।। প্রথম কলকাতা ।।
পর্যটকদের জন্য দুঃসংবাদ। তিস্তার উৎপত্তিস্হল ও পর্যটকদের প্রিয় গুরুদংমার লেক বিপজ্জনক। যে কোনও সময় এই লেকেও জলোচ্ছ্বাস হতে পারে। ভেঙে যেতে পারে জলাশয়ের দেওয়াল। তাতে প্লাবিত হতে পারে বিস্তীর্ণ এলাকা। সাম্প্রতিক রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। এখন বাঙালি সিকিমের বিভিন্ন অফবিট জায়গা এক্সপ্লোর করতে চায়। পর্যটকদের কাছে সিকিমের জনপ্রিয়তা বরাবরই। এখন অফবিট পাহাড়ি গ্রামগুলো সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। কিন্তু পুরনো ডেস্টিনেশন গুলোর চাহিদা এক ফোঁটাও কমেনি। ঠিক যেমন আজ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগেও বাঙালির কাছে জনপ্রিয় ছিল সিকিমের গুরুদংমার হ্রদ। আজও কিন্তু এই জনপ্রিয়তার একটুও অদল-বদল হয়নি। বরং, গুরুদংমার হ্রদে বেড়াতে যাওয়া ভ্রমণপিপাসু বাঙালির কাছে অ্যাচিভমেন্টের চেয়ে কম কিছু নয়। এটি ভারত এবং বিশ্বের উচ্চতম হ্রদগুলোর মধ্যে একটি। সেই লেককেই বিপজ্জনক বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিকিমের মাঙ্গান জেলার তিব্বত ও চিন সীমান্তের খুব কাছেই অবস্থিত গুরুদংমার হ্রদ। প্রায় ১৭,৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত গুরুদংমার ভ্রমণ অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। সিকিমের পাহাড়ি গ্রাম লাচেনে এক রাত কাটিয়ে যেতে হয় গুরুদংমার। উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের অভাব বোধ করতে পারেন। কিন্তু হ্রদে পৌঁছালে এর নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে মন জুড়িয়ে যায়। পিছনে তুষারাবৃত পাহাড় আর সামনে স্বচ্ছ নীল জল। নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি অবধি দেখা যায় হ্রদের জলে। সেই হ্রদে ভয়ঙ্কর জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উত্তর সিকিমে১৭ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় মোট তিনটি লেক আছে। ওপরের দিকে অবস্থিত দুটি লেক।কিছুটা নীচের দিকে মূল লেকটি অবস্থান। ওপরের দুটি থেকে জল নেমে আসে নীচের লেকে। উপগ্রহ চিত্রের সাহায্যে তৈরি রিপোর্টে ওপরের লেক দুটির বাঁধে ফাটল ধরার ইঙ্গিত রয়েছে। হিমালয় অভিযাত্রী অনিন্দ্য মুখোপাধ্যায় উত্তর সিকিমের এই লেকগুলির বিপজ্জনক পরিস্থিতি ছবিসহকারে বিস্তারিত ব্যাখা করেছেন। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, উত্তর সিকিমের বিভিন্ন লেক নিয়ে চিন্তার কারণ রয়েছে। লেকগুলি থেকে বিপর্যয় আটকাতে বিশেষ নজরদারি জরুরি। অতিরিক্ত জল বের করা বা অত্যাধুনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে আগাম সতর্কবার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
তাঁদের মতে, উষ্ণায়নের ফলে নতুন গ্লেসিয়ার যুক্ত লেকের সৃষ্টি হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। আয়তন বাড়ছে পুরনো লেকগুলির। সিকিম হিমালয়ে এই ধরনের হিমবাহযুক্ত লেকের সংখ্যা ২৬৬ থেকে বেড়ে ৩২০ হয়েছে। হিমবাহের মোট আয়তন বেড়েছে প্রায় ৭৫ বর্গ কিমি। হিমবাহ থেকে বিপুল পরিমাণে বরফ গলে নেমে আসার ফলেই এটা হচ্ছে। এজন্য হিমবাহগুলি ছোট হচ্ছে। হিমবাহের বরফ গলে নীচে নেমে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে নুড়ি-পাথর টেনে নিয়ে আসে। লেকগুলির বাঁধ প্রাকৃতিভাবে তৈরি হয় এগুলি দিয়েই। বরফের গলন বা অন্যকোনও কারণে লেকে জলের চাপ ক্রমাগত বাড়লে একটা সময়ের পর বাঁধ তা আর ধরে রাখতে পারে না। তখনই বাঁধ ভেঙে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। গভীরতা কম হওয়ার কারণেই অধিক পরিমাণে জল ধরে রাখতে পারে না লেকগুলি।
বিপর্যয়ের এও এক বড় কারণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। উত্তর সিকিমে হিমবাহের সঙ্গে যুক্ত ১৪টি লেক বিপজ্জনক বলে রিপোর্ট দিয়েছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, লেকগুলি থেকে যেকোনও সময় গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড এবং বিপুল জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা আছে।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম