।। প্রথম কলকাতা ।।
যা ঘটছে, তাতে বিশ্বের জন্য কোন ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে? রিস্ক বাড়ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ভারতেও এবার সাহারা মরুর গরম, নাজেহাল বাংলাদেশও। শুধু হিটস্ট্রোক, মৃত্যু, খাদ্য সংকট, অসুস্থতা নয়, ভারতের অর্থনীতি, উন্নয়নেও বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে এই দাবদাহ। কিভাবে? এখনই এই অবস্থা, জুন জুলাইয়ে কি হবে? ভাবাই যাচ্ছে না। গবেষকদের আশঙ্কায় ঘাম ছুটছে, বিশ্ব ব্যাঙ্কও ওয়ার্ন করে দিয়েছে। তবে কি বাঁচাই দুষ্কর? এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী কে?
কি হবে ২০২৭ এ?
খুব সাবধান! সামনে আরও দুঃসহ গরম আসছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো তাপমাত্রা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। তারা বলছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে ৬৬ শতাংশ এর প্রভাবে কি কি হতে পারে? দীর্ঘ সময় ধরে তাপপ্রবাহ, মারাত্মক ঝড়, তীব্র দাবানল, এমনকি খড়া পর্যন্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
মোটেই ভালো ইঙ্গিত মিলছে না। চলতি বছরের গ্রীষ্মকালে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তনের যে সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তা নিয়ে টেনশন আরও বাড়ছে। বাংলাদেশে মাত্রা ছাড়ানো গরমে নাজেহাল মানুষ। আর ভারত? সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছিল, সাহারায় সাধারণত যে গরম পড়ে, এবার তেমন তাপমাত্রা ছুঁতে পারে ভারত। সেটাই সত্যি হলো। ভারত বর্তমানে একাধিক, ক্রমবর্ধমান জলবায়ু সংক্রান্ত বিপদের সম্মুখীন। বায়ুমণ্ডলীয় চাপ এবং আর্দ্রতার বাড়বাড়ন্ত, কি নেই? জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই প্রচন্ড তাপপ্রবাহে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে দেশের কৃষি, অর্থনীতি এবং জনস্বাস্থ্যে। না এখানেই শেষ নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে ভারতের দারিদ্র দূরীকরণ, অসুস্থতা কমানোর দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টাও ব্যাহত হতে পারে। ভারত সরকারের নিজস্ব ‘জলবায়ু দুর্বলতা সূচক’ অনুযায়ী এই প্রখর গ্রীষ্মের কারণে উন্নয়নে গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। কিভাবে?
মাথায় রাখতে হবে, সাধারণত কোনও জায়গার উষ্ণতার সঙ্গে মানুষের কর্মক্ষমতা ব্যস্তানুপাতিক। তাই কর্মক্ষমতা কমলে সেই দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। শুধু গবেষকরা নয়, বিশ্বব্যাঙ্ক ও ভারতকে সতর্ক করেছিল। ভারতের মতো দেশে সহনীয় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু এবার তা বেড়েছে অকল্পনীয়ভাবে। ৪২-৪৩ ডিগ্রি অবধিও পৌঁছে যাচ্ছে। আশঙ্কা রয়েছে, তাপমাত্রা ছুঁতে পারে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মানে ১২২ ডিগ্রি ফারেনহাইট অবধি। মে, জুন, জুলাইয়ে কাঠফাটা গরমে টিকে থাকা দায় হয়ে দাঁড়াবে। জনজীবন ব্যাহত হবে।
ভারতের বেশ কয়েকটা জায়গায়, তাপমাত্রা আগের বছরের তুলনায় অনেকগুণ বেশি থাকার আশঙ্কা রয়েছে। লিস্টে কোন কোন জায়গা রয়েছে? উত্তর-পূর্ব, পূর্ব এবং মধ্য ভারতের পাশাপাশি উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল, দক্ষিণ ভারত, মধ্য ভারতের কিছু অংশ, পশ্চিম ভারত এবং উত্তর ভারত। শুধু দিনের বেলায় প্রচণ্ড তাপ থাকবে তেমন নয়, রাতের তাপমাত্রাও গড়ে বেশি থাকবে বলে পূর্বাভাস। এই অবস্থায় ভারতে বিদ্যুতের চাহিদাও স্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। ফলে, পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, কিন্তু তারপরেও বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা কঠিন হয়ে যায়।
এই তীব্র দাবদাহ জনস্বাস্থ্য, কৃষি, সাংস্কৃতিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। উল্লেখ্য, প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে ১৯৯২ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২৪,০০০ এরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বহু মানুষ। তাপপ্রবাহের কারণে বায়ু দূষণ হচ্ছে, হিমবাহের গলন উত্তোরত্তর বাড়ছে। গবেষণা বলছে, আগামী দিনে এমন রেকর্ড ভাঙা তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা আরও বাড়তে থাকবে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে বিশ্বে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টা ভালোভাবে বোঝা যাবে। প্রতি বছর বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে গেলে এবং এক বা দুই দশক ধরে এটা চলতে থাকলে এর মারাত্মক প্রভাব দেখা যাবে। তাই, এখনই সাবধান হতে হবে, সচেতন হতে হবে। নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে, নাহলে ঘোর বিপদ। জানেন? শিউড়ে ওঠার মতো তথ্য দিয়ে গবেষণা কি বলছে? বলছে, আগে যে মারাত্মক রকম তাপমাত্রা প্রতি ৩০০ বছরে একবার হত, তা এখন ৩ বছরে একবার হচ্ছে। অতএব, বিশেষ সুখের দিন যে আসছে না তা বুঝে নিতে হবে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম