।। প্রথম কলকাতা ।।
Amazon Rainforest: আমাজন, পৃথিবীর আশ্চর্য। গভীরে আছে, সোনায় মোড়া শহর! জঙ্গলের মাটিতে তাল তাল সোনা। পাহারায় বিষাক্ত সাপ! এমনটা কী সত্যি? আমাজন নিয়ে রহস্যের এত ঘনঘটা কেন? হাড় হিম করা অ্যানাকোন্ডাদের বাস এখানে। কিলবিল করছে বিষাক্ত সাপ, জলে মানুষ খেকো মাছ। গাছে বিষাক্ত পোকা। আমাজনের গভীরে কেন যাওয়া যায় না? কারা থাকে? আমাজন সাধারণ মানুষের জন্য কতটা ভয়ঙ্কর?
প্রায় ৫৫ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে। এর অংশ রয়েছে মোট নটা দেশে। গোটা বিশ্বের কাছে আমাজনের রাজকীয় মর্যাদা। যে যত অজানা তার কদরও তত বেশি। কিন্তু বিপদ আছে জেনেও বারবার মানুষ কেন এদিকেই ছুটে যায়? আসলে পুরোটাই রহস্য-রোমাঞ্চের হাতছানি, আর নতুন কিছু আবিষ্কারের নেশা। গভীর জঙ্গলের পথ এতটাই দুর্গম যে যাওয়াই মুশকিল। রহস্যের জমকালো অন্ধকার বিপদের জাল বিছানো। একদিকে বনভূমির সৌন্দর্য, অপরদিকে শুধুই আতঙ্ক। একসময় পর্তুগিজ অভিযাত্রীরা বিশ্বাস করতেন, এই অরণ্যের মাঝেই আছে গুপ্ত শহর, এল ডোরাডো। যা নাকি পুরোপুরি সোনায় তৈরি। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে যার খোঁজ করছে গোটা পৃথিবী। তোলপাড় করে ফেলেছে দক্ষিণ আমেরিকা। যদিও এই কাল্পনিক শহরের খোঁজ পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আছে ফুটন্ত নদী। যার জল দিন রাত ফুটছে। তাপমাত্রা প্রায় ৮৬° সেলসিয়াস। জল এতটাই গরম, মানুষ পড়ে গেলে মুহূর্তে মারা যাবে। এখানে সাঁতার কাটা আর মৃত্যু ফাঁদে পা দেওয়া সমান।
আমাজনের বুক চিরে সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে গিয়েছে আমাজন নদী। আমাজনে কি নেই! পৃথিবীর যত প্রজাতির প্রাণী আছে, অধিকাংশই আমাজনে বাস। আমাজনের গভীরে বহু জায়গায় এখনো মানুষের পা পড়েনি। সিনেমার পর্দায় দেখা সেই দৈত্যাকার অ্যানাকোন্ডা থাকে এখানে। চোখের পলকে গিলে ফেলে আস্ত মানুষ। কিন্তু শোনা যায়, এই সাপ নাকি বাস্তবে মানুষ থেকে একটু দূরেই থাকে। এরা নিরিবিলি জায়গা পছন্দ করে। আর আছে গ্রীন অ্যানাকোন্ডা, এদের কোন বিষ নেই। কিন্তু শিকারকে পেঁচিয়ে।গিলে ফেলতে বেশিক্ষণ সময় নেয় না। বিষাক্ত ডার্ট ফ্রগ বা বিষাক্ত ব্যাঙের কামড়ে অকেজো হয়ে যেতে পারে হৃদপিণ্ড আর মস্তিষ্ক। এক একটা গাছে থাকে ৪৩ প্রজাতির পিঁপড়ে। সাথে আছে ওয়ান্ডারিং স্পাইডারের বিষাক্ত আক্রমণ।জঙ্গলের আলো-আঁধারিতে ঘুরে বেড়ায় ব্ল্যাক প্যান্থার। নিঃশব্দে আড়ি পাতে জাগুয়ারের দল। জলা জায়গায় গিজগিজ করে বিষাক্ত সাপ থেকে শুরু করে ভয়াবহ কুমির। নদীর জলে পা দিলেই সর্বনাশ। ওঁত পেতে আছে ইলেকট্রিক ইল। কামড় বসাতে পারে মাংসাশী পিরহানা মাছ। গাছের ডালে ঝুলে থাকে বিষাক্ত ট্যারেন্টুলা মাকড়সা। এছাড়াও আছে হার্পি ঈগল, গোলাপি ডলফিন, হার্মিং বার্ড, লাল চোখের ব্যাঙ। আমাজনের নদীতে আছে সব থেকে বড় মিষ্টি জলের মাছ পিরারুকু, ওজন প্রায় দেড়শ কেজি। শুধু প্রাণী নয়, আমাজনের গভীরে আছে প্রায় ১১৩ টি আদিম উপজাতি। যারা সভ্য মানুষের সান্নিধ্য হিন্দুমাত্র পছন্দ করে না। কাছে গেলে ছুঁড়ে দেয় বিষাক্ত তীর। এর গভীরে আজও প্রাচীন যুগের মানুষদের বাস। যাদের সাথে সভ্য পৃথিবীর কোন যোগাযোগ নেই।
আমাজনকে বৃষ্টি অরণ্য বলা হয় ঠিকই, কিন্তু এখানে সারা বছর বৃষ্টি হয় না। বরং গরম আবহাওয়া, অত্যাধিক আদ্রতা আর বর্ষার মৌসুমে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে আমাজন এত দুর্ভেদ্য। এখানে প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশি প্রজাতির গাছ রয়েছে। পাখি রয়েছে ১২৯৪ প্রজাতির। ৭৭৮ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী সহ হাজার হাজার প্রজাতি রয়েছে, যাদের অধিকাংশের নামও পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করতে পারেননি। কোন কোন গাছ প্রায় ১২০ ফুট পর্যন্ত লম্বা। তবে ভুললে চলবে না, আমাজন পৃথিবীর ফুসফুস। অক্সিজেন দিচ্ছে গোটা বিশ্বকে। আমাজন আছে বলেই পৃথিবীতে জীব বৈচিত্র্যের ভারসাম্য আজও টিকে আছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম