।। প্রথম কলকাতা ।।
Beekeeping: ফুল-মধুই বাংলাদেশের অ্যাসেট। এপার বাংলার মধুতেও বিভোর গোটা ভারত। শখ ভুলে পেশা, মৌ চাষেই বিপুল লক্ষী লাভ। বিশ্বজুড়ে তাক লাগাচ্ছে বাংলাদেশের মধু শিল্প কিন্তু কিভাবে ধরা দিল এই সাফল্য? চোখে সরষে ফুল। কেন মধুর নেশায় বুঁদ দুই বাংলার চাষীরা? মৌমাছি পালনেই সোনার দিন, গ্রামীণ অর্থনীতিতেই বড়লোক সুজলা সুফলা বাংলাদেশ? সৌদি টু থাইল্যান্ড, বাংলাদেশের মধুতে কি আছে জানেন? শখ ভুলে যাচ্ছে দুই বাংলা। লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগারের হাতছানি যে মধুতে, তাতে ভর করেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করছে পদ্মা পাড়ের দেশটা। বাংলার মধুও ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয়।ভারত জুড়ে মৌমাছি পালকদের মধু চাষের রমরমা।বাণিজ্যিকভাবে মধু চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভারত বাংলাদেশে।
প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে খামারের সংখ্যা। তেল ও মসলা জাতীয় ফসল জমির পাশে গড়ে ওঠা এসব মৌখামার বাংলাদেশ এর কৃষির জন্য হয়ে উঠছে আশীর্বাদ। বাংলাদেশে মৌ খামারগুলো থেকে এক লক্ষ টন মধু আহরণের সুযোগ রয়েছে। বাণিজ্যিক এই মধুর স্বাদ, গন্ধ, রঙ, এক কথায় গুণগতমান ভালো হওয়ায় রপ্তানি হয় আন্তর্জাতিক বাজারেও। থাইল্যান্ড, জাপান, ভারত ও মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ যেমন কাতার, দুবাই, সৌদি, আরব আমিরাতে বাংলাদেশের মধু বিসাল জনপ্রিয়। মধু খুবই সম্ভাবনাময় একটি খাত। বিশেষজ্ঞদের মতে এই খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। যথাযথ নিয়মে মধু সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ করতে পারলে লক্ষ্মী লাভের বিপুল সম্ভাবনা। চাষিরা এখন রপ্তানির জন্য বাণিজ্যিকভাবে মধুচাষে ঝুঁকছেন। শখ থেকে হয়ে উঠছে পেশা। আর, মৌমাছির পরাগয়নের ফলে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ উৎপাদন ও বাড়ছে কালোজিরা, ধনিয়া, সরষের।
এই মৌ চাষের জন্য যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, মৌ বাক্স। প্রতিটি মৌবাক্স থেকে কমপক্ষে ৩ বার মধু সংগ্রহ করা যায়। ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি- এই তিন মাস মৌচাষিরা মধু সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন জেলায় অবস্থান করেন। ক্ষেতের পাশে বসিয়ে দেন সারি সারি মৌবাক্স। প্রতিটি বাক্সে একটি করে রানি মৌমাছি আর কয়েক হাজার কর্মী মৌমাছি থাকে। সকালে খুলে দেওয়া হয় বাক্স, তারা ছুটে যায় ফসলি মাঠে। ফুল থেকে ফুলের নেক্টার আহরণ করে আবারও বাক্সে ফেরে। বাক্সেই চাক বানিয়ে সেখানে মধু সঞ্চয় করে মৌমাছিরা। মৌচাষিরা ১০ থেকে ১৫ দিন পর পর বাক্সের ভেতর থেকে যন্ত্রের সাহায্যে মধু সংগ্রহ করে। সংগৃহীত মধু হাতের স্পর্শ ছাড়াই সম্পূর্ণ মেশিনের সাহায্যে বের করে আনা হয়। মজুদ করে রাখা হয় বিভিন্ন কনটেইনারে যা পরে চলে যায় ক্রেতাদের হাতে।
বাংলাদেশের নির্দিষ্ট কিছু জেলা থেকে বেশি মধু আহরণ করা যায়, তবে কম-বেশি সব জেলাতেই সেই সুযোগ আছে। যদিও, শরীয়তপুর বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদনের একটি বড় ক্ষেত্র। সরষে, ধনিয়া আর কালোজিরা চাষের কারণে এখানে মৌচাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখানকার মধুর একটা আলাদাই গুরুত্ব আছে, কালোজিরার মধুর ওষুধি গুণ অন্য লেভেলের। এই জেলার মধু সারা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্বে ছড়িতে দিতে সরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে শরীয়তপুরের মধুর পরিচিত বাড়বে, সম্প্রসারণ হবে, কৃষক ন্যায্যমূল্য পাবে। মোদ্দাকথা কৃষি অর্থনীতি এগিয়ে যাবে, চাইছে বাংলাদেশ। তাছাড়া, মধু শিল্পের গুরুত্ব বুঝে এখন কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মৌচাষিদের ট্রেনিং ও দেওয়া হচ্ছে। মৌচাষের জন্য চাষিদের উন্নতমানের বাক্সও দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে প্রায় তিন হাজার মৌচাষি বাণিজ্যিকভাবে মধু উৎপাদন করছে, বছরে প্রায় ১০ হাজার টন মধু উৎপাদিত হচ্ছে। যথাযথ পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে মধুর উৎপাদন লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। সেই টার্গেটের পেছনেই ছুটছে ওপার বাংলা। একই সাথে এপার বাংলাও মধু চাষে লাভ দেখছে, হাসছে সুন্দরবন।মধু উৎপাদনে শীর্ষ দেশ চীন! এশিয়ার মাঝে ভিয়েতনাম এবং ভারতের মধু রপ্তানিতে উল্লেখযোগ্য স্থান রয়েছে।আর মধু রপ্তানিতে বংলাদেশের অবস্থান ৮৩তম এবং আমদানিতে ৬৬তম, কিন্তু বলতেই হচ্ছে বাংলাদেশে যে মধু উৎপাদন হয় তা যদি সঠিকভাবে বাজারজাত করা যায়, তাহলে সেই দেশের চাহিদা মেটানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে আগামী দিনে মধু আমদানির কথা আর ভাবতেই হবে না বাংলাদেশকে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম