।। প্রথম কলকাতা ।।
Netaji and Paramount: কলকাতার(Kolkata) বিখ্যাত শরবতের সঙ্গে বোমের সম্পর্ক খোঁজা বেশি দুষ্কর ব্যাপার। আবার এই শরবতের সঙ্গে নাকি জড়িয়ে আছে ভারতের স্বাধীনতা। কলকাতার প্যারামাউন্ট(Paramount) শরবতের কথা কমবেশি সবাই শুনেছেন। অনেকেই বারংবার নস্টালজিয়ার টানে এখানে ছুটে যান। তিলোত্তমার বুকে কলেজ স্ট্রিটে এই শরবতের দোকানে ঘন ঘন যাতায়াত করতেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু( Netaji Subhas Chandra Bose)। শরবতের আড়ালেই চলত স্বদেশী কাজকর্ম।
বরিশালের নীহাররঞ্জন মজুমদার এসেছিলেন কলকাতায়। সালটা তখন ১৯১৮। তিনি ‘প্যারাডাইস’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন। তাঁর সেই দোকানে সামনে বিক্রি হত শরবত, আর পিছনে চলত নানান স্বদেশী গোপন কাজ। যেখানে উপস্থিত থাকতেন তাবড় তাবড় স্বদেশী বিপ্লবীরা। এক গ্লাস শরবতের আড়ালে ঠিক কোন পরিকল্পনা চলতো তা ঘুণাক্ষরেও টের পেত না ব্রিটিশ শাসক। আজও এখানে একটি ঘরে প্যারামাউন্টের শরবতে বুঁদ হওয়া বিখ্যাত ব্যক্তিদের তালিকা টাঙানো আছে। এখানে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর যাতায়াত ছিল। এছাড়াও আসতেন জগদীশচন্দ্র বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, পুলিন বিহারী দাস, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শচীনদেব বর্মন, মেঘনাথ সাহা সহ বহু বিপ্লবীরা।
প্যারামাউন্ট শরবতের দোকান ছিল স্বদেশী অনুশীলনের কেন্দ্র। এখানে প্রায়শই আসতেন বাঘা যতীন। শরবতের আড়ালে অনায়াসে চলত গুপ্ত সমিতির কাজ। স্বদেশীরা ব্রিটিশের চোখে ধুলো দিয়ে নানান গোপন কাজ করতেন। একদিন ব্রিটিশদের চোখে তাঁরা ধরা পড়েন। তারপর পুলিশ এসে শরবতের দোকানটি বন্ধ করে দেয়। আবার নতুন করে দোকানটি খোলে ১৯৩৭ সালে। তখন প্যারাডাইস নাম বদলে হয়ে যায় প্যারামাউন্ট। এখানকার বেশিরভাগ শরবত ডাবের। সুস্বাদু শরবতের টানে আজও সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দোকানের ভিড় চোখে পড়ার মতো। শোনা যায় আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় নাকি এই দোকানের শরবতের রেসিপি দিয়েছিলেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু , এই নামটার সাথে শুধুমাত্র বীরত্ব জড়িয়ে নেই, রয়েছে নানান ঐতিহাসিক কাহিনীর বর্ণছটা। প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে তাঁর নাম শুনলেই জেগে ওঠে দেশমাতৃকার প্রতি প্রেম এবং শ্রদ্ধা। নেতাজি সুভাষচন্দ্র সবসময় মনে করতেন, অন্যায়ের সাথে আপোষ করাটাই হলো সবথেকে বড় অন্যায় । মানুষ যতদিন বাঁচবে ততদিন সে প্রাণবন্ত থাকবে। তিনি সবসময় স্বাধীনতার জন্য আপ্রাণ লড়াই করেছিলেন। মনে করতেন স্বাধীনতা দেওয়া হয় না, সর্বদা ছিনিয়ে নিতে হয়। স্বাধীনতার জন্য লড়তে গিয়ে তিনি প্রায় ১১ বার জেলে গিয়েছিলেন।
যখন আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন নেতাজি, ঠিক তখন বাহিনীকে চালানোর জন্য ফান্ড কমিটিকে বহু মানুষ নানান ভাবে সাহায্য করছিলেন। রেঙ্গুনের হাবিব সাহেব তাঁর যাবতীয় সম্পত্তি, যার মূল্য ছিল প্রায় এক কোটি তিন লক্ষ টাকা , তিনি তুলে দেন নেতাজির হাতে। সেই সম্পত্তির মধ্যে ছিল জমিজমা, গয়না, এমনকি নগদ টাকা। এছাড়াও একবার এক পাঞ্জাবের শিখ ভদ্রলোক তাঁর সমস্ত সম্পত্তির বিনিময়ে নিলামে নেতাজির গলায় ফুলের মালা কিনে নিয়েছিলেন। আজও ভারতবাসীর কাছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র ভগবানের সমান। তিনি যেমন ভারতমাতার জন্য প্রতি মুহূর্তে প্রাণ দিতে প্রস্তুত ছিলেন, তেমন তাঁরই জন্য বহু ভারতবাসী নিজের জীবন উৎসর্গ করতে দ্বিতীয়বার ভাবতেন না।