন প্রচলিত রয়েছে বহুবিবাহ। হিন্দুদের ক্ষেত্রে একেবারেই আইনবিরুদ্ধ। খ্রীষ্টান কোন দম্পতির ক্ষেত্রে পুরুষ যদি অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হন সেক্ষেত্রে স্ত্রীরা পারেন বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আপিল করতে। মুসলিম ধর্মে কিন্তু দত্তক নেওয়াও তাদের আইনবিরুদ্ধ। কিন্তু ইউনিফর্ম সিভিল কোড যদি একবার চালু হয়ে যায় তাহলে সব ধর্মের জন্য থাকবে একটাই নিয়ম৷ কিন্তু এক্ষেত্রে বড় বিতর্ক রয়েছে।
এই আইন লাগু হলে বিরোধিতায় নামার বড় আশঙ্কা রয়েছে সংখ্যালঘু সমাজ ও বিরোধীদের।
মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের দাবি, এমনটা হলে
শরিয়তি আইনের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। অভিযোগ অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মাধ্যমে মুসলিমদে অধিকার হরণের চেষ্টায় নেমেছে সরকার। পাল্টা বিজেপির দাবি এই আইন চালু হলে সমাজের অসাম্য ঘুচবে। মহিলাদের অধিকার বেড়ে যাবে কয়েকগুণ। একইসঙ্গে সংবিধানে যে সাম্যের কথা বলা আছে সেটাও প্রতিষ্ঠিত হবে। এবার আসা যাক ব্যাকগ্রাউন্ডে এক বিধান এক প্রধান এক নিশান। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের আমলে জনসঙ্ঘের সময় থেকে এটাই ছিল গেরুয়া শিবিরের স্লোগান। দেশজুড়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু হবে জন্মলগ্ন থেকে বলে আসছে বিজেপি।২০১৬ সাল থেকেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করে দেয় সরকার। দেশের ২১ তম আইন কমিশনকে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বলা হয়। ২০১৮ সালে আইন কমিশনের মেয়াদ ফুরিয়ে যায়। ২২ তম আইন কমিশনকে একই দায়িত্ব দেওয়ার কথা সংসদে জানিয়েছে সরকার।
এখন বিরোধীরা সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। কিছুদিন আগেই দিল্লিতে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু পক্ষে সওয়াল করেছিল সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত। এমনকি মহারাষ্ট্রের কোলাপুরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন “তিন তালাকের পর কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পরে দেশ এ বার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়ন করার প্রশ্নে এগিয়ে চলেছে। এখন প্রশ্ন হল যে দেশের সংবিধান সাম্যের কথা বলে সেখানে ধর্মীয় পরিচিতি ভিত্তিতে ব্যক্তিগত আইন থাকতে পারে কিনা তা নিয়ে মতভেদ বিতর্ক বরাবর হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের একপক্ষ বলছে সংবিধান আমাদের যে মৌলিক অধিকার দিয়েছে তাতে রয়েছে সাম্যের অধিকার, ধর্মাচরণের অধিকার। নানা ব্যক্তিগত আইনের ধারা নিয়ে আদালতে নানা মামলাও হয়েছে ব্যক্তিগত আইন মহিলাদের অধিকার অনেকাংশে খর্ব করে এমনও অভিযোগ উঠেছে। এখন প্রশ্ন হল তাহলে সরকারের কি করা উচিত? সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানের ৩৬ থেকে ৫১ নম্বর অনুচ্ছেদে নির্দেশমূলক নীতিতে
বলা রয়েছে দেশ চালাতে সরকারের নীতি কি হবে।
এই নির্দেশমূলক নীতির ৪৪ নং অনুচ্ছেদে বলছে
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালু করতে হলে রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তুরস্ক মিশরের মতো মুসলিম দেশগুলোতেও সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইনে ধর্মের কোনও প্রভাব নেই৷ এবার দেখার কোন পথে এগোয় এই বিষয়৷
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম