।। প্রথম কলকাতা ।।
ট্রামের কথা বলতেই ভিজে এল চোখের কোন। ট্রাম ছাড়া কলকাতা! ভাবা যায় নাকি? কোনদিন বাঙালি ভেবেছে? দীর্ঘ ছয় সাত বছর ট্রামের নিত্য যাত্রী ইনি। ব্যস্ত ভিড় বাস কিংবা ট্যাক্সির তুলনায় ট্রামেই সচ্ছন্দ। ট্রাম যে বড্ড প্রিয়, ভালবাসার যান। তিলোত্তমার এই ঐতিহ্যবাহী ট্রামের রাস্তা ঢাকা পড়বে পিচে। কলকাতা হারাবে তার কৌলিন্য আর বাঙালি হারাবে তার আবেগ। ট্রাম নিয়ে কী বলছেন যাত্রীরা? ‘প্রথম কলকাতা’র ক্যামেরায় বন্দি হল, সেই মন খারাপের গল্প।
তিলোত্তমার ট্রাম রাস্তায় নয়, হয়ত জায়গা পাবে মিউজিয়ামে। কি, শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল তো? ১৫০টা বছরের অমলিন যাত্রাপথ পেরিয়ে এলেও ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। ট্রাম লাইন পিচে ঢাকা পড়লে তা ভীষণ বেদনাদায়ক। ট্রামের সংখ্যা বড় জোর দাঁড়াতে পারে মাত্র ৩ থেকে ৪টে। অথচ একটা সময় এঁকেবেঁকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার ট্রাম লাইন ছিল। কলকাতার ট্রাম যাত্রার শুরুটা হয়েছিল প্রচুর মিষ্টিমধুর স্মৃতি দিয়ে। তখন রাস্তা ছুটত ঘোড়া, টেনে নিয়ে যেত এক কামরার ট্রাম। ট্রামলাইনে প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৩ সাল নাগাদ। এখন ট্রাম চলে মাত্র ৩৩ কিলোমিটারে। ৬টা ডিপোর মধ্যে সম্পূর্ন খোলা ২ টো।
বারংবার জোর গলায় সোচ্চার হয়েছেন ট্রামপ্রেমী থেকে শুরু করে তিলোত্তমাবাসী। আগলে রাখতে চেয়েছে ট্রামকে, কিন্তু পারছেন কি? একের পর এক বন্ধ হয়ে গিয়েছে ট্রাম রুট। বিষয়টা গড়িয়েছে হাইকোর্ট পর্যন্ত। আদালতের রায়ের নির্দেশে তৈরি হয়েছে বিশেষ কমিটি। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে ট্রামকে কীভাবে বাঁচিয়ে রাখা যায়, সেই বিষয়ে চলছে ভাবনা চিন্তা।
এখনো টিমটিম করে ট্রাম চললেও ভবিষ্যৎ অধরায়। মানুষের ব্যস্ততার গতির কাছে পিছিয়ে পড়ছে ট্রাম। জনসংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে যানবাহন। এসেছে প্রচুর অপশন। কিন্তু রাস্তা প্রায় একই রয়ে গেছে। যানজট হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কয়েক বছর আগেও কিন্তু এসপ্ল্যানেড থেকে শ্যামবাজার এবং খিদিরপুর রুটে নির্দিষ্ট সময় টাইম টেবিল মেনে ট্রাম চলত। সওয়ার হতেন দৈনিক প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার যাত্রী। কিন্তু এখন চিত্রটা ভিন্ন। মন্থর গতি ট্রামের পরিবর্তে মানুষ বেছে নিছে ওলা উবের বাস কিংবা ট্যাক্সিকে ।
তাহলে কি এভাবেই গতির চাহিদার কাছে হেরে যাবে ট্রাম? ট্রামপ্রেমীদের অনেকেই শহরকে দূষণ থেকে বাঁচাতে ইলেকট্রিক বাসের পরিবর্তে ইলেকট্রিক ট্রামের কথা ভাবছেন কিন্তু সফল পরিকল্পনা কোথায়? শহরের যানজট আর স্লথ গতির জন্য বারংবার কাঠগোড়ায় তোলা হয়েছে ট্রামকে, কিন্তু আদৌ কি তাই? সঠিক ব্যবস্থাপনায় ট্রামকে কি বাঁচিয়ে রাখা যেত না? এই একগুচ্ছ প্রশ্ন ভিড় করছে ট্রামপ্রেমীদের মনে। পৃথিবীর বহু দেশ যখন দূষণের হাত থেকে বাঁচতে পরিবেশবান্ধব ট্রামের কথা ভাবছে তখন কলকাতার বুকে উল্টো চিত্র। ভালোবাসার যানটিকে বাঁচাতে এখন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ছাড়া পথ নেই। না হলে একদিন হয়ত পথে নয়, ট্রাম জায়গা পাবে মিউজিয়ামে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম