।। প্রথম কলকাতা ।।
Bongojoddha: ‘মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা’। গর্ববোধ করার মতই একটা ভাষা হল বাংলা। এই ভাষা বাঙালি জাতির মায়ের ভাষা (Mother Language)। প্রথম মায়ের মুখ থেকে প্রত্যেকটি বঙ্গ সন্তান শুনেছে বাংলা ভাষা। কিন্তু বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে অন্যান্য ভাষাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নিজের মাতৃভাষাকে ক্রমশ এড়িয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। বাঙালিদের কাছেই ক্রমশ বাংলা ভাষার কদর কমে আসছে। তাঁরা নিজেদের অজান্তেই মাতৃভাষাকে যোগ্য সম্মান দিতে পারছেন না কখনও কখনও। তাই ভারতে বাঙালির অধিকার আদায়ের স্বার্থে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে এসেছে ‘বঙ্গযোদ্ধা’ সংগঠন। বাংলা ভাষার (Bengali Language) জন্য এবং বাঙালি জাতির জন্য তাদের কাজ।
আজ একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের বাঙালিরা ভাষা শহীদদের জানাচ্ছেন শ্রদ্ধা। এই ভাষা দিবস উপলক্ষ্যে তাই বঙ্গযোদ্ধা সংগঠনের তরফ থেকেও একটি পদযাত্রার আয়োজন করা হয়। সেই পদযাত্রাটি হুগলির (Hooghly) চন্দননগর স্টেশন থেকে শুরু হয় এবং শেষ হয় চন্দননগর স্ট্যান্ডে এসে। বঙ্গযোদ্ধা হুগলি জেলা সংগঠনের তরফ থেকে ভাষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং বাংলার মাটিতে থাকা সর্বস্তরের বাঙালিদেরকে একত্রিত করার স্বার্থে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়। এদিনের পদযাত্রায় (Rally) অংশ নিয়েছিলেন প্রায় ১৫০ জন কর্মী সমর্থক।
বঙ্গযোদ্ধা (Bongojoddha) সংগঠনের এক সদস্য অভিজিৎ কুন্ডু প্রথম কলকাতাকে জানান, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি এবং বাংলার ভূমিপুত্র তথা আদিবাসিন্দা যারা রয়েছেন তাদেরকে এদিনের পদযাত্রার মাধ্যমে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই বার্তায় একত্রিত হয়ে সংবিধান স্বীকৃত প্রাপ্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলা হয়। তাঁর কথায়, বঙ্গযোদ্ধার প্রাথমিক উদ্দেশ্য , বাঙালি জাতিকে একজোট করা। বর্তমানে রাজ্যের বাংলা মাধ্যম স্কুলগুলির পরিস্থিতি পূর্বের তুলনায় অনেকটাই খারাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ বাবা মা-রা চাইছেন নিজেদের সন্তানকে সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ডের কোন স্কুলে পড়াতে।
তিনি আরও বলেন, ‘সন্তানরা যখন সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ডের স্কুলে যাচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে তা্ঁরা ইংলিশ মিডিয়ামের নামে হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে পড়াশোনা করছেন। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সিলেবাস প্যাটার্নের কারণে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের দশম শ্রেণি পাস করা একটি পড়ুয়া হয়তো পশ্চিমবঙ্গের সব জেলার নামও ভালো করে জানে না। কারণ সিবিএসই বা আইসিএসই বোর্ড যে সিলেবাস তৈরি করে সেটা তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের কথা ভেবে তৈরি করে না। তাঁরা সম্পূর্ণ দিল্লি কেন্দ্রিক একটা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে’।
এছাড়াও তিনি বলেন, বর্তমান যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব মানুষের জীবনে ভীষণভাবে পড়ছে। অভিভাবকদের মনেও একটা ধারণা তৈরি হচ্ছে যে, সন্তানরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে না পড়লে জীবন বৃথা । এর ফলস্বরূপ বর্তমান প্রজন্ম জাতিগতভাবে বাঙালি হলেও বাংলার সঙ্গে তার সম্পর্কের আঁচটুকুও পাচ্ছে না। বাংলা সম্পর্ক তাদের চিন্তা চেতনা হারিয়ে যাচ্ছে । কাজেই নিজের মাটিতে নিজের অধিকার বোধটাই জন্মাবে না ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে। সরকারি কিংবা বেসরকারি ক্ষেত্রে যেখানে আঞ্চলিক ভাষায় পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক সেখানেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে হিন্দি কিংবা ইংরেজি ভাষার রমরমা দেখতে পাওয়া যায়। কাজেই আগামী দিনে যারা বাংলার ভবিষ্যৎ তাদের কাছে বিষয়টি অত্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। তাঁরা বাংলা ভাষা বলা এবং বাংলা ভাষায় পরিষেবা পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
‘এমনটা চলতে থাকলে আগামী দিনে হয়তো বাংলা ভাষার প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ লোপ পেয়ে যাবে বাঙালির কাছেও। বাংলা ভাষা রয়েছে বলেই বাঙালি জাতির অস্তিত্ব রয়েছে। জাতির ভিত্তি হল তাঁর ভাষা । কাজেই ভাষা না থাকলে জাতির অস্তিত্বও থাকবে না এবং আমরা কখনই চাই না বাঙালি জাতি একটি বিলুপ্ত জাতিতে পরিণত হোক। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে সকলকে একত্রিত করার প্রচেষ্টা’, এমনটাই জানালেন বঙ্গযোদ্ধা সংগঠনের এই সদস্য।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম