।। প্রথম কলকাতা ।।
Tarun Kumar: টলিউডের অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব তিনি। যদিও গ্ল্যামারকে সেই অর্থে কোনোদিনই আমল দেননি। ইন্ডাস্ট্রির ‘বুড়োদা’ নামে পরিচিত তিনি। তাঁর অভিনয় দক্ষতাকে কুর্ণিশ জানাতেন স্বয়ং মহানায়কও। ১৯৩১-এর ২৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্ম তরুণ কুমারের। নাটকে অভিনয় করতে করতে সুযোগ পেয়েছিলেন ফিল্মে। দাদার অভিনীত ছবিতে ভাইয়ের আত্মপ্রকাশ হয়।
বাবা সাতকড়ি চট্টোপাধ্যায় সাহেবি সিনেমা হল মেট্রোর অপারেটর ছিলেন। অন্যদিকে মা চপলা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিন ছেলে অরুণ, বরুণ, তরুণকে নিয়ে কলকাতার ভবানীপুরে গিরিশ মুখার্জী রোডের বাড়িতে ছিল তাঁদের সংসার। নাট্যকার তুলসী লাহিড়ীর ‘নতুন প্রভাত’ বলে একটি নাটকে খল চরিত্রে অভিনয় করে তাক লাগিয়েছিলেন তরুণ কুমার। সেই নাটকে তাঁর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়ে ফিল্ম ডিরেক্টর অর্ধেন্দু সেন ‘হ্রদ’ ছবিতে একটি চরিত্রের জন্য তাঁকে পছন্দ করেন। যেই ছবিতে আবার রয়েছেন দাদা উত্তম কুমার। যদিও তখনও তিনি “দ্য উত্তম কুমার” হয়ে ওঠেননি। তবে মহানায়কের জনপ্রিয়তা বা তাঁর কাজ কখনও তাঁর অভিনয় দক্ষতাকে ম্লান করে দিতে পারেনি।
অভিনয় করার শখ তাঁর ছোট থেকেই। পাড়ায় থিয়েটারে অভিনয় করেছেন প্রচুর। প্রথম নাটকের নাম ‘সাজাহান’। অভিনয়কে এতটাই ভালবাসতেন যে কলেজের পড়া শেষ না করে মন দেন শুধু সেদিকেই। চাকরিও করেছিলেন কিছুদিন, কিন্তু অভিনয়ের মতো তাকে এত ভালবাসতে পারেননি। তাই সমস্ত কিছু ছেড়ে পেশাদার অভিনেতা হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা পেতে থাকেন তরুণ কুমার। তিনি এতটাই ভালো অভিনেতা ছিলেন যে তাঁর কাজ নিয়ে সতর্ক থাকতেন দাদা উত্তম কুমার। তিনি সবসময় সতর্ক থাকতেন ভাইয়ের অভিনয় নিয়ে। বলতে গেলে একপ্রকার ভয় পেতেন তাঁর প্রতিভাকে। ‘দাদাঠাকুর’ ছবিতে অভিনয় করে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন এই অভিনেতা। এছাড়া ‘দেয়া-নেয়া’, ‘কমললতা’, ‘পিতা-পুত্র’ , ‘মিস প্রিয়ংবদা’, ‘শেষ অঙ্ক’, ‘সপ্তপদী’র মত একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
এক কথায় ইন্ডাস্ট্রিতে নিজের গুনে জায়গা পেয়েছিলেন তিনি। দাদার কথায়, তিনি কখনোই বুঝতে পারেননি যে তিনি কতটা প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। তাঁর ক্ষমতা কতটা বা তিনি কী করতে পারেন, সেই সম্পর্কে তাঁর কোনও জ্ঞান ছিল না। সামনে তিনি হইচই করলেও ভেতরে প্রচন্ড সিরিয়াস গোছের মানুষ ছিলেন। বেশ কিছু ছবিতে ছোট চরিত্রে তিনি অভিনয় করলেও, নিজের প্রতিভা সকলকে বুঝিয়েছেন। বিয়ে করেছেন অভিনেত্রী সুব্রতা সেনকে। পর্দার পাশাপাশি নাটকের মঞ্চের রাজা ছিলেন উত্তম-ভ্রাতা। ‘ক্ষুদা’, ‘সেতু’, ‘আসামী হাজির’, ‘নহবত’-এর মতো একাধিক নাটকে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে। দাদার নামে গড়েছেন ‘উত্তম মঞ্চ’। তাঁর কথা বাঙালি কোনদিনও ভুলবে না। ২০০৩-এর ২৭ অক্টোবর না ফেরার দেশে পাড়ি দেন এই প্রতিভাবান শিল্পী।
খবরে থাকুন, ফলো করুন আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ায়
সব খবর সবার আগে, আমরা খবরে প্রথম