।। প্রথম কলকাতা ।।
US-Israel: মহাসংকটে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলকে আশ্বাস দিতেই ফুঁসছে ইরান। মহাসংকটে যুক্তরাষ্ট্র। কাকে বাছবে? কোন দিকে যাবে? হিজবুল্লাহ নাকি নেতানিয়াহ? নাকি থাকবে নিরপেক্ষ অবস্থানে? যুক্তরাষ্ট্রের এখন শাঁখের করাতে অবস্থা। আবারো বড় বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে চলেছে মধ্যপ্রাচ্য। ওদিকে ফুঁসছে ইরান। হিজবুল্লাহকে জেতাতে মরিয়া দেশটা। ইসরায়েল আর লেবাননের সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা। গদি নিয়ে টানাটানি হতে পারে। সরকার পড়ে যেতে পারে ইসরায়েলের। আর তার আঁচ পড়বে যুক্তরাষ্ট্রেও! দ্বিতীয় গাজা হয়ে যাবে না তো লেবানন? হামাস ইসরায়েলের পর এবার লেবানন-ইসরায়েল। ইরান যে এত জোর গলায় বলছে, ইসরায়েল নাকি হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুদ্ধে চূড়ান্ত পরাজিত হবে, আদৌ কি ইরানের কথা মিলবে? নাকি শেষে হাসি হাসবে ইসরায়েল? যুদ্ধের ময়দানে কোমর বেঁধে নামছে হিজবুল্লাহ।
ইসরায়েলকে সাপোর্ট করে চিন্তায় যুক্তরাষ্ট্র, শক্তি বাড়াচ্ছে হিজবুল্লাহ
হিজবুল্লাহ আর ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি আক্রমণে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। সেই জায়গাতেই উঠছে বড় প্রশ্ন। যদি সর্বাত্মক যুদ্ধ বাঁধে, তখন কী করবে যুক্তরাষ্ট্র? জো বাইডেন কিন্তু একদমই যুদ্ধ চাইছেন না। ছোটাছুটি করছেন যাতে যুদ্ধটা আটকানো যায়। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে এগোচ্ছে, তাতে যদি ইসরায়েল কিংবা হিজবুল্লাহ কারোর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়, তাহলে যুদ্ধ বাঁধবেই বাঁধবে। ইতিমধ্যেই নতুন করে আরেকটি ফ্রন্টে যুদ্ধ না বাঁধাতে ইসরায়েলকে বারংবার সতর্ক করছেন জাতিসংঘের মহাসচিব সহ বিশ্ব নেতারা। কিন্তু আদৌ শেষ রক্ষা হবে কিনা, তা বলা মুশকিল। মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট চাপে রয়েছে। সামনেই প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচন। তাই পদক্ষেপ নিচ্ছে একটু ভেবে ভেবে। কিন্তু সর্বাত্মক যুদ্ধ বাঁধলে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকেই সমর্থন করবে। যদিও এটা জানা কথা। ইতিমধ্যেই তার আভাস দিয়ে দিল। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্র হয়ত বিতর্ক থেকে বাঁচতে কিংবা বাইডেন নিজের গদি বাঁচাতে এই যুদ্ধ এড়িয়ে যাবেন। নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকবেন। তবে সেটা হওয়া চাপের।
ওয়াশিংটনে সফরকারী ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধি দলকে আশ্বাস দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা। আর যে সময় ইসরায়েল এত বড় আশ্বাস পেল, ঠিক তখনই কিন্তু লেবানন আর ইসরায়েল সীমান্তে দুই বাহিনীর সংঘাত আরো বেড়েছে। এই সময় নেতানিয়াহুর দরকার প্রচুর অস্ত্র। তাই অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে দোষারোপ করতে শুরু করে দিয়েছেন। এই নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র আর ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে মন কষাকষি। যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু এখনো সেই বোমার চালানটি ছাড়া অন্য অস্ত্র ইসরায়েলকে সরবরাহ করছে। শোনা যাচ্ছে, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ইসরায়েলের উত্তর সীমান্ত পরিস্থিতি, ইরান, গাজায় যুদ্ধ বিরতি আর জিম্মি মুক্তি সহ বহু বিষয়। আর সেই প্রসঙ্গেই মার্কিন কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, হিজবুল্লাহর সঙ্গে সংঘাতের বিষয়ে তারা ইসরায়েলকে নিরাপত্তা সহায়তা দেবে। তবে হ্যাঁ, এক্ষেত্রে নিজেদের কোনও সেনা মোতায়ন করবে না। যুক্তরাষ্ট্র যে ইসরায়েলের হাত ছাড়বে না তা প্রথম থেকেই বলে এসেছে, আর সেটাই করছে। যদিও বাইডেন প্রশাসন বেশ কয়েক দফায় বলেছে, ইসরায়েলের উত্তরে নতুন করে কোনও যুদ্ধ চায় না। তারা এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে। কিন্তু যুদ্ধ বাঁধলে ইসরায়েলকে যুদ্ধের মাঠে একা ফেলে দেবে না।
এই যুদ্ধে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের যেন শেষ নেই। বহু প্রতিবেদন বলছে, ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর যুদ্ধে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে আয়রন ডোম সহ ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গুলো। বলা হচ্ছে, তেল আবিবের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় যত ক্ষেপণাস্ত্র আছে, হিজবুল্লাহর হাতে তার চেয়েও আছে বেশি ক্ষেপণাস্ত্র আর রকেট। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো মানে, বড় অস্ত্র ভান্ডার দিয়ে সাহায্য করা। তার উপর তো রয়েছে বিতর্ক। সেই গাজা যুদ্ধ থেকেই ইসরায়েলকে সাপোর্ট করার জন্য গোটা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে কম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়নি। লেবাননের সংঘাত ঘিরেও সেই ঘটনার আবার রিপিট হতে পারে। তাই একটু ভাবনা চিন্তা করছে ওয়াশিংটন।
লেবাননের যুদ্ধে নেতানিয়াহুর লাভ-ক্ষতি
লেবাননের সাথে যুদ্ধে গেলে ক্ষতি হবে নেতানিয়াহুর। এমনটাই মনে করছে কূটনৈতিক মহলের একাংশ। কারণ এখনো পর্যন্ত গাজা যুদ্ধ চলমান রয়েছে। যেখানে যুদ্ধ একেবারের জন্য বন্ধ হবে, এমন চুক্তিতে তিনি যেতে নারাজ। তবে হ্যাঁ আংশিক যুদ্ধ বিরতিতে প্রস্তুত। যেখানে সবাইকে না হলেও অন্তত কয়েকজন ইসরায়েলের জিম্মিকে গাজা থেকে ফিরিয়ে আনা যাবে। নেতানিয়াহু বারংবার হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র জিম্মিদের ফিরিয়ে আনা আর গাজায় হামাসের রাজত্ব নির্মূল করা। অর্থাৎ তিনি যা চাইছেন সেখানে কখনোই হামাসের স্বার্থ রক্ষা হবে না। বরং ইসরায়েলের একতরফা স্বার্থরক্ষা হবে। যার জেরে এখনো মাটি কামড়ে গাজায় পড়ে রয়েছে হামাস। দেখতে দেখতে প্রায় আট মাসের বেশি হয়ে গেল। জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি নাগরিক সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন। মূল দাবি, যে কোন মূল্যে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে হবে। মহাফাঁপরে পড়েছেন নেতানিয়াহু। না নিজের লক্ষ্য থেকে পিছু হটতে পারছেন, না জিম্মিদের মুক্ত করতে পারছেন।
তার উপর দোরগোড়ায় নির্বাচন। যদি হিজবুল্লাহর সঙ্গেও যুদ্ধ বাঁধে, তাহলে সেটা টানতে পারবেন তো? গোটা মধ্যপ্রাচ্য এক হয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গেলে রুখে দাঁড়াতে পারবেন তো নেতানিয়াহু? প্রশ্নটা তো এখানেই। শুধু মুখে বলা, আর কাজে করে দেখানোর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একটা যুদ্ধ মানে বুঝতে পারছেন? প্রচুর লোকবল, অর্থ আর অস্ত্রের প্রয়োজন। এমত পরিস্থিতিতে নতুন করে আর একটা যুদ্ধ টানা মুখের কথা নয়। যদিও হাল ছাড়তে নারাজ নেতানিয়াহু সরকার। আত্মরক্ষার খাতিরে উত্তর সীমান্তে বেশি করে সেনা মোতায়েন করবে। শুধু তাই নয়, উদ্বাস্তুদের ফেরাতেই নাকি এই পরিকল্পনা। এই যুদ্ধ ইসরায়েলের কাছে হতে পারে একটা বড় ধাক্কা। আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ যেমন বাড়বে, তেমনই গোটা বিশ্বের কাছে ইসরায়েলের ইমেজ খারাপ হবে। দেখুন, বর্তমান দিনে দাঁড়িয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ কিন্তু যুদ্ধ বিরোধী। শক্তির আধিপত্যের লড়াইয়ে অনেকেই শামিল হতে চায় না। তাই যুদ্ধ বাঁধলে, ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহকে যুদ্ধবাজ বলে দেগে দিতে পারে কূটনৈতিক মহল।
লেবানন হবে দ্বিতীয় গাজা! হিজবুল্লাহকে উস্কাচ্ছে ইরান
যখন দুই পক্ষই যুদ্ধ করতে প্রস্তুত, তখন মহাচিন্তায় জাতিসংঘ। গোটা বিশ্ব দেখেছে গাজায় কি হচ্ছে। লেবানন যদি আরেকটি গাজা হয়, তাহলে বিশ্ব মেনে নিতে পারবে না বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব। তাঁর মতে, একটা বেপরোয়া পদক্ষেপ, একটি ভুল বোঝাবুঝি মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। যেটি সীমান্ত ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে বহু দূর পর্যন্ত। খোলাখুলি বললে, তা কল্পনারও বাইরে। মধ্যপ্রাচ্যের বাসিন্দা এবং পুরো পৃথিবীর মানুষ লেবাননের আরেকটি গাজায় পরিণত হওয়ার ধকল নিতে পারবে না। এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বকে জোর গলায় স্পষ্ট করে বলতে হবে, দ্রুত উত্তেজনা কমাতে হবে। এটা খুব জরুরী। যেখানে সামরিকভাবে সমাধানের কিচ্ছু নেই। ২০০৬ সালেও কিন্তু ইসরায়েল আর হিজবুল্লাহর যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখন উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টির হুমকির মাধ্যমে হয়তো পরস্পরকে প্রতিহত করার চেষ্টা করছে, নাকি সত্যি অর্থেই তারা পুরোদমে যুদ্ধে জড়াবে, তা এখনো কিন্তু নিশ্চিত নয়। গাজার ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহর তুলনা করাটা ঠিক হবে না। কারণ হামাসের তুলনায় হিজবুল্লাহর যোদ্ধারা অনেক বেশি প্রশিক্ষিত এবং সুসংগঠিত। তাদের কাছে প্রাণঘাতী অস্ত্রের সংখ্যাটাও অনেকটা বেশি। তাই এই যুদ্ধ হলে ইসরায়েলকে কড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে।
ওদিকে আবার হিজবুল্লাহকে উস্কাচ্ছে ইরান। জাতিসংঘে ইরান মিশন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে বলে দিয়েছে, নিজেকে বাঁচাতে ইসরায়েল সরকারের যে কোন হঠকারী সিদ্ধান্তও মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন যুদ্ধে নিমজ্জিত করতে পারে। ধ্বংস হতে পারে লেবাননের অবকাঠামো। শুধু তাই নয়, ১৯৪৮ সালের অধিকৃত অঞ্চলগুলোর অবকাঠামো ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে। ইরানের মতে, নিঃসন্দেহে এই যুদ্ধে একটি পক্ষের চূড়ান্ত পরাজয় হবে। আর তা হল ইসরায়েল। কারণ হিজবুল্লাহর নিজেকে আর লেবাননকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে। সম্ভবত এবার ইসরায়েলের আত্মবিনাশের সময় এসেছে। লেবাননকে হুমকি দেওয়া মানে ইরানকেও ঘুরপথে হুমকি দেওয়া। তাই হিজবুল্লাহর দিকে বিন্দুমাত্র আঁচ এলে ফুঁসে উঠছে ইরানও।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম