।। প্রথম কলকাতা।।
Bangladesh: বাংলাদেশেই রয়েছে নীলনদ! একান্তে প্রকৃতিকে অনুভব করতে এই মায়াবী নদী যথেষ্ট। যার অসংখ্য বাঁকে রয়েছে এক একটি নতুন অধ্যায়। হাত বাড়ালেই ছুঁতে পারবেন পাহাড়ের সারি, মনে হবে স্বর্গে আছেন। রূপে সুন্দরী আর স্বভাবে বিচিত্র, সিলেটের সারি নদী। এই নদী জুড়েছে বাংলাদেশ আর ভারতকে। পূর্ব-পশ্চিমে এর বাঁকের জল একরকম, তো উত্তর-দক্ষিণের বাঁকের জল অন্যরকম। গতিবিধি এক্কেবারে সরল সোজা নয়। এঁকেবেঁকে চলার পথে প্রতি বাঁকে রেখে গিয়েছে জীবন জীবিকার স্নিগ্ধ ছবি। এই নদীকে নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের গর্বের শেষ নেই। পাহাড়ের ছোঁয়ায় এর জল এক্কেবারে স্বচ্ছ।
দুটি পাতার মাঝে যেমন ফোটার আগে ফুলের কুঁড়ি লুকিয়ে থাকে, তেমনি শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশের মধ্যে রয়েছে পাহাড়বেষ্টিত সিলেট। সিলেটের রূপ লাবণ্য নিয়ে যতই প্রশংসা করা হোক না কেন তা শেষ হবে না। সিলেটের প্রতি ভ্রমণপিপাসু মানুষদের এক চিরন্তন আকর্ষণ। একদিকে বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ সাংস্কৃতি, অপরদিকে নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এই দুই রূপের মিলমিশে সিলেটকে আরো বেশি মায়াবতী করে তুলেছে। এখানেই রয়েছে সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই মনু সারি ধোলাই প্রভৃতি নদীর গা ঘেঁষে অসংখ্য ছোট বড় টিলা। দেখলে মনে হবে প্রকৃতি কন্যা সিলেটকে সাজাতে বিধাতা একেবারেই কৃপণতা করেননি। সিলেটের পাহাড়ঘেরা অঞ্চলে রয়েছে ঢেউ খেলানো চা বাগান ।
সিলেটের সারি নদী কোথাও পরিচিত আবার লালাখাল নামে। ভারতের চেরাপুঞ্জি ঠিক নিচেই এর অবস্থান। চেরাপুঞ্জির পাহাড় থেকে এই নদী বয়ে গিয়েছে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে। এই নদীর অসংখ্য বাঁক। প্রত্যেক বাঁকেই রয়েছে আলাদা আলাদা ছবি। মনে হয় যেন একদম কাছেই রয়েছে পাহাড়ের সারি, হাত বাড়ালেই তাদের ছোঁয়া যাবে। যদিও পাহাড়গুলি যতটা কাছে মনে হয় আসলে তত কাছে নয়, দেখলে মনে হবে কেউ যেন নিজের হাতে থরে থরে পাহাড় গুলি সুন্দরভাবে সাজিয়ে রেখেছেন। পাহাড়ের গায়ে জমে রয়েছে টুকরো টুকরো মেঘ তারা কখনো দল বেঁধে থাকে আবার কখনো বা সবার অলক্ষে দুই পাহাড়ের মাঝে কোথায় হারিয়ে যায় তার হদিস পাওয়া যায় না। আর যখন মেঘ রাশির দল একত্রে জড়ো হয় তখনই তা বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে ঝর্ণা ধারা। লালাখালকে অনেকে খাল বলেন, যদিও এটি সারি নদীর অংশ। এটি তামাবিল রোডের কাছে সারি নদী হিসেবেই পরিচিতি পেয়েছে। এই নদীর জলের আশ্চর্য আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হল, বিভিন্ন রং। নদীর এক এক অংশে এক এক ধরনের জল পাবেন। কোথাও পাবেন নীল জল, কোথাও সবু, তো আবার কোথাও স্বচ্ছ। আপনি যদি সারি নদীর স্বচ্ছ জলরাশির উপর দিয়ে নৌকা কিংবা স্পিডবোটে করে যান, নদীর জলের রং আপনাকে মায়ায় জড়িয়ে ফেলবে। নদীর একদম নিচ পর্যন্ত দেখা যায়। বহু ভ্রমণ পিপাসু মানুষ আছেন যারা শীতের পূর্ণিমায় সারি নদীর সৌন্দর্য উপভোগ মিস করতে চান না। অনেকে মনে করেন, এই নদীর এত মায়া, তাই নাম লালাখাল না হয়ে নীলাখাল তো হতে পারত! বাংলাদেশের নীলনদ সারি নদী কেন পরিচিত হল লালাখাল নামে! যদিও এই নামকরণের কারণ স্থানীয়রাও স্পষ্ট ভাবে জানেন না।
নৌ পথে যেতে যেতে সারি নদীকে যতই দেখবেন ততই মুগ্ধতায় জড়িয়ে পড়বেন। কিছুক্ষণের জন্য আপনি হারিয়ে যাবেন কল্পনার রাজ্যে। সারি নদী স্বচ্ছ জলের প্রতিবিম্ব দিনের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম। সকালে একরকম, বিকেলে একরকম। তার এই ভিন্ন রূপের জন্য আসল রহস্য জানতে আপনার গোটা দিন লেগে যেতে পারে। যেখানে নদী একটু গভীর সেখানে জলের রং গাঢ়, আর যেখানে জল কম সেখানে হালকা নীল। এতটাই স্বচ্ছ যে নদীর একেবারে তলায় থাকা বালুকনাও খালি চোখে দেখতে পাবেন। নদীর দু’পাশে রয়েছে পাহাড় আর ঘিয়ে রঙা বালুরাশি।
নদীর পাড়ে মানুষের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে বৈচিত্র্যময় ছন্দ। কেউবা সকাল থেকে সেই সন্ধে পর্যন্ত নদীর গর্ভ থেকে বালতি করে বালি তুলে জমা করেন নৌকায়। অনেকে আছেন যারা শীত পড়তেই নদীর দুই পাড়ে ফুলকপি বাঁধাকপি টমেটো শিম প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণে চাষ করেন। স্থানীয় মানুষরা প্রচুর পরিশ্রম করেন। কেউ কেউ কয়লা সংগ্রহ করেন, কেউ বালি তোলেন। আসলে সারিকে কেন্দ্র করে ঠিক কত মানুষের জীবন আর জীবিকা রয়েছে তা বলা মুশকিল। নৌকায় বসে এই দৃশ্য দেখার মজাটাই আলাদা। আসলে সারি নদী বাংলাদেশের সিলেটের কিছু মানুষের জীবন জীবিকা আশ্রয় আর ভরসার স্থল। যার প্রতি বাঁকেই রয়েছে রহস্যের মোড়ক।
নদীর দুপাশে রয়েছে পাহাড় ঘেরা সবুজ বন, চা বাগান আর নানান জাতের গাছের সমাহার। যদি সারি নদীর সান্নিধ্য পেতে চান তাহলে শীতের সময়টাই বেস্ট। কারণ বর্ষায় স্রোতের জন্য জলের রং কিছুটা ফিকে হয়ে যায়। এছাড়াও শীতে বোনাস হিসেবে পাবেন নানান পরিযায়ী পাখি। লালাখাল বা সারি নদী সিলেট শহর থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে জৈন্তাপুর উপজেলায় রয়েছে। যার অবস্থান ভারতের চেরাপুঞ্জির ঠিক নিচে অর্থাৎ একদিকে বাংলাদেশ আর অপরদিকে ভারত। আপনি যদি প্রকৃতিকে একান্তে অনুভব করতে চান তাহলে ছুটে চলে যেতে পারেন এই সারি নদীর তীরে।
বিপদে সারি নদী
সারি নদী ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলছে। বিশেষ করে লালাখাল এলাকায় বহু জায়গায় নব্যতা হারিয়ে চড় জেগে উঠেছে। সারি নদীর গর্ভে এখনো রয়ে গিয়েছে পুরনো সেতুর স্থাপনা। পরিবেশবিদরা বিষয়টি নিয়ে বারংবার আওয়াজ তুললেও সেভাবে সক্রিয় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। মাঝে মাঝে এই নদীতে বালু বোঝাই নৌকা আটকে গিয়ে নৌ যানজট তৈরি হয়। ভারতের পাহাড় এলাকা থেকে নেমে আসা সারি নদী বাংলাদেশের লালাখাল হয়ে সিলেট তামাবিল অতিক্রম করে এটি বেঁকে চলে গিয়েছে গোয়াইনঘাট উপজেলার উপর দিয়ে। তারপর গোয়াইন ঘাটের সালুটিকর হয়ে ছাতক গিয়ে মিলিত হয়েছে সুরমায়। বর্তমানে বহু পর্যটকরা এই সারি নীল জলে নৌ যানে ঘুরতে আগের মত আর স্বাচ্ছন্দ বোধ করছেন না। নদীর লালাখালেও আগের মতো বালু উত্তোলনও হয় না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম