।। প্রথম কলকাতা ।।
Mousuni Island: চারদিকে অনন্ত জলরাশি আর তার মাঝে সবুজ বনানী ঘেরা ছোট্ট একটি দ্বীপ। কলকাতা থেকে মাত্র ৪ থেকে ৫ ঘন্টাতে পৌঁছে যাওয়া যায় এই সুন্দর দ্বীপটিতে। গ্রামীণ আবহে সমুদ্রের পাড়ে বসে দিব্যি কাটিয়ে দেওয়া যায় ছুটির দিনগুলো। তাই নিস্তব্ধ প্রকৃতির মাঝে কলকাতার খুব কাছে ছুটি কাটাতে পর্যটকরা হামেশাই চলে আসেন এই দ্বীপে। দক্ষিণ সুন্দরবনের নামখানায় অবস্থিত এই ছোট্ট দ্বীপটির নাম মৌসুনি দ্বীপ। মৌসুনি দ্বীপ এখন আর একটা তাজপুর বা মন্দারমনি হয়ে উঠেছে।
তিনদিকে চেনাই নদী আর একদিকে সাগরের মোহনা। এখানে সমুদ্র কিন্তু শান্ত। জোয়ারের সময় জল আসে এবং ভাঁটায় জল সরে যায় বহু দূরে। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে গত কয়েক বছরে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দক্ষিণ সুন্দরবনের নামখানার মৌসুনি দ্বীপ। দীঘা, মন্দারমনি, বকখালির পাশাপাশি সমুদ্রের পাশে নির্জনে থাকার অন্যতম সুন্দর জায়গা এটি। শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে চাইলে চলে যেতে পারেন দূষণহীন এই জায়গায়। যেখানে শুধু নির্জনতা আর নির্জনতা। আর তার সাথে এডভেঞ্চারও বটে।
প্রকৃতির মাঝে নিজেকে মিলিয়ে দিতে, প্রকৃতির সাথে কথা বলতে, নিজেকে হারিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে যেতে পারেন এই মৌসুনি দ্বীপে। যা পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে নির্জনতম দ্বীপ নামে পরিচিত। যাদের হাতে ছুটি একেবারেই কম তারা অবশ্যই যেতে পারেন। ২দিন ১রাত্রি কাটাতে একদম সঠিক জায়গা। এখানে দীঘা বা মন্দারমণির মতো পর্যটকদের ভিড় নেই, হুড়োহুড়িও নেই। প্রকৃতি, সমুদ্র সৈকতই কিন্তু মৌসুনি দ্বীপের এক এবং একমাত্র আকর্ষণ। আলাদা করে মৌসুনি দ্বীপে কোনো সাইটসিন নেই।
দিনের বিভিন্ন সময়ে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন রূপ উপভোগ করা, সমুদ্র সৈকত এক্সপ্লোর করা এবং ঘন্টার পর ঘন্টা সমুদ্র স্নান হ্যাঁ এগুলোই হলো মৌসুনি দ্বীপের বিশেষ আকর্ষণ। এই দ্বীপ গঙ্গাসাগর মোহনার কাছাকাছি হওয়ায় মৌসুনি আইল্যান্ডে জোয়ারের সময় ও ঢেউ খুব বেশি নয়। জোয়ারের সময় স্নানের জন্য অসাধারন এক সমুদ্র সৈকত।ল এটি। ঢেউ বেশী থাকে না, মোহনার কাছে সমুদ্র। বালি মিহি, সারাগায়ে বালি হয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগও নেই। আর বিচটাও সমান, কোনোরকম দুর্ঘটনার ভয় থাকে না। এককথায় সমুদ্র স্নানের জন্য আদর্শ বিচ।
এখানে এসে আপনি পাখির সিম্ফনি এবং ঢেউয়ের শব্দে মুগ্ধ হয়ে উঠবেন। সূর্যাস্তের সময় মৌসুনি ঘন আঁধারে ঢেকে যায় এবং চারিদিকে অদ্ভুত এক নীরবতা বিরাজ করে।শুধুমাত্র ছোট ছোট পোকামাকড়ের শব্দ কানে ভেসে আসে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠলে দ্বীপে বসবাসকারী অসংখ্য পাখির টুইটার এবং কিচিরমিচির শব্দ আপনাকে মাতাল করে তুলবে। এছাড়াও এখান থেকে নৌকা করে চলে যেতে পারেন জম্বুদীপের উদ্দেশ্যে। সন্ধ্যের সময় এখানকার সমুদ্রের এক অপরূপ সৌন্দর্য। সন্ধ্যে হয়ে গেলে সমুদ্রতটে টর্চ নিয়ে হাটলে দেখা যায় মাটিতে জ্যান্ত শামুক, ঝিনুক চলাফেরা করছে। এছাড়াও ক্যাম্পে বন ফায়ারের ব্যবস্থাও করা হয়।
মৌসুনি দ্বীপ থেকে খুব কাছের একটি দর্শনীয় স্থান হলো “বালিয়ারা” যা উত্তরে প্রায় 3 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মৌসুনীতে থেকে “বালিয়ারা” যাওয়ার পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনাকে পাগল করে দেবে। “বালিয়ারা” যাওয়ার পথটি পাইন এবং জুনিপার গাছ দিয়ে অদ্ভুত ভাবে সেজে উঠেছে। খালি চোখে যতদূর দেখা যায়, “বালিয়ারা” তত দীর্ঘ নীরব সৈকত দ্বীপ এটি।” বালিয়ারা তে সূর্যাস্তের সময় সমুদ্র সৈকতের গভীর নীরবতা দ্বীপে একটি ভিন্ন পরিবেশ তৈরি করে। যেহেতু মৌসুনি পাখি পর্যবেক্ষকদের জন্য একটি ছোট স্বর্গ, তাই আপনি নিকটতম কাকরামারির চরেও যেতে পারেন, যেখানে প্রতিদিন সকালে অসংখ্য পাখি জড়ো হয়। হোয়াইট বিল্ড সি ঈগল, বার্ন শ্যালো, কমন ময়না, কমন কিংফিশার, লং বিল্ড স্টর্ক, করমোরেন্ট এবং আরও অনেক ধরনের পাখি আসে এই চরে।
কীভাবে যাবেন এই মৌসুনি দ্বীপে আসুন জেনে নিই, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় ভোর চারটায় প্রথম ট্রেন ধরে সকাল সাতটায় নামখানা স্টেশনে পৌঁছান। ট্রেনেই ঘুমিয়ে নেবেন তারপর সকাল সাতটায় নামখানা স্টেশনে নেমে ম্যাজিক ভ্যান করে দুর্গাপুর-বাগডাঙ্গা ঘাট কিম্বা হুজ্জুতি ঘাট এসে চেনাই নদী পেরিয়ে টোটো করে মৌসুনি দ্বীপে পৌঁছানো যায়। কলকাতা থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপ। বিখ্যাত হয়ে ওঠার সাথে সাথে প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্যাম্প গড়ে উঠছে। প্রাকৃতিক কারণে এখানে হোটেল করার অনুমতি নেই, তাই ক্যাম্প গুলোতে থাকার ব্যবস্থা বলতে তাঁবু, মাড হাউস, আর ছোট ছোট কটেজ। বর্তমানে প্রায় গোটা কুড়িটা ক্যাম্প সমুদ্র সৈকতে এক কিমির মধ্যে পাশাপাশি গড়ে উঠেছে। আরো অনেক ক্যাম্প গড়ে তোলার কাজ চলছে। বেশীর ভাগ ক্যাম্প গুলোর মালিক কলকাতা বেস বলে আগে থেকে প্রিবুকিং করে যেতে হয়।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম