।। প্রথম কলকাতা ।।
স্কুলটাকে যে করে হোক বাঁচাতে হবে। বাধ্য হয়ে চপ- সিঙারা বিক্রি করছেন প্রধান শিক্ষক। চপশিল্প বলে ঠাট্টা করবেন না। এই মাস্টারমশাই প্রমাণ করেছেন কোনও কাজই ছোট নয়। স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা চালানোর জন্য সব করতে পারেন তিনি। ঝাড়গ্রামের হেডস্যার তিমিরবাবু প্রতি মুহুর্তে শেখাচ্ছেন লড়াই করে বাঁচাই মন্ত্র। ঝাড়গ্রাম শহরের এক বেসরকারি নার্সারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তিমির মল্লিক। সবটা ভালোই চলছিল করোনার সময় সবটা ওলটপালট হয়ে যায়। স্কুল বাঁচাতে চপের দোকান খোলার ভাবনা কেন মাথায় এসেছিল তিমির বাবুর?
স্কুলের ফি বেশি নয় কিন্তু করোনার সময় অভিভাবকদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই নূন্যতম ফিও দিতে পারেনি কেউ। নিজে নাহয় বিনা বেতনে পড়িয়ে দেবেন কিন্তু অনান্য শিক্ষকরা ? বাধ্য হয়ে স্কুলের পাশে চপ মিষ্টির দোকান খোলেন তিমির বাবু। না নিজের উপার্জনের জন্য নয় স্কুলের বাদবাকি টিচারদের সংসার খরচ জোগাড়ের জন্য। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় দোকান। নিজেই চপ-সিঙাড়া ভাজতে শুরু করেন তিমির ধীরে ধীরে সেই চা-চপের প্রেমে পড়েন আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারা বিক্রি বাড়তে থাকে লাভের টাকায় বেতন পান ১৫ জন শিক্ষিক ও ৬ জন শিক্ষাকর্মী।
এখনও সেই দোকান রয়েছে। খদ্দেরও বেড়েছে। এখন অবশ্য কারিগর রেখেছেন তিমিরবাবু। জিনিসও বেড়েছে।
দোকানের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে আশপাশের এলাকায়। কোনও কাজই ছোট নয় তা প্রমাণ করে দিলেন হেডস্যার।
করোনার জন্য দোকান খুলেছিলেন বলে নাম দিয়েছিলেন স্পার্ক ২০২০ এখন ধীরে ধীরে স্কুলের হাল ফিরেছে। আগের মতো না হলেও অনেক পড়ুয়া স্কুলে আসছে। যে দোকান অসুবিধার সময়ে বাঁচিয়েছে তা বন্ধ করেননি তিমিরবাবু। সকালে সেই দোকানে মেলে ইডলি, হিংয়ের কচুরি ঘুগনি, আলুর চপ আর চা। বিকেলের মেনু শিঙাড়া, ভেজিটেবল চপ, ডিমের চপ এগ চাউমিন, চিকেন চাউমিন, চিকেন কাটলেট সঙ্গে মিষ্টি আর দই তো আছেই।
বিকেলে এখন হেডস্যরের সঙ্গে অনান্য শিক্ষকরাও যান সেখানে। স্থানীয় বাসিন্দারা এখনও শিক্ষকদের হাতের তেলেভাজা খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে ওঠেন। এখনও দোকানের লাভের টাকা শিক্ষকদের মধ্যে উপরন্তু উপার্জন হিসেবে তুলে দিচ্ছেন তিমির মল্লিক। কোনও কাজই ছোট নয়। হেডস্যার হয়েও চপের দোকান খুলতে দুবার ভাবেননি। আসলে সৎ উপায়ে রোজগার করতে চেয়েছিলেন। সেই মুহুর্তে তাঁর কাছে এটাই ছিল বেস্ট অপশন। স্কুল বাঁচাতে তিমিরবাবুর মতো এরকম লড়়াই আর কজন লড়তে পারে বলুনতো? এরাই তো আদর্শ শিক্ষক।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম