।। প্রথম কলকাতা ।।
ভীষন অসুস্হ এক গৃহবধূ। জ্বর কমতেই চাইছে না। ক্রমশ তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এখনই নিয়ে যেতে হবে হাসপাতালে। কিন্তু রাস্তা যে এক্কেবারে বেহাল। ঢুকবে না চারচাকা গাড়ি, অ্যাম্বুলান্স। কি করা যায়! কিভাবে পৌঁছনো যাবে হাসপাতালে? শুরু হল শেষ চেষ্টা। খাটিয়ায় শোয়ানো হল তাঁকে। সেই খাটিয়া দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে অসুস্থ ওই মহিলাকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে ছুটছেন দুই ব্যক্তি। ভাবুন একবার! আপনি নিশ্চয়ই আঁতকে উঠছেন?ভাবছেন এই ভয়ঙ্কর দৃশ্য কোথাকার?নি শ্চয়ই জানতে চাইছেন, কী হল তারপর?
স্ত্রীর দেহ কাঁধে নিয়ে ওড়িশার কালাহান্ডিতে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছিল স্বামীকে। জলপাইগুড়িতে মায়ের দেহ কাঁধে নিয়ে হেঁটেছিলেন যুবক। কালিয়াগঞ্জে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে ব্যাগে সন্তানের দেহ নিয়ে হাঁটতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। প্রায় সেই একইরকম করুণ ঘটনার সাক্ষী রইলো মালদহ। অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে খাটিয়া করে হাসপাতালে পৌঁছনোর প্রাণপণ লড়াই। এই ছবিই দেখা গিয়েছে মালদহের বামনগোলা থানা এলাকার গোবিন্দপুর- মহেশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মালডাঙা গ্রামে। মহিলার নাম মামনি রায়। এলাকার বাসিন্দা কার্তিক রায়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মামনির। বাড়িতে রয়েছে তাদের দু বছরের ফুটফুটে শিশু। গত কয়েকদিন ধরে মামনি জ্বরে ভুগছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাড়ির লোক, পাড়া প্রতিবেশি তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করেন।
যেতে হবে সাড়ে চার কিলোমিটার রাস্তা। খাটিয়ায় রোগীকে চাপিয়ে চালানো হচ্ছিল মরিয়া চেষ্টা। হাসপাতালে পৌঁছেও শেষরক্ষা হল না। পথেই যে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে মামনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। বিষয়টি চাউর হতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে প্রশাসনিক মহলে।এই ঘটনায় বেহাল যোগাযোগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।বামনগোলা থানার এই মালডাঙ্গা গ্রামের রাস্তা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল ছিল। বর্ষায় সেই রাস্তা যান চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত সেই রাস্তা মেরামত হয়নি। রাস্তার যা হাল তাতে অ্যাম্বুলেন্স তো দূরের কথা গ্রামে টোটোয় ঢোকে না। এই অবস্থায় অন্য কোনও উপায় না পেয়েই মুমূর্ষু ওই রোগীকে খাটিয়ায় তুলে গ্রামের মেঠো পথ পেরিয়ে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চলে।
পরিবারের লোকজন মামনিকে খাটিয়ায় শুইয়ে ঘাড়ে তুলে দৌড় লাগান। গন্তব্য ছিল বামনগোলার মোদিপুকুর গ্রামীণ হাসপাতাল। কিন্তু বেহাল রাস্তা পেরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। হয়তো এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ধকল সহ্য করতে পারে নি সে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম