।। প্রথম কলকাতা ।।
Iran’s Drone: ইরানের ড্রোন কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে দেশগুলো। কি আছে ইরানি ড্রোনে? একবার কিনলেই ফেঁসে যাচ্ছে সব দেশ? কোথায় যাচ্ছে এতো এতো ইরানি ড্রোন? চীন নাকি রাশিয়া কোন দেশের অস্ত্র ভাণ্ডারে সব থেকে বেশি ইরানি ড্রোনের মজুদ? ৯০ টি দেশের লাইন, কারা আছে লিস্টে? কেন ইরানি ড্রোনের দিকে ঝুঁকছে দেশগুলো? ইরানি ড্রোনের বৈশিষ্ট্য কী? পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত থাকার পরেও ইরানি ড্রোনের বাজার রমরমা। ইরানের টার্গেট কতটা সফল হলো? কী বলছেন বিশ্লেষকরা? লাখ নয়, কোটি টাকার প্রশ্ন। ইরানের ড্রোন কিনছে কারা? যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কারা কিনছে ইরানি ড্রোন? ভেতরের খবরটা জানেন? ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়ে দিয়েছেন ইরানি ড্রোন কেনার জন্য ৯০ টা দেশের আগ্রহ থাকলেও চীনের ধারে কাছেও কেউ আসতে পারছে না। চীন একাই ইরানের ১৫ হাজার আনক্রুড এরিয়াল ভেহিকেল কেনার জন্য অপেক্ষা করছে। পাশাপাশি রয়েছে আরও একগুচ্ছ দেশ। কিন্তু, প্রশ্ন হলো কেন? কেন ইরানি ড্রোনের দিকেই ঝুঁকছে গোটা বিশ্ব?
আসলে, ওয়ার ড্রোন নির্মাণে ইরান কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে তা জলের মতো স্পষ্ট। বর্তমানে ইরানের হাতে অনেক রকম সামরিক আনক্রুড এরিয়েল ভেহিকেল আছে। এগুলোর মধ্যে শাহেদ ১৩৬ ড্রোন সবচেয়ে বেশি আলোচিত। যা বিস্ফোরক নিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে নিজেই বিস্ফোরিত হয়। এতে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষকে দ্রুত চাপে ফেলা যায়। শত্রুদেশের বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেলক্ষেত্র, গ্যাসক্ষেত্রের মতো স্থাপনা গুলোতে নিখুঁত হামলা চালানো যায়। ইরানি ড্রোনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য, এগুলো দামে সস্তা, ফলে যুদ্ধের খরচ কমাতেও ব্যাপক সহায়ক। এসব ড্রোন শুধু শাহেদ ১৩৬ নয়। শাহেদ ১২৯ এবং মোহাজের ৬ ড্রোন ও সবার মনোযোগ কেড়েছে। ইরানি ড্রোন যা পারে, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো ড্রোন দিয়ে সেটি সম্ভব নয়। এই কারণেই ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহ, লেবাননের হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ এবং ইরাক ও সিরিয়ার ইরান সমর্থিত যোদ্ধারা ইরানি ড্রোন ব্যবহার করছে।
এমনকি আফগানিস্তান, আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিস্তান ও কাজখস্তানের মতো দেশগুলোও ইরানি ড্রোনের অন্যতম ক্রেতা ইরানকে ঠেকানোর, ইরানি ড্রোন তথা সমরাস্ত্র শিল্পের সম্প্রসারণ ঠেকাতে ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে। অস্ত্র শিল্পে দেশটির অগ্রগতি থামাতে তেহরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে পশ্চিমারা। কিন্তু তার পরও ইরানকে থামানো যায়নি। ইরানের সুপ্রিম লিডার খামেনির প্রচারিত নীতি, লুক টু দা ইস্ট এর প্রশংসা করে অনেকেই বলেন, এই নীতি পশ্চিমা আধিপত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার এবং ইরানে চাপানো নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রশমিত করার জন্য দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক সম্প্রসারণের আহ্বান। এই পূর্বমুখী দৃষ্টিভঙ্গি গ্লোবাল পাওয়ার ব্যালেন্স কে ইরানের পক্ষে এবং পশ্চিমাদের বিপক্ষে ঝুঁকিয়ে দিয়েছে। ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে রাশিয়ার সাথে ইরানের সহযোগিতার সম্পর্ক বেড়েছে। ইউক্রেনে চলমান সংঘাতে রাশিয়ার পাশে থাকা এবং অস্ত্র দেওয়ার জন্য ইরান অনবরত পশ্চিমা সমালোচনার মুখে পড়েছে। পশ্চিমারা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার ভয়াবহ সামরিক অভিযানে অস্ত্র সরবরাহের জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেছে।
সামরিক বিশ্লেষকরাও মনে করছেন, সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ ইরানি ড্রোনকে বৈশ্বিক স্বীকৃতি দিয়েছে। অন্যদিকে, ইরানের ড্রোন, রকেট এবং স্বল্পপাল্লার মিসাইলের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে মার্কিন বাহিনী ড্রোন শিল্পে ইরানের এই সফলতা দেখে টিকতে পারছে না পশ্চিমা বিশ্ব। কিন্তু, দীর্ঘদিন এর চেষ্টার পর ড্রোন শিল্পে সফলতার মুখ দেখছে ইরান। ইরানে ড্রোন শিল্প শুরু হয় সেই ১৯৮০ এর দশকে! তবে ড্রোন শিল্পে ইরানের মূল বিপ্লব শুরু হয় ২০১১ সালে। শুরু থেকেই ড্রোন নিয়ে ইরানের বিশেষ পরিকল্পনা ছিল। প্ল্যান ছিল একটি শক্তিশালী ড্রোন বহর তৈরি করা। ৮০র দশকে ইসরাইল যেভাবে ড্রোন শিল্পে এগিয়ে গেছে কিংবা তারও আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ড্রোনের ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে, ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছানোই ছিল ইরানের টার্গেট। যে টার্গেটকে ইরান যে ছাপিয়ে গেছে সেটা বোধহয় বলার অপেক্ষা রাখে না।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম