।। প্রথম কলকাতা ।।
Tehri Dam: বাঁধের নিচে ঘুমিয়ে আছে গোটা গ্রামের মৃত স্বপ্ন। পাহাড় ঘেরা বিশাল জলাশয়। একসময় এখানেই ছিল প্রচুর মানুষের কোলাহল, আর তাদের দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিল। আজ সেখানে থৈ থৈ করছে প্রায় ২৬১৫ মিলিয়ন কিউবিক লিটার জল। যে জল পৌঁছে যাচ্ছে দিল্লি আর আগ্রার মানুষের কাছে। এছাড়াও পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশে, রাজস্থানের প্রায় ৯ লক্ষ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ ঘটাচ্ছে। এই ড্যাম সামলাতে পারে প্রায় রিখটার স্কেলের প্রায় ৮.৪ কম্পনের মাত্রা। এটি হলো ভারতের তেহরি ড্যাম, যাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের মধ্যে রাখা হলেও ভূমিকম্পে কোন বিপদ নেই। এই বাঁধ ভাঙলে রীতিমত ধ্বংসযজ্ঞ ঘটবে কিন্তু সেই সম্ভাবনা অতি নগণ্য।
ভারতের অন্যতম ড্যাম তেহরি ভূমিকম্পের দিক থেকে জোন ফাইভে নির্মিত হয়েছে। ৯ থেকে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করা এই বাঁধের কাছে কোন ব্যাপারই নয়। আসলে এর নকশাতেই রয়েছে টুইস্ট। এটি তৈরি হয়েছে ভূমিকম্পের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। বহুবার ভূমিকম্প হয়েছে কিন্তু এই ড্যামে কোন আঁচ লাগেনি। তেহরি বাঁধের আশেপাশে রয়েছে প্রায় চল্লিশটি গ্রাম আর সেই গ্রামেই ঘুরছে ঘোর বিপদ। যদি তেহরিতে কোনরকম ভাঙন দেখা দেয় তাহলে মুহূর্তে কৃষি জমি বাড়িঘর সব জলের তলায় তলিয়ে যাবে। যদিও বাঁধের কারণে কম ঝুঁকি পোহাতে হয় না আশেপাশের গ্রামগুলির মানুষের। জমিতে কখনো ধ্বস নামে, আবার কখনো বা বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। এর পিছনে অন্যতম লক্ষ্য হল, বাঁধটির উচ্চতা (প্রায় ২৬০.৫ মিটার)। এখন উচ্চতা পর্যন্ত জল ভর্তি এবং গভীরতা অনেকটা বেশি। যার কারণে বিশেষ ধরনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। এই ভারসামহীনতার কারণে বিপর্যস্ত হতে পারে আশেপাশের গ্রামগুলি।
ভারতের স্বাধীনতার প্রায় চোদ্দ বছর পর এই ড্যামের কাজ শুরু হয়। প্রথমদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন অর্থ সাহায্য করছিল কিন্তু ১৯৮০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে আর্থিক সংকট দেখা দেওয়ায় তারা অর্থ সাহায্য বন্ধ করে। তখন ভারত সরকার নিজেই সম্পূর্ণ বাঁধের দায়িত্ব নিয়ে জোরকদমে চালায়। বর্তমানে বড় বড় জাতীয় প্রোজেক্টের কাজ চলছে। কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে তেহরি বাঁধ ছিল দেশের সবথেকে বড় জাতীয় প্রজেক্ট। বিদেশি অর্থ সাহায্য বন্ধ হওয়ায় কাজ একটু ঢিলে হয়ে যায়। প্রায় দশ বছর ধরে চলার ড্যামের কাজ শেষ হয়েছিল ২০০৫ সালে। তবে ড্যামের পাওয়ার হাউসের কাজ একটু ধীরে ধীরে শুরু হওয়ায় সম্পূর্ণভাবে শেষ হয় ২০০৭ সালে। আর কোটেশ্বরী ড্যামের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে।
এই বাঁধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল দেশের কোনায় কোনায় ইলেকট্রিসিটি পৌঁছে দেওয়া। প্রথমে এটির লক্ষ্যমাত্র ছিল ৬০০ মেগাওয়াট ইলেকট্রিসিটি। পরবর্তীকালে তা বাড়িয়ে হাজার মেগাওয়াট করা হয়। এই বাঁধ তৈরি করতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়ে প্রায় ১২৫টি গ্রাম। আসলে পুরনো তেহেরি শহর কিন্তু এই বাঁধের জলের নিচে। এখন যেটা রয়েছে সেটা হল নতুন তেহরি। তবে এই ড্যাম তৈরিতে মানুষের কোন ক্ষতি হয়নি অর্থাৎ জীবন হানি হয়নি। পরিকল্পনামাফিক কাজ শুরু হওয়ার আগেই সেখান থেকে সমস্ত মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তেহরির সঙ্গে কোটেশ্বর বাঁধ মিলিত হয়ে লক্ষ্যমাত্রা হয়ে দাঁড়ায় এক হাজার মেগাওয়াট শক্তি এবং ধারণক্ষমতা ২৬১৫ মিলিয়ন কিউবিক মিটার জল। বর্ষাকালে কানায় কানায় জলে পূর্ণ থাকে, আর সেই জল উপকৃত হয় ভারতে বহু অঞ্চল। কুম্ভের সময় কিংবা গঙ্গায় শাহী স্নানের সময় হরিদদ্বার এবং ঋষিকেশে অতিরিক্ত জল সাপ্লাই করা হয়। সেই জল আসে তেহরি থেকে। ভারতকে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী করতে এই ড্যাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তেহরি ড্যামের জড়িয়ে আছে বহু বিতর্ক। এটি তৈরি করতে প্রায় এক লক্ষ মানুষকে অন্যত্র সরাতে হয়েছিল। যার কারণে এই প্রজেক্ট নিয়ে কোর্টে দীর্ঘদিন মামলা চলে। ক্ষতিগ্রস্ত ও সাধারণ মানুষকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত এবং অপরটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা এবং জমি দেওয়া হয়। সেই সময় তেহরি শহরের জন্য নতুন জমি পেয়েছিলেন প্রায় ৫২৯১ টি পরিবার। তবে পরিবেশবিদ এবং স্থানীয় মানুষদের আন্দোলনের পিছনে ছিল বেশ কয়েকটি কারণ। পরিবেশবিদরা মনে করছিলেন, সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া এই এত বিশাল পরিমাণ মানুষকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। আর এই ড্যামটি রয়েছে জিওলজিক্যাল ফল্ট লাইনে। যে কোনো মুহূর্তে তীব্র ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই ড্যাম যদি একবার ভেঙে যায় তাহলে ডুবে যাবে হরিদ্বার, ঋষিকেশের সহ প্রচুর শহর। বিপর্যস্ত হতে পারে কোটি কোটি মানুষের জীবন। তবে ভাগীরথীর উপরে তৈরি হওয়া এই ড্যাম এখন বহু মানুষের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। চাষের জল থেকে শুরু করে পানীয় জল, বিদ্যুৎ সহ বহু সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও পর্যটকদের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভ্রমণ স্থল। ডুবে যাওয়া পুরোনো তেহরি শহরকে দেখতে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে ভিড় করেন।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম